দ্য গ্রেটকোট-১

নিকোলাই ভাসিলিয়েভিচ গোগোল রবার্ট শ্যান্ডলারের ইংরেজি অনুবাদ থেকে কাজী মাহবুব হাসান

 প্রকাশিত: ২০১৭-০১-১৭ ০১:৩৬:০১

কাজী মাহবুব হাসান:

ভূমিকা
নিকোলাই ভাসিলিয়েভিচ গোগোল (১৮০৯-১৮৫২) এর জন্ম ইউক্রেনের পলটাভায়। উনিশ বছর বয়সে তিনি সেইন্ট পিটার্সবুর্গে এসেছিলেন। সেখানে তিনি সরকারী চাকরী করেছিলেন, সর্বনিম্ন পদবী থেকে অষ্টম ধাপ অবধি অগ্রসর হয়েছিলেন তার পেশাগত জীবনে। এরপর তিনি স্কুলে শিক্ষকতা করার চেষ্টা করেন, এমনকি ইতিহাস পড়াবার একটি অসফল প্রচেষ্টাও করেন সেইন্ট পিটার্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৮৩৭ থেকে ১৮৩৯, তিনি ছিলেন রোমে, এরপর তাঁর বাকী জীবন তিনি মূলত কাটিয়েছেন রাশিয়া আর পশ্চিম ইউরোপসহ নানা দেশ ভ্রমণ করে। ইউক্রেনের গ্রামীণ জীবন নিয়ে লেখা বর্ণিল আর কল্পনাশ্রয়ী গল্পগুলোই প্রথম তাকে খ্যাতি দিয়েছিল, যা দুটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল : Evenings on a Farm near Dikanka এবং Mirgorod. এরপরে তিনি প্রকাশ করেছিলেন তার পিটার্সবুর্গের গল্পগুলো, যেখানে বাস্তবতা আর কল্পনার অসাধারণ এক মিশ্রণ ছিল। পুশকিন খুব দ্রুত তার প্রতিভাকে শনাক্ত করেছিলেন, আর গোগোলও পুশকিনের ঋণ স্বীকার করেছেন, যিনি তাকে তার বিখ্যাত প্রহসন নাটক দ্য গভর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর, এছাড়া তার বিখ্যাত উপন্যাস, ডেড সোলস এর প্রাথমিক ধারণাটি দিয়েছিলেন।

ডেড সোলস ( দ্য গ্রেটকোট এর মত প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৪২ সালে) মূলত একটি রুশ ডিভাইন কমেডির প্রথম পর্ব হিসাবে তিনি লিখেছিলেন, কিন্তু তিনি পরের অধ্যায়গুলো - পারগাটারিও, কিংবা প্যারাডিসো, কোনো পর্বই ঠিক মত ভাবতে পারেননি, বিষয়টি তাকে আজীবন বিষণ্ণতায় ভুগিয়েছিল। ১৮৪৭ সালে তিনি প্রকাশ করেছিলেন Selected Passages from Correspondence with Friends, অত্যন্ত ক্লান্তিকর নৈতিক উপদেশ সংগ্রহ যা তাকে বিচ্ছিন্ন করেছিল উদারনীতিবাদীদের কাছ থেকে, একই সাথে এমনকি বহু রক্ষণশীলদের কাছ থেকেও, এবং বিখ্যাতভাবে প্রভাবশালী বৈপ্লবিক চিন্তাধারার লেখক ও তার সমালোচক ভিসারিওয়াস বেলিনিস্কি থেকেও। হতাশাগ্রস্ত গোগোল তীর্থযাত্রায় যান হলিল্যাণ্ডে (বর্তমান ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইন) কিন্তু তার হতাশাবোধ আরো তীব্রতর হয়ে উঠেছিল। সত্যিকারের নৈতিক আধেয় না থাকার কারণে তিনি ডেড সোলস প্রায় পুরো দ্বিতীয় খণ্ডটি পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। এর দশ দিন পর ১৮৫২ সালের মার্চে তিনি মারা যান। খুব সম্ভবত অভুক্ত থাকার কারণে। লেন্ট শুরু হবার পর থেকে তিনি কোনো খাদ্য গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

দ্য গ্রেটকোট (১) গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৪২ সালে (মূল রুশ নাম - Шинель বা শিনেল, গ্রেটকোট ছাড়াও নামটিকে কখনো অনুবাদ করা হয়েছে ওভারকোট, বা ক্লোক হিসাবে)। গোগলের সেন্ট পিটার্সবুর্গ গল্পগুলোর শেষ এবং সবচেয়ে বিখ্যাত এই গল্পটির নায়কের অদ্ভুত একটি নাম ছিল, আকাকি আকাকিয়েভিচ। নামটি সম্ভব এসেছে kaka (শিশুতোষ একটি শব্দ যার অর্থ মল) এবং akakos থেকে, গ্রিক যে শব্দটির অর্থ নিরপরাধ। রুশ অর্থোডক্স ধর্মীয় ইতিহাসে সাধু Acacius নাম সহ আছেন বেশ কয়েকজন যদিও, যেমন একজন সাধু ( এবং দর্জি) মারা যাবার আগে যাকে দীর্ঘদিন অত্যাচারিত হতে হয়েছিল ঊর্ধ্বতন এক ব্যক্তির কাছে, যিনি পরে অনুশোচনা করেছিলেন। পুশকিনের The Queen of Spades এর মত এই গল্পটি বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যার জন্ম দিয়েছে।

