দিলওয়ার : গণমানুষের কবি, পৃথিবীর কবি

 প্রকাশিত: ২০১৭-১০-১০ ১৯:০৪:০১

অপূর্ব শর্মা:

‘পৃথিবী স্বদেশ যার, আমি তার সঙ্গী চিরদিন’- কবি দিলওয়ারের বহুল চর্চিত কবিতার পঙক্তি এটি। একজন কবি দিলওয়ারের চেতন বিশ্বে অনুপ্রবেশ করতে এর চেয়ে সহজ কোনো পথই আর খোলা নেই! এটাকে সদর দরজা বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। নানা দেশ, নানা জাতির মধ্যেও কবি দিলওয়ার, পৃথিবীর কবি হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করার প্রয়াস চালিয়েছেন নিরন্তর। তবে, এই অভিযাত্রায় কবি কতটা সফল, তা সময়ই বলে দেবে।

দিলওয়ারের কবিতার ‘স্বদেশ’-এ ভৌগলিক কোনো সীমারেখা নেই। কালির আঁচরে সুনিপুনভাবে তিনি বারং বার তুলে ধরেছেন, আবদ্ধতায় বিশ্বাস নেই তাঁর। সূর্য যেমন নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা জাতিকে আলোকিত করেনা, সবার জন্যই তার বিকিরণ; তেমনি পৃথিবীও অখণ্ড। মানুষই সীমারেখা তৈরি করেছে। তাই করিব এমন দৃপ্ত উচ্চারণ।

কবি দিলওয়ারের বয়স যখন মাত্র তেরো, তখন থেকেই তার লেখালেখির শুরু। প্রথম কবিতা-‘সাইফুল্লাহ হে নজরুল’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে। সাপ্তাহিক যুগভেরীতে প্রকাশিত কিশোর কবি দিলওয়ারের এই কবিতা, সহজেই পাঠক এবং বিদগ্ধজনকে আবিষ্ট করে। এই কবিতার মাধ্যমে তিনি তাঁর আগমনীর জানান দেন। সে থেকেই সাহিত্যাঙ্গনে কবি হিসেবে দিলওয়ারের সাবলীল বিচরণ। যা অব্যাহত ছিলো জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। ঝড়-ঝাঞ্ঝা উপেক্ষা করে তিনি সচল ছিলেন নিরন্তর।   
কবি দিলওয়ারকে তাঁর সময়ের কবিদের মধ্যে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম বললে অত্যুক্তি হবেনা এতটুকু। আঙ্গিক এবং বিষয় বৈচিত্রের দিক থেকে তাঁর কবিতা বাংলা সাহিত্যে সংযোজন করেছে এক ভিন্ন মাত্রা। সাবলীল এবং শব্দশৈলীর চাতুর্য্যতা তাঁর কবিতাকে আসীন করেছে অনন্য এক উচ্চতায়।
চিরাচরিত পথে না হেটে স্বতন্ত্র পথের সন্ধানে অভিযাত্রা শুরু করেন দিলওয়ার। ‘পঞ্চাশের দশকের কবিরা বিষয় ও অঙ্গ দুই দিক থেকে জীবনানন্দ ও তিরিশ-চল্লিশের কবিদের নানা অভিব্যক্তি এবং বুদ্ধদেব বসুর কবিতা পত্রিকার কাব্যচেতনা থেকে প্রেরণা ধারণ করে যে-কাব্যভাষা তৈরি করেছিলেন, দিলওয়ার সে-পথে যাননি’। নিজস্বতাকে তুলে ধরার চেষ্টায় তিনি রত হন শুরু থেকেই। কবির প্রথম কবিতার বই ‘জিজ্ঞাসা’তে সেই ছাপ স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। জিজ্ঞাসাতে কবির উচ্চারণ-

পৃথিবীতে এসে কেঁদে যায় যারা বেদনার গেয়ে গান;
হতাশার কালো নয়নে মাখিয়া তপ্ত নিশ্বাস ফেলে :
নত করি শির চরণে নিজের দুঃখের পসরা ঠেলে,
মহাজীবনের ললাটে আঁকিয়া তলোয়ার খরশান্
তাদের বিফল জীবনের লাগি, বলো ঠিক দায়ী কারা :
বিধি না জনক? শাক্ত না ধনী? কোথায় জবাব তার
লুকালো কোথায় উত্তরদাতা, সে কোন অন্ধাকার?
নিবিড় আবেগে কাঁপিছে আমার দুইটি আঁখির তারা!

