প্রকাশিত: ২০১৬-১১-১৩ ১৩:৫০:০৪
আপডেট: ২০১৬-১১-১৩ ১৩:৫৬:৪৪
তপু সৌমেন:
খুব মনে আছে যখন ক্লাস নাইনে পড়ি, প্রথম প্রেমে পড়লাম। খুব সিরিয়াস প্রেম। না খেয়ে না দেয়ে, খেলাধুলা বন্ধ করে দিয়ে বন্ধুদের সাথে সময় না কাটিয়ে চুটিয়ে প্রেম করতে থাকলাম। সে কি মোহ, সে কি প্রেম, কি যে ভালো লাগার অনুভূতি, শিহরিত হতেও শিখে গেলাম। স্বপ্ন দেখতে শিখলাম সেই প্রথম। আগেও হয়ত দেখতাম। গাড়ি চালাবো, স্পাইডারম্যান হবো, আরো কত মজার স্বপ্ন। কিন্তু সেই প্রথম প্রেমে পড়ার পর শুরু হলো সত্যিকারের স্বপ্ন দেখা। প্রকৃতিকে নতুনভাবে বুঝতে শিখলাম, নানান রঙের পার্থক্য ধরতে পারছিলাম, কষ্ট বা সুখ কেমন হয় ধারনা পাচ্ছিলাম। কিভাবে অবাক হতে হয় বা করতে হয় তারও একটা ধারনা রপ্ত করতে পারলাম। সত্যিকারের প্রেমে পড়লে যা হয় আর কি?
হুম, আমি আমার সত্যিকারের প্রেমের কথাই বলছিলাম, একজন মানুষ যার লেখা পড়ে জীবন কি জিনিস বুঝতে শিখলাম, ভালোবাসা চিনলাম, রহস্যময়তা আবিষ্কার করলাম, বৃষ্টিতে ভেজাও যে একটা বিষয় তাও জানলাম। পাগলামি করতে জানলাম। লেখার জাদু যে কি সেই প্রথম টের পেলাম।
স্যার হুমায়ূন আহমেদ আজ আর নেই কিন্তু রেখে গেছেন অনেকগুলো পাগল হিমু, রুপা, মাজেদা খালা, শুভ্র, রুমালী আর মিসির আলিকে। খেয়াল করে দেখলাম এই চরিত্রগুলো আমাদেরই এক একটা স্বত্বা। প্রায় প্রত্যেকটা চরিত্রই কোন না কোনভাবে আমাদের মাঝে ভর করে খুবই অল্প সময়ের জন্য হলেও। হুমায়ূন স্যারের লেখাই ছিল আমার প্রথম প্রেম। আমি জানি আমার মত প্রায় প্রত্যেকটা ছেলে মেয়েই তখন তাঁর প্রেমে পড়েছিল তাঁর লেখাপড়ার পর। লুকিয়ে কেউ কেউ হয়ত হলুদ পাঞ্জাবীও বানিয়ে ফেলেছিল। আর নীল রঙের তো মনে হয় জন্মই হল তখন থেকে। একবারের জন্য হলেও বৃষ্টিতে ভিজে চা খাবার লোভটা কেউ না কেউ অন্তত সামলাতে পারেনি।
সে সময় আমাদের একটা ঐতিহ্য চালু হলো ঘটা করে জন্মদিন পালন করার। জন্মদিন পালন করার উদ্দেশ্য ছিল উপহার, আর উপহার হিসেবে অবশ্যই থাকতে হবে হুমায়ূন আহমেদ'র বই। এমন করে আমরা অনেকগুলো বই জমিয়েছিলাম। আমার মনে আছে আমি অনেকটা পথ হেঁটে চলে গেছি এক বন্ধুর বাসায় একটা নতুন বই আছে শুনে।
একবার খুব ইচ্ছে হলো হলুদ রঙের পাঞ্জাবী বানাবো তারপর খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটবো। কিন্তু সাহসে কুলায় নাই তাই করাও হয়ে উঠেনি। আমার এক বন্ধু চেষ্টা করেছিল, সাহস আর পাঞ্জাবী দুটোই নিয়ে হেঁটেও ছিল কিন্তু ফলাফল হলো পুলিশের জেরার মুখে পরতে হয়েছিল।
একবার প্রাইভেট পড়ার টাকা দিয়ে বই কিনে ফেললাম কোন কিছু চিন্তা না করে। কিন্তু যখন স্যারকে টাকা দেবার সময় হলো তখন পড়লাম বিপদে। সেই সময় রুপার মতই আমার এক বন্ধু আমাকে টাকা দিয়ে বাঁচিয়েছিল। আজও তার সেই টাকা শোধ দেয়া হয়নি। এবার দিয়ে দিবো বন্ধু আবার দেখা হলে।
এমন হাজারটা লাইন লেখা যাবে স্যারকে নিয়ে পাতার পর পাতা স্মৃতি জমা হয়ে আছে। লিখে শেষ করা যাবেনা। ভালোবাসি আপনাকে স্যার, হয়ত দেখে গেছেন হয়ত দেখছেন কত মানুষ আপনাকে আজও বুকের কতটা গভীরে রেখেছে যে প্রতিনিয়ত মনে করছে।
শেষ করছি স্যারের কিছু লেখা দিয়ে:
আজকের এই দিনে আমার প্রিয় লেখক হুমায়ূন স্যারের জন্য।
স্যার অনেক অনেক শুভ জন্মদিন, ভালো থাকবেন যেখানেই থাকুন।
আপনার মন্তব্য