কিছু সমালোচক এটিকে পড়েছিলেন, দমনমূলক ও শোষক আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে অসহায় ক্ষুদ্র মানুষদের প্রতিরক্ষায় লেখা একটি প্রতিবাদ হিসাবে । অন্যরা এটিকে দেখেছেন রূপক হিসাবে যেখানে যৌনতা আর বস্তুবাদী প্রলোভনের ইঙ্গিত আছে, গ্রেটকোট এখানে অশুভ শয়তানের টোপ। কিন্তু তারপরও অন্যরা দ্য গ্রেটকোটকে দেখেছেন জীবনের অর্থের অনুসন্ধানে মানবতার সংগ্রামের একটি মৌলিক কাঠামো হিসাবে, সমালোচক ক্যাথি পপকিন যেমন বলেছিলেন, আমাদের নিজেদের সেই সংগ্রাম, গুরুত্বপূর্ণ আর অর্থবহ কোনো কিছুর জন্য, যা খুব নিবিড়ভাবে অভিনীত হয়েছে আকাকি আকাকিয়েভিচের কোটের জন্য তার দুর্ভাগ্যজনক অভিযানে। তার অনুসন্ধান আর সেই সূত্রটি হারানো, অর্থ এবং বেঁচে থাকার কারণে আমরা আমাদের নিজেদের অর্থহীন প্রচেষ্টা দেখতে পাই উদ্দেশ্য,গুরুত্বপূর্ণ আর মূলসারের সন্ধানে। আকাকি অন্তর্মুখী আর নিরাশ একজন ব্যক্তি তবে কর্মী সত্তা, কোনো সামাজিক বা বস্তুগত সফলতার প্রত্যাশা তার ছিলনা, কিন্তু তার গ্রেটকোটটি তাকে দিয়েছিল আত্মমর্যাদা, সেই সাথে বাড়িয়ে দিয়েছিল তার প্রত্যাশাটাও। সুতরাং আমলাতন্ত্রের একটি যন্ত্র হবার বদলে এটি তাকে মানুষ হবার সুযোগ দিয়েছিল। তার বস্তুবাদী কামনা তাকে মানবতাও দান করেছিল। রুশ সাহিত্যে গোগোলের প্রভাব খুব বিশাল, We have all come out of Gogol's Greatcoat বা আমরা সবাই গোগোলের ওভারকোট থেকে এসেছি এই মন্তব্যটি অসংখ্যবার উল্লেখ করা হয়েছে, ধারণা করা হয় মন্তব্যটি দস্তয়েভস্কির, কখনো বা তুর্গেনিভ, লেসকভ, বুলগাকভ, জোশচেনকো এবং প্লেটোনোভ, তারা প্রত্যেকেই গোগোলের উদাহরণ অনুসরণ করেছিলেন কৌতুকময়তা আর দার্শনিকতার উপযোগী মিশ্রণের মাধ্যমে মানব চিত্র অংকনে। এই বাংলা অনুবাদটি রবার্ট শ্যাণ্ডলারের ইংরেজি অনুবাদ অনুসরণ করে করা হয়েছে – কাজী মাহবুব হাসান।

… বিভাগে, কিন্তু বিভাগটির নাম উল্লেখ না করাই উত্তম হবে। এইসব বিভাগ, রেজিমেন্ট আর সরকারী দপ্তরগুলো - এক কথায় এইসব সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মত এত স্পর্শকাতর, বদমেজাজি আর কিছু নেই –ইদানীং আপনি যদি কোনো এক ব্যক্তি সম্বন্ধে কিছু বলেন, তিনি এমনভাবে আচরণ করতে থাকেন, যেন পুরো সমাজটাকেই অপমানিত করা হয়েছে। খুব বেশী দিন আগে নয়, আমি শুনেছিলাম, এক পুলিশ অধিনায়কের কাছ থেকে একটি আর্জি এসেছিল, আমি মনে করতে পারছিনা ঠিক কোন শহর থেকে, সেখানে তিনি খুবই স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছিলেন যে, সরকারী ডিক্রিগুলো সব ধ্বংস করবে এবং তার নিজের পবিত্র নামটি নেয়া হয়েছে সন্দেহাতীতভাবে বিনা কারণে। এর সমর্থনে, তিনি তার আর্জির সাথে যুক্ত করেছিলেন অস্বাভাবিক রকম বিশাল একটি রোমান্টিক সাহিত্যকর্মের বই, যেখানে প্রতি দশ পাতা অন্তর একজন পুলিশ ক্যাপ্টেন আবির্ভূত হয়েছেন, কখনো পুরোপুরি মাতাল অবস্থায়। আর সেকারণে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে, সবচেয়ে ভালো হবে, যদি আমরা এই আলোচ্য এই বিভাগটিকে শুধুমাত্র একটি ‘নির্দিষ্ট বিভাগ’ বলেই উল্লেখ করি।

