মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে মানুষের মধ্যে লেখালেখির মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে- জুলিয়ান সিদ্দিকী

একুশে গ্রন্থমেলার লেখক-পাঠকের অপূর্ব মিলনমেলা। আমরা সিলেটটুডে২৪.কমের পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছি লেখক-প্রকাশকদের সাথে। এবারের পর্বে কথা বলছেন ঔপন্যাসিক জুলিয়ান সিদ্দিকী

 প্রকাশিত: ২০১৫-০১-১৫ ১৯:০৯:২৩

 আপডেট: ২০১৫-০১-২৭ ১০:৩৩:৫০

নিউজ ডেস্ক:

জুলিয়ান সিদ্দিকী ঔপন্যাসিক। দীর্ঘদিন ধরে লিখছেন। বাংলা ব্লগে নিয়মিত লিখে পরিচিতিও লাভ করেছেন বেশ। দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে আছেন কিন্তু বাংলা ভাষা আর সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা ছাড়তে পারেননি। তাই শত ব্যস্ততা সত্বেও হুমড়ি খেয়ে পড়েন অনলাইনে। 

তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উপন্যাসের আধিক্য থাকলেও গল্পেও তাঁর হাত আছে দারুণ। বাংলা ব্লগগুলোতে লিখে তাঁর গল্পের একটা স্বতন্ত্র পাঠকশ্রেণি তৈরি করতে পেরেছেন। আসছে বইমেলায় প্রকাশ হতে যাচ্ছে তাঁর গল্পের বই, প্রকাশ করেছে অনুপ্রাণন প্রকাশন, ঢাকা। 

সিলেটটুডে২৪ পাঠকদের উদ্দেশে তাঁর নিজের লেখালেখি, বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় এবং বইমেলা নিয়ে কথা বলেছেন খোলাখুলিভাবে। বিস্তারিত পাঠকদের উদ্দেশে:

সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে আপনার কী বই আসছে?
জুলিয়ান সিদ্দিকী: 'বিশ্বাসের দহন ও অন্যান্য গল্প' শিরোনামে ছোটগল্পের বই প্রকাশ করছে অনুপ্রাণন প্রকাশন।

সিলেটটুডে২৪: আপনার প্রকাশিত বই সংখ্যা কত? 
জুলিয়ান সিদ্দিকী: প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভালোবাসার যাতনা যত (উপন্যাস) ২০০৫, নন্দিতা প্রকাশ। আরেক জীবন (উপন্যাস) ২০০৬, বইপত্র গ্রুপ অব পাব্লিকেশনস। ছায়াম্লান দিন (উপন্যাস) ২০১২, বইয়ের দোকান ডট কম (পিডিএফ)। কম্পেন্ডার (উপন্যাস) ২০১৩, ব্লগারস ফোরাম এবং উত্তাপ কিংবা উষ্ণতা (উপন্যাস) ২০১৪, গ্রীন নেট পাবলিশার্স (পিডিএফ)।

সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আপনার প্রত্যাশা কী?
জুলিয়ান সিদ্দিকী: লেখক পাঠক এবং প্রকাশকের মাঝে একটি নিবিড় সংযোগ গড়ে উঠুক, যা সারা বছর জুড়েই টিকে থাকবে।

সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা কিভাবে আরো আকর্ষণীয় করা যায়?
জুলিয়ান সিদ্দিকী: মেলার পরিধি বাড়িয়ে নিয়ে, গ্রন্থ প্রকাশক নয় এমন প্রতিষ্ঠানকে স্টল না দিয়ে, লিটলম্যাগ চত্বরকে আড়ালে না রেখে আরো খোলা জায়গায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে, মেলা প্রাঙ্গনের বাইরে রাস্তার ওপরও ছোটছোট প্রকাশনীর জন্য স্টল বরাদ্দ করে মেলার আকর্ষণ বাড়ানো যেতে পারে। মেলা কর্তৃপক্ষ সর্বাধিক বই ক্রেতাকে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করতে পারেন।

সিলেটটুডে২৪: একুশে গ্রন্থমেলায় নিয়মিত যান? কী কারণে?
জুলিয়ান সিদ্দিকী: দেশে থাকলে যেতাম। প্রতিদিন বই না কিনলেও নতুন নতুন বই দেখা, ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে পড়া যাবে এমন বইয়ের সন্ধান করা, বন্ধু আর পরিচিতদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতেরও একটা ব্যাপার থেকে যায়। তাই সেখানে যেতেই হয়।