আমরা যদি সেই সময়ের কবিদের কবিতা দিলওয়ারের কবিতার পাশাপাশি উপস্থাপন করি, তাহলে সহজেই আমাদের চোখে ব্যতিক্রম ধরা পড়বে। ভিন্নতর এই সৃষ্টিই, কবিকে কালের ক্যানভাসে অধিষ্ঠিত করেছে।

১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘জিজ্ঞাসা’। জিজ্ঞাসাতে কবির মোট ৩৮ টি কবিতা স্থান পেয়েছে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে জিজ্ঞাসার মুখবন্ধে কবির প্রত্যয়ী উচ্চারণ জানান দেয়, শব্দব্রহ্মের অন্তরঙ্গ ভাষ্যকারের দীর্ঘ অভিযাত্রার। কবি লিখেন, ‘যে পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে আমার জন্ম তার মধ্যে বহু মানুষের জীবনচাঞ্চল্য থাকলেও চিত্তের প্রসাধনস্বরূপ সাহিত্যসংস্কৃতির তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো তাড়না ছিলো না। ছিলো না আমার রবীন্দ্রনাথের মতো কোনো সাহিত্যিক উত্তরাধিকার, ছিলেন না কোনো সাব্যস্ত পথনির্দেশক। আমার কাব্য চর্চার ইন্ধন যুগিয়েছে যে শক্তি, তার নাম প্রকৃতি।’ তাই দিলওয়ার পাঠ আমাদের বার বার নিয়ে যায় প্রকৃতির কাছে, মানুষের কাছে।

দিলওয়ারের দ্বিতীয় কবিতার বই ঐক্যতানের (১৯৬৪ সালে প্রকাশিত) প্রায় প্রতিটি কবিতায়-ই ফুটে উঠেছে প্রকৃতির সাথে কবির সখ্যতার চিত্র। প্রেম, ভালোবাসা, স্বপ্ন-আখাঙ্খা, প্রতিবাদ, সম্ভাবনা- সবই তিনি শব্দমালায় সংযোজন করেছেন একান্ত নিবিষ্টতায়। ঐক্যতানের বেশ কয়েটি কবিতা, দিলওয়ারের নমের সাথে সংযোজিত হয়ে গেছে চিরদিনের মতো, অঙ্গাঙ্গিভাবে। ‘কীনব্রীজের সূর্যোদয়’- কবিতাটি খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায় কবিকে। শহর সিলেটের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদী পারাপারের এই সেতু- নিয়ে কবির অভিব্যক্তি সত্যিই বিস্ময় জাগানিয়া!
এখন প্রশান্ত ভোর। ঝিরঝিরে শীতল বাতাস
রাত্রির ঘুমের ক্লান্তি মন থেকে ঝেড়ে মুছে নিয়ে
আমাকে সজীব করে। উর্ধ্বে ব্যাপ্ত সুনীল আকাশ
পাঠায় দূরের ডাক নীড়াশ্রয়ী পাখীকে দুলিয়ে।

নীচে জল কলকল বেগবতী নদী সুরমার,
কান পেতে শুনি সেই অপরূপ তটিনীর ভাষাঃ
গতিবন্ত প্রাণ যার জীবনের সেই শ্রেয় আশা
সৃষ্টির পলিতে সেই বীজ বোনে অক্ষয় প্রজ্ঞার।

সহসা ফিরিয়ে চোখ দিয়ে দেখি দূর পূবাকাশে
তরুণ রক্তের মতো জাগে লাল সাহসী অরুণ
পাখীর কাকলি জাগে। ঝিরঝিরে শীতল বাতাসে
দিনের যাত্রার শুরু। অন্তরালে রজনী কুরণ!

ধারালো বর্শার মতো স্বর্ণময় সূর্যরশ্মি ফলা
কীন ব্রীজে আঘাত হানে। শুরু হয় জনতার চলা।