আর সেই, একটি ‘নির্দিষ্ট বিভাগে’ একজন ‘নির্দিষ্ট কেরানি’ কাজ করতেন – একজন কেরানি, যাকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এমন কেউ হিসাবে চিহ্নিত করা যাবে না: উচ্চতায় খানিকটা খাটো, মুখে কিছু গুটি বসন্তের দাগ, খানিকটা লালচে চুল, এবং এমনকি স্পষ্টতই হ্রস্ব দৃষ্টি সম্পন্ন, মাথার সামনে যার ছোট একটি টাক পড়ছে, দুই পাশের গালে বলি রেখার দাগ, পুরো চেহারাটি খানিকটা, যাকে বলা যেতে পারে অর্শরোগীর মত ... এর জন্য আসলে কিছুই করার নেই: পিটার্সবুর্গের (২) জলবায়ুই এর জন্য দায়ী। আর তার পদমর্যাদার ক্ষেত্রে (কারণ রাশিয়ায় একজন মানুষের পদমর্যাদাই হচ্ছে প্রথম বিষয় যা অবশ্যই ঘোষণা করতে হবে), তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি, যাকে লোকজন একজন চিরন্তন টিটুলার কাউন্সিলর (৩) বলে থাকেন; এই পদটি, যেমন সবারই জানা আছে, বহু লেখকদের ব্যঙ্গ আর বিদ্রূপের নিশানা, যাদের সেই প্রশংসাযোগ্য স্বভাব আছে সেই সব মানুষের আক্রমণ করা, যারা কিনা পাল্টা আক্রমণ করতে পারেননা।

এই কেরানির বংশনাম ছিল বাশমাচকিন। তাৎক্ষনিকভাবে স্পষ্ট যে, এই বংশনামটি এসেছে কোনো না কোনো একসময় ‘বাশমাক’ অথবা ‘জুতা’ শব্দটি থেকে। কিন্তু কখন, কোন সময়ে আর কিভাবে এটি বাশমাক শব্দ থেকে এসেছে- তার কিছুই জানা নেই। তার বাবা,তার দাদা, এমনকি তার ভগ্নীপতি – অবশ্যই প্রতিটি বাশমাচকিন – বুট জুতো পরে হাঁটতেন, বছরে দুই তিনবার তারা সেই জুতার তলি পরিবর্তন করতেন। তার প্রথম নাম ও পিতার নামানুযায়ী নাম ছিল আকাকি আকাকিয়েভিচ।

বিষয়টি বিস্ময়কর আর অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু পাঠককে আশ্বস্ত করা যেতে পারে যে নামটি কোথা থেকে সংগ্রহ করে আনা হয়নি এবং পরিস্থিতিগুলো নিজে থেকেই এমনভাবে ঘটেছিল যে, তার ক্ষেত্রে অন্য নাম দেয়ার বিষয়টিকে পুরোপুরি অসম্ভব করে তুলেছিল - আর কিভাবে এই নাম দেবার ঘটনাটি ঘটেছিল তার নিখুঁত বিবরণ হচ্ছে এটি। আকাকি আকাকিয়েভিচ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যদি স্মরণশক্তি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা না করে, ২৩ মার্চ রাতে। তার পরলোকগত মা, তিনি ছিলেন একজন কেরানির স্ত্রী ও খুব ভালো একজন মহিলা ছিলেন, এবং তিনি চেয়েছিলেন, যেমনটি যথাযথ, শিশুটিকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার জন্য নামকরণ করতে। তিনি তখনও শয্যাশায়ী, দরজার বিপরিতে রাখা বিছানায়, তার ডান দিকে দাড়িয়ে, শিশুটির ধর্মপিতা, খুবই চমৎকার একজন মানুষ, ইভান ইভানোভিচ ইয়েরোশকিন(৪), যিনি সিনেটের (৫) প্রধান কেরানি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, ধর্মমাতা আরিনা সেমেইয়োনভনা বেলোব্রুশকোভাকে (৬) সাথে নিয়ে, এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী, এবং সদগুণ সম্পন্ন দুর্লভ একজন মহিলা।