সিলেটটুডে২৪: লেখালেখিতে কোন বিষয়টিকে আপনি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন? কী যুক্তি এর পেছনে?
জুলিয়ান সিদ্দিকী: লেখালেখিতে আমার বিষয় প্রাত্যহিক জীবন যুদ্ধে সম্পৃক্ত মানুষেরা। তাদের ছোট ছোট আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া ও নানা প্রতিবন্ধকতা, সেই সঙ্গে তার অন্তর্জগতে একটি স্বাধীন সত্ত্বা আছে যার সঙ্গে ব্যক্তি আর সমাজের নানা বৈষম্য, চাপিয়ে দেয়া ব্যাপারগুলো। 

এর পেছনে যুক্তি একটাই যে, সমস্যাটা তুলে ধরলে অন্যন্য লোকজনের চোখে পড়বে। বিষয়টা নিয়ে তাদের মনেও চিন্তা-ভাবনা আসবে। সত্যি-মিথ্যা নিয়ে ভাবনার খোরাক মিলবে। মানুষ সচেতন হবে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ আর মৌলবাদ সম্পর্কে জন সচেতনতাও আরেকটি বড় ব্যাপার।

সিলেটটুডে২৪: আপনার বই আর পাঠক এবং আপনি আর অন্যান্য বই এ সম্পর্কে আপনার কী মূল্যায়ন?
জুলিয়ান সিদ্দিকী: আমার বই প্রকাশিত হলে পাঠকের আগ্রহ থাকে। কিন্তু অনেক সময় বিপণন ব্যবস্থা বড় বাধার সৃষ্টি করে। 
অন্যন্য বই সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন হচ্ছে যে, অনেকেই নতুন নতুন বই প্রকাশ করছেন, কিন্তু দুর্বল সম্পাদনা বা সম্পাদনাহীন অবস্থায় যেন-তেন ভাবেই প্রেস থেকে ছেপে নিয়ে আসছেন, সে ব্যাপারটার প্রতি আমাদের দৃষ্টি দেয়া দরকার। বানান ভুলে ভরা বা অন্যন্য ত্রুটিপূর্ণ বই কোনো নতুন পাঠকের হাতে গেলে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত বই সম্পর্কে তার মনে একটি নেতিবাচক মনোভাবের জন্ম হতে পারে, যা ভবিষ্যত পাঠকদের বাংলা বই বিমুখ করে তুলতে পারে।

সিলেটটুডে২৪: বই প্রকাশে আপনি কী ধরণের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলেন? কিভাবে উত্তরণ ঘটল?
জুলিয়ান সিদ্দিকী: বই প্রকাশের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই যে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছি তা থেকে উত্তরণ ঘটেছে বলবার সময় এখনো আসেনি। আগের বইগুলো সবই নিজের খরচে প্রকাশ করতে হয়েছে। কেবল এবারই প্রথমবারের মতো অনুপ্রাণন প্রকাশন এগিয়ে এসেছে এবং তাদের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকাশ করেছে আমার বই।

সিলেটটুডে২৪:  প্রকাশিত, প্রকাশিতব্য বই আর প্রকাশক(দের) সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন 
জুলিয়ান সিদ্দিকী: প্রতি বছর অনেক অনেক বই প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু নতুন এমন অনেক লেখক আছেন যাদের একটি দুটির বেশি বই বিক্রি হয় না। যেগুলোর মাঝে অনেক ভালো ভালো বইও থেকে যায়। সে সব বই নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বা আলোচনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। লেখকদের যাতে মানসম্পন্ন বই আর লেখার দিকে আগ্রহ বাড়ে সে বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা যেতে পারে। মেলায় অবিক্রিত বইগুলোর প্রকাশনা বাবদ যে খরচ হয়েছে ন্যূনতম সেই খরচটাও যেন উঠে আসে সে লক্ষ্যে ক্রেতা-পাঠকের সংখ্যা কীভাবে আরো বাড়তে পারে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে সম্মিলিতভাবে। 
প্রকাশকদের অনেকেই লেখকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই ছেপে দিলেও বইয়ের আর লেখার মান নিয়ে ভাবেন না। কারো কারো কাছে টাকাটাই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। নতুন কোনো লেখক নিজের খরচে বই ছাপাতে গেলে প্রকাশক যেন নিজে খানিকটা দায়িত্ব নিয়ে মান সম্পন্ন বই প্রকাশে সে লেখককে সাহায্য করেন। 

সিলেটটুডে২৪: সিলেটটুডে২৪.কম’র পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
জুলিয়ান সিদ্দিকী:  আপনাকেও ধন্যবাদ। সে সঙ্গে সিলেটটুডে২৪.কম কর্তৃপক্ষকেও জানাই ধন্যবাদ।



গ্রন্থনা: ক.য়া/ জানুয়ারি ১৫, ২০১৫

আপনার মন্তব্য