এই কবিতাটি কবিকে ব্যাপক জনপ্রিয় করে পাঠক মহলে। এরপর কবি একে একে লিখেন পুবাল হাওয়া (গানের বই, ১৯৬৫), উদ্ভিন্ন উল্লাস (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৬৯), বাংলা  তোমার আমার (গানের বই, ১৯৭২), ফেসিং দি মিউজিক (ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ, ১৯৭৫), স্বনিষ্ঠ সনেট (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৭৭), রক্তে আমর অনাদি অস্থি (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৮১), বাংলাদেশ জন্ম না নিলে (গ্রবন্ধগ্রন্থ, ১৯৮৫), নির্বাচিত কবিতা (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৮৭), দিলওয়ারের শত ছড়া (ছড়ার বই, ১৯৮৯), দিলওয়ারের একুশের কবিতা (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৯৩), দিলওয়ারের স্বাধীনতার কবিতা (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৯৩), ছাড়ায় অ আ ক খ (ছড়ার বই, ১৯৯৪), দিলওয়ারের রচনাসমগ্র ১ম খণ্ড (১৯৯৯), দিলওয়ার-এর রচনা সমগ্র ২য় খণ্ড (২০০০), ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর ডাকে (ভ্রমণ, ২০০১), দুই মেরু, দুই ডানা (কাব্যগ্রন্থ ২০০৯) ৷ এসবের পাশাপাশি কবির অগ্রন্থিত লেখার ভান্ডারও বিশাল। তারমধ্যে কবিতাই বেশি। এসব কবিতা ছাপা হয়েছে দৈনিক পত্রিকায় কিংবা সাহিত্য ম্যাগাজিনে অথবা বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত গ্রন্থে।
দিলওয়ারের কবিতার ভাণ্ডার অন্বেষন করলে সহজেই অনুমিত হয়Ñতিনি স্বার্থকভাবে সময়কে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন অতিমাত্রায়। ইতিহাস থেকে নিয়েছেন লেখার রসদ। মানবতার জয়গান উঠে এসেছে তাঁর কাব্য-কথায়। শোষিতের পক্ষে শোষনের বিপক্ষে তাঁর লেখনি ছিলো সর্বদা দুর্বার। কঠিন অথচ সাবলীল, ছন্দময় অথট বৈচিত্রে ভরপুরÑএকের পর এক কবিতা লিখেছেন, আর তার এই সৃষ্টি কবিতা সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর। কোরান-পুরান-মহাভারতÑকাব্যের প্রয়োজনে বিরাজ করেছেন সর্বত্র। ‘তৃতীয় বিশ্ব থেকে’ কবিতায় তারই স্বার্থক সংমিশ্রন আমরা প্রত্যক্ষ করিÑ‘প্রিয়তমা, আমিও বলতে পারতাম/এই পৃথিবীটা একটা আপেল, তার আধখানা তুমি/আর আধখানা আমি.../আমিও বলতে পারতাম/একটি বিশাল উদ্যানের আকাশে উড়ন্ত/চির আকাক্সক্ষার নীলপাখির এক ডানা তুমি/আর অন্যডানা আমি/ বাঁধভাঙা কল্পনার ফসল হচ্ছে পুরাণ কথা/ তাই দেখি দেবরাজ জিয়ূস কিংবা ওডিন কিংবা ইন্দ্র.../দেবরাণী হেরা কিংবা ফ্রিগা কিংবা শচী.../তুলকালাম কাণ্ড করে যাচ্ছেন স্বর্গ এবং মর্ত্য/ে কী বিস্ময়! মানুষেই জ্বল জ্বল দেবযোনি আর নরযোনি/ প্রিয়তমা, একটি সুদৃশ্য আপেলের অবয়বে/ আমাদের এই পৃথিবীর বুকে তুমি আর আমি/এখনও যেন দুই ফলভুক কীট/ বলতে পারতাম কিন্তু বলবনা/যেমন বলতে পারেতন কিন্তু বলেননি/বহুকোটি জনের আরাধ্য বিধাতাপুরুষ/ সমুদ্রের সুনীল গভীরে কিংবা আকাশের নীল জরায়ূতে/আমাদের একটি সান্তনাই চিরস্থায়ী/ আমরা জড়িয়ে আছি সাফল্যের আলো ও আধারে...।’ এখানে সাবলীলভাবে, সাচ্ছন্দে কবি পুরাণ থেকে দেবতাদের চরিত্রকে তুলে ধরেছেন, প্রিয়তমার সাথে নিজস্ব অখাঙ্খা ব্যক্ত করেছেন এবং সর্বোপরী স্বপ্নময়তা থেকে বের হয়ে এসে নিজস্ব অবস্থানে সুদৃঢ় থাকার প্রত্যয়ের জানান দিয়েছেন- দিলওয়ার বলেই সম্ভব হয়েছে তা।     
কবি জিজ্ঞাসায় বলেছিলেন, ‘কোনো সাব্যস্ত পথ নির্দেশক পাননি’- কিন্তু জীবনের বাক বদলে তিনি এমন একজনকে পেয়েছিলেন, যাকে তাঁর কবিতার অন্যতম প্রেরণাদাত্রী বললে বোধ হয় ভুল হবেনা। অসুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করে চলা কবির সত্যিকারের সহযাত্রী আনিসা দিলওয়ার আছেন তাঁর সৃষ্টিশীলতার বড় একটা অংশ জুড়ে। সে কারনে স্বাভাবিকভাবেই তিনি এসেছেন কবিতায়। তবে, ব্যক্তিগত নয়; সমষ্টির সাথে সম্মিলন ঘটিয়েছেন তিনি তার নিজস্ব প্রেমের। ‘গোটা বিশ্ব আজ প্রিয়তমা’ কবিতায় কবির বয়ান- ‘প্রিয়তমা এসো তুমি যৌথকণ্ঠে শেষ বার বলি/আমরা বহন করি অলৌকিক মানবতা বোধ/তাকে রোজ øাত করে অতলের জলীয় আমোদ/তার স্বাদ পেতে চায় আদিম প্রাণের কথাকলি/ উঠোনে দাঁড়িয়ে দেখি রোদ হাতে নাজিম হিকমত/ম্যাক্সিম গোর্কির রাত আজো কিনা হয়নি নিঃশেষ/ জননীর কণ্ঠে শুনি বাঁধভাঙ্গা কঠোর আদেশ/ধ্বংসকে দেখিয়ে দাও সৃজনের ধ্র“পদী হিম্মত/ প্রিয়তমা, মনে রেখো পৃথিবীর সূর্যপ্রদক্ষিণ/অগত্যা বিশ্রাম নেই আকাঙ্খিত আলোর সফরে/অনাগত সন্তানেরা রক্তস্রোতে বিচরণ করে/পশু মানুষের হাতে নয় তারা কখনো অধীন/প্রিয়তমা তুমি নও, গোটা বিশ্ব আজ প্রিয়তমা/ তার জন্য অনিবার্য বৈপ্লবিক প্রেম-পরিক্রমা।’ দিলওয়ার স্বপ্নময়তার সাথে ভালোবাসার সার্থক সংমিশ্রন ঘটিয়ে তাকে রূপ দিয়েছেন কবিতায়। ব্যক্ত করেছেন তাঁর মনোভূমিতে বিচরণ করা কথামালা।