নতুন মাকে তিনটি নাম দেয়া হয়েছিল, যার কোনো একটিকে তিনি যদি বেছে নিতে চান: মক্কিয়া, সোস্সিয়া, অথবা তিনি তার শিশুকে শহীদ খোজদাজাত (৭) এর নামেও নামকরণ করতে পারেন। ‘না’, তার পরলোকগত মা ভেবেছিলেন, ‘এই নামগুলোর কোনোটাই ঠিক না’। সুতরাং তাকে সন্তুষ্ট করতে তারা ক্যালেন্ডারের ভিন্ন একটি পাতা খুলেছিলেন, সেখানে পাওয়া যায় আরো তিনটি নাম, ত্রিফিলি, দুলা আর ভারাখাসি। ‘আমরা এমন কি দোষ করেছি যে, এইসব নামই কেবল খুঁজে পাচ্ছি’ – ভালো মহিলাটি বললেন, ‘কি যে সব নামগুলো, সত্যি, আমি কোনোদিনও এমন নাম শুনিনি, ভারাদাত বা ভারুখ হলে এক কথা কিন্তু ত্রিফিলি বা ভারাখাসি’। সুতরাং তারা আরো আরেকটি পাতা উল্টায়, এবার নাম আসে পাভসিকাখি আর ভাখতিসি। ‘বেশ’ – ভালো মহিলাটি বলেছিলেন – ‘স্পষ্টত বিষয়টি দেখতে হবে তার নিয়তি হিসাবে। আর যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে তাকে তার বাবার নামে নামকরণ করা হোক। তার বাবা ছিলেন আকাকি, সুতরাং ছেলেও হোক আকাকি’। আর এভাবেই তার আকাকি আকাকিয়েভিচ নামটি এসেছিল। শিশুটিকে নিয়মমতো খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করা হয়। অনুষ্ঠানটির সময় শিশুটি বেশ কেঁদেছিল এবং এমন মুখ ভঙ্গি করেছিল যেন সে বুঝতে পেরেছিল , একদিন সে একজন টিটুলার কাউন্সিলর হবে। হ্যাঁ, এভাবেই ব্যাপারটি ঘটেছিল। বিষয়টি ব্যাখ্যা করলাম যেন পাঠকরা নিজেরাই বুঝতে সক্ষম হন যে, এটি ঘটেছিল পুরোপুরিভাবে প্রয়োজনীয়তার খাতিরে এবং আসলেই তাকে অন্য কোনো নাম দেয়া অসম্ভব ছিল।

কবে ও কখন তিনি সেই বিভাগে যোগদান করেছিলেন, এবং কেই বা তাকে নিয়োগ দিয়েছিল, এই বিষয়গুলো হচ্ছে এমন কিছু, যা কেউই মনে করতে পারবেন না। তবে বহু পরিচালক ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এসেছেন আর গেছেন, কিন্তু তাকে সবসময়েই সেই একই জায়গায় দেখা গিয়েছে, সেই একই পদে, একই কাজ করতে, সেই একই অনুলিপিকারী কেরানি হিসাবে; অবশেষে অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, ইউনিফর্ম পরনে ও মাথার সামনে ক্রমশ বাড়তে থাকা টাকসহ তিনি এই কাজ করার জন্য নিশ্চয়ই প্রস্তুত হয়েই পৃথিবীতে এসেছিলেন।

এই বিভাগে কোনো ধরনের শ্রদ্ধা তার প্রতি কখনো প্রদর্শিত হয়নি। যখন তিনি সামনে দিয়ে যেতেন বিভাগের পিয়নরা শুধুমাত্র বসেই থাকতো না, এমনকি তারা তার দিকে তাকিয়ে দেখার প্রয়োজনও বোধ করতো না, যেন তিনি অভ্যর্থনা কক্ষের মধ্য দিয়ে উড়ে যাওয়া তুচ্ছ একটি মাছি মাত্র। এক ধরনের শীতল নিষ্ঠুরতার সাথে পরিচালকরা তার সাথে আচরণ করতেন । কিছু সহকারী প্রধান কেরানি তার নাকের সামনে একগাদা কাগজ ঠেলে দিয়ে, ‘এগুলো অনুলিপি করুন’ বা ‘আপনার জন্য একটা বেশ ভালো মজার কাজ’ বা অন্য কোনো প্রীতিকর মন্তব্য উচ্চারণ করার ন্যুনতম প্রয়োজনও বোধ করতেন না, সাধারণত ভদ্র দপ্তরগুলোয় যেমনটা নিয়ম। আর কোনো কিছুর দিকে না তাকিয়ে, কে সেখানে সেটি রেখেছে সেটি লক্ষ্য না করেই বা তাদের আদৌ সেই কাজটি করার অধিকার আছে কিনা সেটি না ভেবে, তিনি তাৎক্ষনিকভাবে কাগজগুলো নিয়ে সেগুলো অনুলিপি করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন।

