একাকীত্ব এবং কোমা নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট গল্প

 প্রকাশিত: ২০১৮-০৮-১০ ২৩:৩৬:২৫

জহিরুল হক মজুমদার:

অন্তু:
জানো আমার হাইপার ভিটামিনোসিস হয়েছিল। ডাক্তার বের করলেন আমার ভিটামিন ডি কমে গেছে। তারপর টেস্টে তা পাওয়াও গেল। আমি আর দ্বিতীয়বার চেক করিনি।ডাক্তার সেই হিশেবে ডোজ দিয়েছেন। কিন্তু কেন ভিটামিন ডি রক্তে বেড়ে গেল?

সাধারণত দুই জায়গায় পরীক্ষা করা আমার অভ্যাস।ছাত্রজীবনের মত পয়সার টানাটানিতো আর নেই। গোনে গোনে চা খাওয়ার ব্যাপারও নেই। এখন শিক্ষকতা করি।কিছু পয়সা হয়েছে।কিন্তু ডাক্তারের কথার সাথে টেস্ট মিলে যাওয়াতে আমি আর দ্বিতীয় কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাই নি। রোগ সঠিকভাবে ধরা পড়ারও একটা উৎফুল্লতা আছে। মনে হয়, যাক, এবার চিকিৎসাটা হবে। শরীর ভাল হয়ে যাবে। এমন কি ক্যান্সার রোগীরাও উৎফুল্ল হয়। যাদের আয়ু থাকে সাধারণত তিন থেকে চার বছর।

এমনটা আমি সাগরকে দেখেছি। আমার সহকর্মী।ওর ফুসফুসে ক্যান্সার। ওর মামা, ঢাকা মেডিক্যাল এর মেডিসিন এর অধ্যাপক যখন বললেন, এই তোর তো লাঙ ক্যান্সার, তখন সাগর খুব উৎফুল্ল হয়েছিল। যাক এবার রোগ ধরা পড়ল। অনেক দিন ধরে কাশিতে কষ্ট পাচ্ছিল। আর আগের ডাক্তার এলার্জিক রিঅ্যাকশান   ভেবে অনেক কিছু করছিলেন।  

ওই গল্পটাতো তোমাকে বলাই হয়নি। অবশ্য এর পর তোমার সাথে আর কখনো কথাই ঠিক মত হয়নি।তোমার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তুমি বন্ধুত্বটা রাখতে চেয়েছিলে। কিন্তু আমার মত গেঁয়ো ছেলের পক্ষে প্রত্যাখ্যান উত্তর বন্ধুত্ব রাখা সম্ভব ছিলনা।

তখন কি থার্ড ইয়ার? হ্যাঁ থার্ড ইয়ারই হবে। কারণ তখনও অনার্স এ ফার্স্ট ক্লাশ পেয়েছি এই ভাবটা আমার মধ্যে আসেনি।পাবলিক লাইব্রেরীর সিঁড়িতে বসে আছি। আর ভাবছি একটা টাকা হলে নান্নু মিয়ার ক্যান্টিনে এক কাপ চা খাওয়া যেত।পকেট একেবারে ফাঁকা। আর তখন তোমাকে দেখলাম সিল্ক এর শাড়ি পরে বসে আছ তোমার প্রেমিক এর সাথে।আমি তুমি না দেখ মত করে উঠে আসলাম।

সেই একটি টাকার হাহাকারের দিন আর নেই। তবুও আমি টেস্টটা দ্বিতীয়বার করাই নি।ডাক্তারের চেহারা ছিল সন্তের মত। আর তিনি ছিলেন আন্তরিক।এছাড়া তাঁর মুখের কথা যখন টেস্ট এর সাথে মিলে যায় তখন আর করার দরকার নেই এমনটিই ভেবেছি।এখন বুঝি বড় কর্পোরেট হসপিটাল হলেও ল্যাব টেস্টে অনেক দুর্বল। ডাক্তারের কোন দোষ নেই।প্রটোকল মেনেই চিকিৎসা দিয়েছেন।

বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছি। চারটা ডোজ এর প্ল্যান করেছিলেন ডাক্তার। কিন্তু আমি তিনটা ডোজ নেওয়ার পর বুঝতে পারি কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। দ্রুত ডাক্তারের কাছে দৌড়ে যাই। ডাক্তার যা বুঝার বুঝে নিলেন। বললেন আবার ভিটামিন ডি চেক করুন। কোন গোলমাল হলে সেখান থেকে হতে পারে।

চেক করার পর দেখা গেল ভিটামিন ডি টক্সিসিটি হয়েছে। জানো আরও বেশী ভিটামিন বেড়ে গেলে আমি কোমায় চলে যেতে পারতাম। আমি একা মানুষ। একা থাকি।কোমায় চলে গেলে কে টের পেত?আরও কত না জানি ক্ষতি এই টক্সিসিটি রেখে যাবে কে জানে!অনেক লম্বা মেসেজ লিখলাম।ভাল থেকো।
 
 
অবন্তী:
প্রিয় বন্ধু, তুমি কখনো তোমার শরীরের যত্ন নাওনি।ছাত্রজীবনে কয়েকবার অসুস্থ হয়েছ।আমার বেড়ে উঠার পরিবেশ আর জীবনের আকাঙ্ক্ষা অন্যরকম ছিল। তাই তোমাকে নিয়ে কোন আবেগী স্থায়ী সম্পর্কের কথা ভাবিনি। জীবনের এতগুলো অমিলকে নিয়ে চলার ক্ষেত্রে দ্বিধা ছিল অনেক। তোমার প্রতি কোন অবহেলা কিংবা ঘৃণা ছিলোনা।তুমি ভেবে দেখ বন্ধু হিশেবে আমার চেয়ে তোমাকে কে বেশী ভালবেসেছে!

তুমি একা থেকে গেল কেন? দু’জন মানুষের এক সাথে থাকার একটা অন্যরকম আনন্দ আছে।পরস্পরকে আবিষ্কারের আনন্দ।তুমি বলেছ একাকীত্ব আর কোমার কথা। কিন্তু তুমি যখন একা থাক, চারপাশে আর কেউ থাকেনা, সেটাও কি একধরণের কোমা অবস্থা নয়? যেখানে জাগ্রত একটা অবস্থার মধ্যে একটা সত্তা তার নিজের সাথেই কথা বলে, নিজের অজান্তে।

একাকীত্বের কোমা থেকে বের হয়ে আস। তুমি আমাকে অসাধারণ ভেবেছ। আসলে আমিও সাধারণ। আবার একটি সাধারণ মেয়েকে বিয়ে করে দেখ, দেখবে সে কত অসাধারণ। মানুষের সাধারণত্ব আর অসাধারণত্বের মীমাংসা তত্ত্বে হয়না, শুধু ভালবাসার মাধ্যমেই হয়। ভাল থেকো।

আপনার মন্তব্য