দিলওয়ারের কবিতা সহজেই আমদের চেতনার জগতকে আলোড়িত করে তুলে। অবচেতন মনে জাগায় সংগ্রামী প্রেরণা। সৃজনশীলতায় দৃপ্ত হতে সাহায্য করে, তার কথামালা। অনুরনন তুলে মনোভূমিতে তার বাক্যশৈলী। কবি যখন বলেন, ‘চাই বিপ্লব, চাই বিপ্লব, চাই/ বিপ্লব ছাড়া মুক্তির উপায় নাই/পুরাতন করে কর্তন/আনো নব পরিবর্তন/নরদানবের বংশ/করবো সমুলে ধ্বংস/বুঝে নাও আজ এই ধরণীর/প্রাপ্য যে যার অংশ/রুখিয়া দাঁড়াও ভাইরে/জীবনের গান গাইরে/ প্রাণ ধারণের প্রাপ্য রাসদ/চাইরে মোদের চাই/বিপ্লব ছাড়া জীবন জাগার কোনো উপায় নাই/দাও তবে প্রতিঘাত/হাতেতে মিলাও হাত/দাও হুঙ্কার, টুটাবোই মোরা/দুঃস্বপ্নের রাত।’ তখন প্রতিবাদী সত্তা আপনা আপনি জাগরিত হয়ে যায়।

মানুষের শোষন মুক্তির সপ্নে তিনি বিভোর থাকতেন সব সময়। সাম্যের সমাজ বিনির্মানের আন্দোলনকে বেগবান করতেও তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। ‘শ্রদ্ধেয় পিতা ক্ষমা করবেন’ কবিতায় তার তাঁর দৃপ্ত উচ্চরণ-
    
শ্রদ্ধেয় পিতা ক্ষমা করবেন যদি অপরাধ হয়
আমরা কি আজো দিতে পারলাম
মানুষের পরিচয়?
ডুবে আছি আজো খণ্ডে খণ্ডে সাম্প্রদায়িক পাঁকে
দম্ভদূষিত নাগপাশে বেঁধে
মানুষের বিধাতাকে।

কবিতায় তিনি সাম্যের গান গেয়েছেন সব সময়। এক্ষেত্রে তিনি যথার্থ রূপকারও বটে। ‘বলে রাখি শোনো, করো নাকো হৈ চৈ/যতদিন আছে শ্রেণী বিভক্ত জাতি/আমি কিছুতেই তোমাদের দলে নই।’ দিলওয়ারের ‘মধ্যবিত্তের বিস্ময়’ কবিতায় শেণী বিভাজনের যে চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে, তা বাংলা সাহিত্যে বিরল। একইভাবে ‘একদিন হিটলারও ভাবতেন’ কবিতায়ও তিনি তুলে ধরেছেন বৈষম্যের স্পষ্ট ছবি।