তরুণ কেরানিরা তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতেন, যতদূর তাদের অফিসে এ ধরনের তামাশা করার অধিকারকে টেনে লম্বা করা যায়। সেখানে, তার সামনেই, তারা তাকে ও তার সত্তর বছর বয়সী বৃদ্ধা বাড়িওয়ালীকে নিয়ে নানা ধরনের মুখরোচক গল্প বানিয়ে বলতেন, যেমন, তারা বলতেন তার বাড়িওয়ালী নাকি তাকে নিয়মিত মারধোর করেন, কবে তাদের বিয়ে হবে সেটি জিজ্ঞাসা করে, আর তার মাথায় কাগজের টুকরো ছড়িয়ে দিয়ে তারা বলতেন এখন বরফ পড়ছে। কিন্তু এর প্রত্যুত্তরে কোনো শব্দই আসতো না আকাকি আকাকিয়েভিচের কাছ থেকে, যিনি তার কাজ করে যেতেন যেন সেখানে অন্য কেউই উপস্থিত নেই। এমনকি এসব তার কাজেও কোনো প্রভাব ফেলতো না: কখনোই সহকর্মীদের এইসব বাড়াবাড়ি আচরণ তার অনুলিপি কাজে একটি ভুলেরও কারণ হয়নি । শুধুমাত্র যখন এই তামাশা খুব বেশী অসহ্য মনে হতো তার, যখন তারা তার কনুই ধরে টানাটানি করে তাকে তার কাজ করতে বাধা দিতো, তিনি শুধু বলতেন, ‘আমাকে আমার মত থাকতে দিচ্ছেন না কেন, কেন আমাকে অত্যাচার করছেন’? তার উচ্চারিত এই শব্দগুলো আর যে কণ্ঠস্বর সেগুলো উচ্চারণ করেছে, তার মধ্যে অদ্ভুত কিছু ছিল। সেই কণ্ঠস্বরে এত তীব্র করুণার স্মৃতি জাগানিয়া কিছু ছিল যে এক তরুণ সহকর্মী, যিনি সম্প্রতি সেই বিভাগে যোগদান করেছিলেন, এবং অন্যদের উদাহরণ অনুসরণ করে, প্রায় সেই পর্যায় অবধি উপস্থিত হয়েছিলেন যে নিজেকে অনুমতি দিয়েছিলেন আকাকি আকাকিয়েভিচকে নিয়ে ঠাট্টা করার জন্য, হঠাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে যান, যেন অসাড় হয়ে গেছেন এবং সেই মুহূর্ত থেকে সবকিছুই তার সামনে নতুন করে আবির্ভূত হয়, ভিন্ন আলোকে। যেন অদ্ভুত কোনো শক্তি তার সহকর্মীদের কাছ থেকে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় বহুদূরে, যাদের তিনি প্রথম দেখায় মনে করেছিলেন ভদ্র আর শিক্ষিত মানুষ। বহু দিন পরে, এমনকি তার আনন্দের চরমতম মুহূর্তেও তার সামনে এক খর্বকায়, মাথায় টাক পড়া একজন কেরানির চেহারা ভেসে উঠতো, যে তার মর্মস্পর্শী শব্দগুলো উচ্চারণ করছে, ‘আমাকে আমার মত থাকতে দেন, কেন আপনারা আমার উপর অত্যাচার করছেন বলুনতো’? আর এই মর্মভেদী শব্দগুলো আসলে অন্য শব্দগুলোর প্রতিধ্বনি: ‘আমি আপনাদেরই ভাই’। আর সেই অসহায় তরুণটি দুই হাত দিয়ে তার নিজের মুখ ঢাকতেন, তার জীবনে বহুবারই তিনি কেঁপে উঠেছেন মানুষের মধ্যে কি পরিমাণ অমানবিকতা আছে সেটি দেখে, কি পরিমাণ বন্য হিংস্র স্থূলতা লুকিয়ে থাকতে পারে পরিশীলিত সংস্কৃতিবানদের আচরণের পেছনে – হায় ঈশ্বর – এমনকি সেই সব মানুষগুলোর মধ্যেও, যাদের সমাজ মহান আর সম্মানিত বলে বিবেচনা করে।