বাংলার কাঁদা, জল, মাটি থেকে দিলওয়ার আহরণ করেছেন তাঁর কাব্য কথা। ছন্দবদ্ধ পংক্তি সাজিয়ে তিনি তুলে ধরেছেন তা মানবের কল্যানে। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করেছেন কবিতাকে। শৃংখল মুক্তির অন্বেষনে তিনি চষে বেড়িয়েছেন সাহিত্যের সর্পিল পথ। প্রথাবিরুদ্ধতায় গতিময় থেকেছেন সবমসয়। বিশ্বাসের প্রতি অবিচল থেকে লিখেছেন, মা, মাটি ও মাতৃভূমির কথা। ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি যখন লিখেন, ‘পদ্মা তোমার যৌবন চাই/যমুনা তোমার প্রেম/সুরমা তোমার কাজল বুকের/পলিতে গলিত হেম/ সাগরদুহিতা এই বাংলার/নিশিগন্ধার এই রাতে/ঊর্মিদোদুল জনক আমার/মিলেছে মায়ের সাথে/সূর্যমুখীর সহোদরা এই/নারীর গর্ভকোষে বাংলায় আমি জন্ম নিয়েছি/জারিত স্বর্ণরসে!/ পদ্মা যমুনা সুরমা মেঘনা/ গঙ্গা কর্ণফুলী/ তোমাদের বুকে আমি নিরবদি/গনমানবের তুলি!/ কতো বিচিত্র জীবনের রং/চারদিকে করে খেলা/মুগ্ধ মরণ বাকে বাকে ঘুরে/কাটায় মারণ বেলা!/ রেখেছি আমার প্রাণ স্বপ্নকে/বঙ্গোপসাগরেই/ ভয়াল ঘূর্ণি সে আমার ক্রোধ/উপমা যে তার নেই!/ এই ক্রোধ জ্বলে আমার স্বজন/গণমানবের বুকে/ যখন বোঝাই প্রাণের জাহাজ/নরদানবের মুখে!/ পদ্মা সুরমা মেঘনা যমুনা/ অশেষ নদী ও ঢেউ/ রক্তে আমার অনাদি অস্থি/বিদেশে জানেনা কেউ!’-তখন কবির মনোভূমির অনুরনন সহজেই বুঝতে পারা যায়।        

রাজনৈতিক সংকটকালে তাঁর রচনা আমাদের যুগিয়েছে, শক্তি সাহস; দেখিয়েছে সঠিক পথের দিশা। বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে তাঁর দ্রোহি চেতণার স্ফুরণ ঘটে। মাতৃভাষা-আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহনের পাশাপাশি তিনি লিখেন, ‘আয়রে চাষী মজুর কুলি  মেথর কুমার কামার/বাংলা ভাষা ডাক দিয়েছে বাংলা তোমার-আমার।’

ষাটের দশকে রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের সাথে একদিকে যেমন সম্পৃক্ত ছিলেন, অন্যদিকে তীব্রতর ছিলো তাঁর লেখনি।  