আকাকি আকাকিয়েভিচের মত এমন কাউকে খুঁজে বের করা আসলেই কঠিন হবে, যিনি তার কাজে এত গভীরভাবে মগ্ন হয়ে বেঁচে ছিলেন। তীব্র উৎসাহ আর আগ্রহের সাথে তিনি কাজ করতেন বললে আসলে যথেষ্ট হবে না। না, তিনি ভালোবাসার সাথে তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অনুলিপি করার কাজটির মধ্যে তিনি চমৎকার আর বিচিত্র একটি জগত খুঁজে পেয়েছিলেন। তার চেহারাতেই স্পষ্ট দেখা যেতো সেই আনন্দ; বর্ণমালার কিছু বর্ণ ছিল তার বিশেষভাবে প্রিয়, আর যখনই লেখার সময় সেই বর্ণটি আসতো, তিনিও বদলে যেতেন : তিনি হাসতেন, বারবার পলক ফেলতেন, আর তার ঠোটগুলো দেখতে মনে হতো সেগুলো তার সেই বর্ণটি লেখার প্রক্রিয়ায় সাহায্য করছে, মনে হতো কেউ চাইলেই তার চেহারায় সেই বর্ণটি পড়তেও পারবেন, যা তিনি সেই মুহূর্তে তার কলম দিয়ে অনুলিপি করছেন। এই বিশেষ উদ্দীপনার যোগ্য কোনো পুরষ্কার যদি তাকে দেয়া যেত, তাকে হয়তো, অবশ্যই তার নিজের বিস্ময়সহ, এমনকি স্টেট কাউন্সিলর (৮) পদে পদোন্নতি করা সম্ভব হতো, কিন্তু তার এই পরিশ্রমের জন্য তিনি যা পেয়েছিলেন, তার এক চালাক সহকর্মীর ভাষায়, বোতামের ফুটোয় লাগানোর জন্য একটি স্মারক চিহ্ন আর পেছনের জন্য অর্শরোগ। তারপরও, এমন কিছু বলা ভুল হবে, আদৌ তাকে লক্ষ্য করা হয়নি। একজন পরিচালক, দয়ালু হবার সুবাদে তার দীর্ঘ কর্মজীবনের জন্য তাকে পুরস্কৃত করতে চেয়ে সাধারণ অনুলিপি কাজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাস্তবিকভাবে, তাকে বলা হয়েছিল, ইতিমধ্যে প্রস্তুত একটি নথিকে অন্য আরেকটি সরকারী দপ্তর বরাবর পুনর্লিখন করার জন্য। তাকে যা করতে হতো তাহলো: শুধুমাত্র একটি নতুন শিরোনাম দেয়া, এখানে সেখানে কিছু ক্রিয়াপদ আর প্রথম থেকে তৃতীয় পুরুষে কিছু পরিবর্তন। কিন্তু তার জন্যে কাজটি এত বেশী সংগ্রামের ছিল যে তিনি গলদঘর্ম হয়েছিলেন, তার ভ্রু ঘষতে ঘষতে অবশেষে বলেছিলেন, ‘না, ভালো হয় যদি আপনি আমাকে কিছু কাগজ অনুলিপি করার কাজ খুঁজে দিতে পারেন’। এরপর থেকে তার বাকী কর্মজীবনে অনুলিপি করার কাজ ছাড়া আর কিছুই তাকে দেয়া হয়নি। অনুলিপি করার এই কাজের বাইরে, তার কাছে আর কোনো কিছুরই আসলে অস্তিত্ব ছিল না ।

তার নিজের কাপড়ের দিকে তিনি কখনোই নজর দেননি। তার ইউনিফর্মটি আর সবুজ রঙের ছিল না, বরং সেটি রূপান্তরিত হয়েছিল লালচে-বাদামী-সাদা রঙে। আর কলারটি এত বেশী সরু আর খাটো ছিল যে, তার ঘাড়, বাস্তবে যা খুব ছোট, দেখে মনে হতো অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘ, ঘাড় নাড়ানো প্লাস্টার অব প্যারিস দিয়ে বানানো বিড়ালছানাগুলোর মত, মাথার উপর ঝুড়ি ভর্তি করে পিটার্সবুর্গের রাস্তায় বিদেশীরা যা ফেরী করতো, এছাড়াও সবসময়ই কিছু না কিছু তার ইউনিফর্মের লেগে থাকতো, কোনো খড়ের টুকরো বা সুতার একটি অংশ। উপরন্তু তার একটি বিশেষ অভ্যাস ছিল, যখন তিনি রাস্তা দিয়ে হেটে যেতেন, সেই সব জানালা নীচ দিয়ে যাওয়ার জন্য, ঠিক যে মুহূর্তে নানা ধরনের আবর্জনা সেখান থেকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে, আর সে কারণেই সবসময়ই কুমড়া বা তরমুজের খোসার টুকরো বা অন্য কোনো আবর্জনার অংশ তাকে তার টুপির উপরে বহন করতে দেখা যেত । একবারের জন্যেও তার জীবনে তিনি রাস্তায় তার চারপাশে দৈনন্দিন কি ঘটছে সে দিকে নজর দেননি, সেই সব নানা ঘটনা, যা আমরা জানি, কখনোই তার অন্য কেরানি সহকর্মী ভাইদের মনোযোগ এড়াতো না। তরুণরা তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিকে এত তীক্ষ্মতর করে তুলেছিল যে, এমনকি তারা রাস্তার অপর পাশে কারো প্যান্টের গোড়ালি বন্ধনী ঠিক আছে কিনা তারা তা দেখতে পারতো – যে দৃষ্টি তাদের মুখে ধূর্ত হাসি আনতে কখনোই ব্যর্থ হয়নি।

কিন্তু আকাকি আকাকিয়েভিচ যদি কখনো কোনো কিছুর দিকে তাকিয়ে থেকে থাকেন, তিনি সবজায়গায় শুধু যা দেখতেন, তাহলো তার পরিষ্কার, সমানভাবে লেখা অক্ষরের লাইনগুলো, এবং শুধুমাত্র হঠাৎ যদি কোনো ঘোড়ার মুখ - আর ঈশ্বরই জানেন কোথা থেকে - আবির্ভূত হয়, এবং সেটি তার কাঁধের উপর মুখ রেখে তার নাকের ছিদ্র দিয়ে আকাকি আকাকিয়েভিচের মুখ বরাবর আস্ত একটি ঝড় বইয়ে দেয়, শুধুমাত্র তখনই তিনি অনুধাবন করতে পারবেন , তিনি কোনো পঙক্তি অনুলিপি করার কাজের মধ্যে নেই, বরং ঠিক রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে আছেন।

ঘরে ফেরা মাত্রই তাৎক্ষণিকভাবে তিনি টেবিলে বসে চামচ দিয়ে বাঁধাকপির সুপ আর পেয়াজ দিয়ে এক টুকরো সিদ্ধ গুরুর মাংস দ্রুত গিলে ফেলতেন, কখনোই তাদের স্বাদ কেমন সেটি খেয়াল না করেই। তিনি আস্তই সব কিছু গিলে ফেলতেন এমনকি মাছিসহ, বা ঈশ্বর যা কিছু পাঠান সেই সময় তার খাবারের সাথে। পেট ফুলতে শুরু করছে সেটি লক্ষ্য করলে তিনি টেবিল থেকে উঠে দাঁড়াতেন, কালির একটি বোতল নিয়ে, কাগজ অনুলিপি করতে বসে যেতেন, যা তিনি দপ্তর থেকে তার সঙ্গে বাড়ি নিয়ে আসতেন। ঘটনাচক্রে যদি অনুলিপি করার মত কোনো কাগজ তার কাছে না থাকতো, তারপরও তিনি কিছু না কিছু অনুলিপি করতেন, শুধুমাত্র নিজের জন্যে, তার নিজের আনন্দের জন্য, বিশেষ করে যদি কাগজটি তার সৌন্দর্য বা শৈলীতে আকর্ষণীয় না হয়ে বরং সেটি নতুন অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তির প্রতি নির্দেশিত হয়ে থাকে।

এমনকি সেই সময় অবধি তিনি কাজ করতেন, যখন পিটার্সবুর্গের ধূসর আকাশ পুরোপুরি ম্লান হয়ে যেত, সব কেরানিরা, প্রত্যেকেই তাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, যে পরিমাণ বেতন তারা পান আর ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপর নির্ভর করে তাদের উদরপূর্তি করে খাওয়া শেষ করতেন। তারপর যখন সবাই তাদের দাপ্তরিক কলম ঘষার কাজের পরে থমকে দাঁড়ান, সব তাড়াহুড়ো আর হট্টগোলের পরে, নিজের আর অন্যদের জন্যে করা সব প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ডের পরে, সেই সব কর্মকাণ্ড যা অক্লান্ত মানুষ স্বেচ্ছায় করার জন্যে দায়িত্ব নেয় নিজের উপর, যা তার করা দরকার তার চেয়েও বেশী, তখন দাপ্তরিক কর্মকর্তারা আনন্দ খোজার জন্য তাদের অবশিষ্ট সময়টি নিবেদন করতে তাড়াহুড়া করতে শুরু করেন ( কেউ হয়তো দ্রুত কোনো নাটক দেখতে দৌড়ে যান, অন্যজন হয়তো অদ্ভুত সব নানা ধরনের মাথার টুপির দিকে তাকানোর জন্য বের হন, কেউ হয়তো কোনো সুন্দর তরুণীর প্রশংসা করে সন্ধ্যাটা কাটাতে বের হন, যিনি কেরানিদের ছোট কোনো বৃত্তের তারকা, তখন অন্যজন হয়তো - আর এটাই প্রায়শই হয়, কোনো এক সহকর্মীকে সাথে দেখা করতে বের হন, যে সহকর্মী হয়তো কোনো দালানের দোতালায় বা তিনতলায় ছোট দুটি ঘর, একটি বাড়তি সামনের ঘর অথবা একটি রান্নাঘর সহ নিয়ে বসবাস করেন অথবা কেতাদুরস্ত কোনো না কোনো আকর্ষণীয় জিনিসসহ, হয়তো একটি ল্যাম্প অথবা কোনো ছোট বিলাসী দ্রব্য, যা সংগ্রহ করা হয়েছে বহু রাতের খাবার বিসর্জন অথবা সন্ধ্যার বিনোদন বাদ দিয়ে)। এক কথায়, যখন সব কেরানিরা তাদের বন্ধুদের ছোট ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নকআউট হুইস্ট (৯) খেলছেন এক-কোপেকের বিস্কুটের সাথে কাচের গ্লাসে চা পান করতে করতে, কিংবা লম্বা চিবুকে (১০) তামাকের ধোয়া টানতে টানতে, তাস খেলতে খেলতেই, যখন সমাজের উঁচু তলা থেকে পরিস্রাবিত হয়ে নীচে নেমে আসা কোনো গুজব বা কেলেঙ্কারির কথা পুনরায় বর্ণনা করছেন - কারণ কোনো রুশ, তার যে পরিস্থিতি থাকুক না কেন, তারা কখনোই তাদের অভিজাত উচ্চ শ্রেণীকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেননা - অথবা, এমনকি, যদি কিছু আলাপ করার নাও থাকে, এক সেনা অধিনায়ককে নিয়ে সেই বহু প্রাচীন কোনো কৌতুক পুনরায় বলা হয়, যিনি খবর পেয়েছিলেন ফ্যালকোনেটের পিটার দ্য গ্রেটের (১১) ঘোড়ার লেজ কেটে ফেলে হয়েছে। এক কথায়, এমনকি যখন সবকিছু এবং সবাই অতি-আগ্রহী নিজেদের আনন্দ দেবার জন্য, আকাকি আকাকিয়েভিচ কখনোই কোনো আনন্দ লাভ করার প্রচেষ্টায় নিজেকে নিবেদিত করেননি। কেউ কখনো দাবী করতে পারবে না যে সন্ধ্যার কোনো অনুষ্ঠানে তাকে দেখেছে। মনের সাধ মিটিয়ে অনুলিপি করার পর, তিনি ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়তেন, আসন্ন দিনের কথা ভেবে মুখে হাসি নিয়ে, কল্পনা করতে করতে যে, কাল ঈশ্বর না জানি কি নিয়ে আসবেন তার কাছে অনুলিপি করার জন্য। এভাবেই চলছিল এই মানুষটির শান্তিপূর্ণ জীবন, বছরে চারশ রুবল বেতন সহ যিনি খুব ভালো করেই জানতেন কিভাবে তার নিজের ভাগ্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আর সেকারণে, হয়তো, তার জীবন হয়তো এভাবেই চলতো তার বৃদ্ধ হওয়া অবধি, যদি না বেশ কিছু বিপর্যয় ছড়িয়ে না থাকতো শুধুমাত্র টিটুলার নয়, প্রিভি, স্টেট, কোর্ট আর সব কাউন্সিলরদের পথেও, এমনকি তারাও, যারা কাউকে কোনোদিন উপদেশ যেমন দেননি, নিজেরাও কোনো উপদেশ পাননি।
(চলবে)