মুক্তিসংগ্রামের সংগঠক কবি দিলওয়ার, স্বাধীনতারও কবি। পরাধীনতার শৃংখল মুক্তির আন্দোলনেও তিনি ছিলো একেবারে সামনের কাতারে। তার লেখনি, মুক্তিসংগ্রামকে বেগবান করতে ভূমিকা রেখেছে। তার উদ্যোগে অসহযোগ আন্দোলনে লেখক, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিকদের নিয়ে গঠিত সম্বস্বর শিল্পী গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে যে ভূমিকা পালন করে তা তুলনাহীন। তবে, এখানে একটা বিষয়-নিমিষেই ভাবনার অথৈ সাগরে নিয়ে যায়। তা হচ্ছে, যুদ্ধ শুরুর পূর্বেই কবির লেখা দুর্জয় বিশ্বাসের গান কবিতা। এই কবিতায় লিপিবদ্ধ হয়েছে যুদ্ধেরই পূর্বভাস। অধুনালুপ্ত দৈনিক আজাদের বর্ষ শুরু সংখ্যায় কবি লিখেন- ‘আঘাতে আঘাতে মুক্ত দিব্য দৃষ্টি:/ বিশ্বাস করো, আসছে অগ্নি বৃষ্টি!/ জলবৎ সোজা আর্তনাদের ভাষ্য/ জীবনে চেপেছে নিষ্ঠুরতমোদাস্য/ অবলার মতো কেবলি বক্ষ ফাটছে/স্বপ্ন ও প্রেম নিজেরি রক্ত চাটছে/ শক্তির দাঁতে ইনসানিয়াতের কৃষ্টি/বিশ্বাস করো, আসছে অগ্নিবৃষ্টি!/ভালো ও মন্দ, পাবেনাকো কেউ নিস্তার/ অগ্নিমেঘের ঘটবে যখন বিস্তার (পম্পেই জানে বিসুভিয়াসের তৃষ্ণাঃ কী ভীষণ সেই আগুনে ধরণী-কৃষ্ণা!) তপ্ত লাভার টগবগ ধ্বনি শুনছি/ এক, দুই করে ভয়াল গুনছি/ লক্ষ লক্ষ গলিত লাশের মূর্তি-/ অমোঘ সত্যে পাচ্ছে ক্যামন স্ফূর্তি! / কেননা সত্য : আঘাতে আঘাতে ঝাঁঝরা/ চরণে চরণে বাজে আইনের পাঁজরা,/ শোণিত সিক্ত দারুণ ক্ষিপ্ত ইনসাফ/ করবে এবার যতো শাদ্দাদী দিন-সাফ/ বজ্রে শোভিত জাগে সংগ্রামী সৃষ্টি/ বিশ্বাস করো, আসছে অগ্নি বৃষ্টি!’
কবি, এই কবিতাটিকে মুক্তিযুদ্ধের দলিল হিসেবে গণ্য করা যায় বলে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন জীবদ্দশায়। তার ‘দুই মেরু, দুই ডানা’ বইয়ে সংযোজিত হয়েছে কবিতাটি।

বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্ব সাহিত্যের সাথেও কবির নিবির সংযোগ ছিলো। সেই সংযোগের ফলস্বরূপ কবি সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য কবিতা। তবে তাঁর চিন্তার প্রখরতা এবং অন্বেষনের দূরদর্শিতা চমকে উঠার মতো। ষাটের দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার জেলে স্বাধীনতাকামী নেলসন মানদেলা যখন জেলে বন্দি, তখন দিলওয়ার তাঁকে নিয়ে লিখেন- ‘নেলসন মানদেলা: একটি আগ্নেয় স্মরণ।’ কবি বিশ্বমানবতার পক্ষে কলম ধরে লিখেন- ‘আনিসা শুনতে পাও, ‘উহুরু’ ‘উহুরু’ সেই ডাক?/ অগ্নিগোলকের মতো কৃতঘ্ন আঁধার ভেদ করে/ সে-ডাক ছুটন্ত দ্যাখো। রৌদ্র নৃত্য কালের অধরে!/ কৃষ্ণ সাগরের স্রোতে শ্বেতদৈত্য আতংকে নির্বাক/ এবং শুনতে পাও খাচাভাঙ্গা সিংহের গর্জন?/শানিত থাবায় তার জন্মগত মুক্তির সনদ/সে হাঁকে অকুতোভয়ে : করবে কে আয় গতিরোধ/দেখি কার শক্তি কতো। আমি আজ অরাতি দমন/ সেই বজ্রনাদ শুনে, চেয়ে দ্যাখো, ধবল প্যান্থার/ শ্বেতাঙ্গ অসুরবৃন্দ জ্বরার্ত শিশুর মতো কাঁপে/ বিপুলিপ্ত নিকটবর্তী। শাখায় ঝুলন্ত স্বৈরাচার/অতল তিমির গর্ভে সূর্যকান্ত মণির মতোন/আফ্রিকা ক্রমশঃ দীপ্ত ঃ কন্ঠে কোটি পল রোবসন’- কেবলমাত্র নেলসন মানদেলা নিয়েই নয়, পৃথিবীর কবি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেক বিষয় নিয়ে লিখেছেন কবিতা। তাঁর সেই কবিতায় সর্বাগ্রে স্থান পেয়েছে মানবতাবোধের অমীয় বানী।