টীকা:

  • ১ গ্রেটকোট, মূলত বড় মাপের ওভারকোট সাধারণত উল দিয়ে বানানো পরিকল্পিত আবহাওয়া থেকে সুরক্ষা আর উষ্ণতার জন্য। এর কলার এবং হাতের কাফকে ঠাণ্ডা বা বৃষ্টি থেকে বাচাতে উল্টে দীর্ঘ করে ব্যবহার করা যায়।
  • ২ সেইন্ট পিটার্সবুর্গ ( পিটার্সবুর্গ) জনসংখ্যার দিক থেকে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, জার পিটার দ্য গ্রেট এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৭০৩ সালে। ১৯১৪ সালে এটির নাম হয় পেত্রোগ্রাদ, ১৯২৪ সালে লেলিনগ্রাদ, তবে ১৯৯১ সালে এটি তার পুরোনো নাম ফিরে পায়। নেভা নদীর তীরে বাল্টিক সাগরের গালফ অব ফিনল্যান্ডের মাথায় এর অবস্থান।
  • ৩ টিটুলার কাউন্সিলর – জার শাসনামলে সেনাবাহিনী,সরকারী ও রাজসভার র‍্যাঙ্ক বা পদমর্যাদার তালিকায় নবম ধাপ।
  • ৪ ইয়েরোশকিন শব্দটি এসেছে এমন একটি শব্দ থেকে যার অর্থ অগোছালো।
  • ৫ সেইন্ট পিটার্সবুর্গে সিনেট একই সাথে সাধারণ আদালত ও আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান।
  • ৬ বেলোব্রুশকোভা: এই অসম্ভাব্য শোনানো পদবীর নামের আক্ষরিক অর্থ সাদা পেট বিশিষ্ট
  • ৭ খোহদাজাত, চতুর্থ শতাব্দীর একজন বিশপ। খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হবার আগে তিনি আইনজীবী ছিলেন, গোগোলের নায়কের ব্যতিক্রম, সুপরিচিত ছিলেন তার বাগ্মিতার জন্য।
  • ৮ স্টেট কাউন্সিলর, এর মানে নবম স্তর থেকে পঞ্চম স্তর, উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি
  • ৯ নক-আউট হুইস্ট – এক ধরনের তাস খেলা
  • ১০ তামাক সেবনের জন্য লম্বা নলের তুর্কী পাইপ
  • ১১ ফ্যালকোনেট এর পিটার দ্য গ্রেট: এতিয়েন-মরিস ফ্যালকোনেট এর দ্য ব্রোঞ্জ হর্সম্যান সেইন্ট পিটার্সবুর্গের বিখ্যাত একটি ভাস্কর্য। ঘোড়াটি তার পেছনের পায়ের উপর ভর করে দাড়িয়ে আছে, যদি লেজটা, যা এর ভারসাম্যের জন্য তৃতীয় বিন্দুটি তৈরি করা হয়েছিল, যদি কেটে ফেলা হয় তাহলে পুরো ভাস্কর্যটি ধ্বসে পড়বে।

আপনার মন্তব্য