শুধু সাহিত্যই নয়, অনেক প্রথিতযশা সাহিত্যিকের সাথে তাঁর ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো। কবিতার মাধ্যমেই এই সংযোগ স্থাপিত হয়। এ প্রসঙ্গে মফিদুল হকের ভাষ্য উল্লেখ করা যেতে পারে। মফিদুল হক লিখেছেন, ‘‘কবি হিসেবে দিলওয়ার যেমন ঢাকাকে উপেক্ষা করতে পেরেছেন, তেমনি তিনি নরম্যান রস্টেনের সঙ্গে তাঁর হার্দিক সম্পর্ক নিয়ে কখনো উচ্চকিত হননি। রস্টেন বিশ শতকের এক প্রধান মার্কিন লেখক, নাট্যকার আর্থার মিলারের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের তিনি একজন, নিউইয়র্কবাসী রস্টেনের কবিতার পঙিক্ত খোদাই করা আছে ব্র“কলিন ব্রিজের গোয়ায়। নরম্যান রস্টেন স্পেনের গৃহযুদ্ধে প্রজাতন্ত্রীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে হাওয়ার্ড ফাস্ট, আর্নেস্ট  হেমিংওয়ে, জন ডস প্যাসোস প্রমুখ সাহিত্যিকের সঙ্গে একত্রে কাজ করেছেন। ডেথ অব এ সেলস্ম্যান-এর লেখক আর্থার মিলার যখন হলিউডের লাস্যময়ী নায়িকা  মেরিলিন মনরোকে বিয়ে করেন, তখন রস্টেন দম্পতি ছিলেন মুষ্টিমেয় অতিথিদের একজন। রস্টেনের সঙ্গে মেরিলিন মনরোর যে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, সেটা আর্থার মিলারের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরও অব্যাহত ছিল। মেরিলিন মনরো অনেক ব্যক্তিগত বিষয় ভাগ করে নিয়েছিলেন রস্টেনের সঙ্গে, যে গুটিকয় কবিতা তিনি লিখেছিলেন, সেটা রস্টেনের কাছেই গচ্ছিত ছিল। মেরিলিনের আত্মহত্যার বেশ কিছুকাল পর লেখা রস্টেনের বই মেরিলিন: অ্যান আনটোল্ড স্টোরি হলিউডের এই নায়িকা সম্পর্কে লেখা শ্রেষ্ঠ গন্থ হিসেবে নন্দিত হয়েছে।

নরম্যান রস্টেনের সঙ্গে দিলওয়ারের যোগাযোগের কাহিনি বিস্ময়কর। মেরিলিনের আত্মহত্যার পর মার্কিন ম্যাগাজিন লাইফ-এ যে ফটোস্টোরি পত্রস্থ হয়, এর রচয়িতা ছিলেন নরম্যান রস্টেন। ওই রিপোর্ট পাঠান্তে দিলওয়ার শনাক্ত করতে  পেরেছিলেন গ্ল্যামারের অন্তরালের বিষাদ, তিনি ইংরেজিতে লিখে ফেলেন ছোট এক কবিতা এবং পাঠিয়ে দেন লাইফ ম্যাগাজিনের ঠিকানায়। এই কবিতা পাঠে চমকে উঠেছিলেন নরম্যান রস্টেন এবং সেই যে গড়ে ওঠে দিলওয়ারের সঙ্গে সখ্য, সেটা আশির দশকে নরম্যানের মৃত্যু অবধি বজায় ছিল। ...

মেরিলিন মনরো আমেরিকার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক রহস্য, তাঁর সঙ্গে মার্কিন সমাজের বোঝাপড়া এখনো অসমাপ্ত রয়ে  গেছে। অ্যান্ডি ওয়ারহল মেরিলিনের প্রতিকৃতি এঁকে পপ-কালচারের সূচনা করেছিলেন। পিট সিগার্স তাঁর আসল নাম নিয়ে বেঁধেছিলেন অনেক জিজ্ঞাসার জন্মদাতা গান, ‘হু কিল্ড নর্মা জিনস, হোয়াই সি হ্যাড টু ডাই।’ আর আমাদের কাছে যিনি সিলেটের কবি, নরম্যান রস্টেনের কাছে তিনি নিশ্চয় বাংলার কবি, সেই দিলওয়ার লিখেছিলেন হৃদয় -নিংড়ানো কবিতা, এ গ্ল্যান্স অব এম.এম.। লিখেছিলেন, ‘ইউ মে কল হার/ অ্যা ব্যাড গার্ল/ অ্যা ম্যাড গার্ল/ অ্যা মরবিড হিউম্যান ফ্রাইট/ বাট আই নো, ও লিসন টু মি/ সি ইজ এ স্যাড গার্ল/ অ্যা রেড গার্ল/ অব জোডিয়াক্যাল লাভ অ্যান্ড লাইট।’

মধ্যের পঙিক্তগুলো নিম্নরূপ: ‘হোয়েন দা নাইট ইজ ডিপ/ অ্যান্ড স্লিপ ইজ রেয়ার/আই ফাইন্ড হার হার্ট স্যাড/ আই ফাইন্ড হার ইন প্রেয়ার / সো আই নো, ও লিসন টু মি/ সি ইজ অ্যা স্যাড গার্ল/ অ্যা রেড গার্ল/ অ্যা জোডিয়াক্যাল অব লাভ অ্যান্ড লাইট।’

যখন আমেরিকাতেও খুব সামান্য কজন ব্যক্তিত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন গ্ল্যামার-কন্যা মেরিলিন মনরোর অন্তর্গত বিষাদ, তখন বাংলার এক সংবেদনশীল কবি হয়েছিলেন সেই বেদনার রূপকার এবং সেই সুবাদে মেরিলিন-সুহৃদ লেখক নরম্যান রস্টেনের সঙ্গে তাঁর গড়ে ওঠে নিবিড় বন্ধুত্ব। একজন বড় মাপের মানুষ ও কবি হিসেবে এই কাহিনি ফেরি করে  বেড়াননি কবি দিলওয়ার, আজ তাঁর প্রয়াণে সেই কথাগুলো মেলে ধরতে হলো এ কারণে যে, মেরিলিন মনরোকে বুঝতে মার্কিন সমাজের লেগেছিল কয়েক দশক, দিলওয়ারকে বুঝতেও আমাদের প্রয়োজন হবে তেমনি সাধনার।’’

কবিতায় মানুষের কথা, সুন্দর এবং প্রগতির পথ অবলম্বন করার কারনেই- দিলওয়ারের নামের সাথে যুক্ত হয়ে যায় গণমানুষের অভিধা। রাজধানী থেকে দূরে মফস্বল শহর সিলেটে অবস্থান, জনমানুষের সাথে তাঁর সম্পৃক্ততার আখাঙ্খারই  যেনো প্রতিফলন। জনতার কাতারে থাকতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন। তাই একজন দিলওয়ার আধুনিকতার কবি হয়েও ছিলেন অত্যাধুনিক। অকপটে তিনি লিখেন, ‘বীর্য আমার আর্য অনার্যেই/আমারই জাতক সেমিটিক হামিটিক/আমিই আদিম/চলিষ্ণু আধুনিক।’

শেষ করতে চাই, কবির প্রকাশিত শেষ কবিতার বই ‘দুই মেরু দুই ডানা’ ভূমিকায় লেখা কবির ‘প্রসঙ্গত : আমি’র শেষ লাইনগুলো দিয়ে। কবি লিখেছেন, ‘আমি আকৈশর বিশ্বনাগরিকত্ব নিয়ে সামনের দিকে থেকেছি চলমান। কেননা আমি সেই বয়সেই জ্ঞাত হই যে আমার রক্তমাংসের অবস্থান পৃথিবী নামের একটি গ্রহের হৃৎকমলে। এবং নিরন্তর সূর্য প্রদক্ষিণরত এই গ্রহের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, মাতৃভূমি বাংলাদেশ। সব রকমের নৈরাশ্যবাদের বিরুদ্ধে এরূপ এক দুর্মর উপলব্ধি আমার কবিসত্তার অফুরন্ত প্রেরণা। তাই আমি অসংকোচে কবিতায় ব্যক্ত করেছি-‘একটি গোলাপ চারা নিরন্তর বলে যায়-প্রাঙ্গনে কী গোরস্তানে যেখানেই রোপন করো/আমি জন্ম দেবো ফুলের রাণী, গোলাপ।’ তার এই উচ্চারণের সাথে দ্বিমত করার অবকাশ নেই। তার সূর্য অস্ত যায়না কবিতা সেই ঘোষণার স্বার্থকতাই যেনো বহন করছে-

শোনো,
সূর্য অস্ত যায়না কখনো/তুমি যাকে অস্ত যাওয়া বলো,
সে তোমার ভ্রান্তি জেনোঃ
পুরানোর দেবতা এ্যাপোলো

সূর্য আছে একটাই স্থির
অগ্নিবীর্যে জ্বালিয়ে শরীর।

পৃথিবীটা শুধু ঘুরে ঘুরে
নিকটে ও দূরে
দিন-রাত্রি জন্ম দিয়ে যায়
নিস্তব্ধ কালের ইসারায়।

তুমি তাই ঝাড়া দাও ডানা
খুঁজে নিতে আলোর ঠিকানা
পূর্বপুরুষের রক্ত
আলোকেরি সংগ্রামের তরে
ঝরেছে অঝোর ধারে
নিষ্কুরুণ পর্বতে, গহ্বরে  

অতএব দৃঢ় চিত্তে শোনো
সূর্য অস্ত যায়না কখনো।

দিলওয়ারের এই কবিতার সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই- তাঁর সৃষ্টিও অস্তগামী হবে না কখনো। কালের ক্যানভাসে অমলীন থ্কাবে অনন্তকাল।

আপনার মন্তব্য