ফিরে আসুক দুজনের বসন্ত

 প্রকাশিত: ২০১৯-০২-১৩ ১১:২৯:০৫

ফাইল ছবি

শিমুল তরফদার:

কী উত্তর দেবে তা নিয়ে সারারাত অস্থিরতা কাজ করছে রাহুলের। সারারাত বিন্দুমাত্র ঘুম আসেনি তার, যে বিষয় নিয়ে সব সময় এড়িয়ে চলেছে তা আজ মাথার ভেতর ব্যথা হিসেবে কাজ করছে।

লাবণ্য- রাহুলের কলেজের সহপাঠী। মাত্র ২ মাসের পরিচয় তার সাথে। এ কয়েকদিন একসাথে খুব বেশি সময় কাটিয়েছে তারা। একসাথে চা খেয়েছে, ফুচকা খেয়েছে, গান গেয়েছে, ঘুরে বেড়িয়েছে, এমনকি ক্লাসের কঠিন অংকগুলো সমাধান করেছে একসাথে। এর আগে কোন মেয়ের সাথে এত ঘনিষ্ঠ হওয়া ত দূরের কথা, ভাল করে কথাই বলতো না সে। তবে এই মেয়েকে নিয়ে খুব অস্থিরতা কাজ করছে রাহুলের। রাহুলের মনে প্রেম জাগেনি, বন্ধুত্ব জেগেছিল। কিন্তু কে জানত এ কয়েক দিনেই রাহুলকে ভালবেসে ফেলবে লাবণ্য। গতকাল হঠাত করেই লাবণ্য বলে উঠলো ভালবাসি!

রাহুল বললো
- কী?
- ভালবাসি, ভালবাসি
- কী ভালবাস?
- তোমাকে
- হিহিহিহি
- হাসছ কেন রাহুল
- তোমার কথা শুনে
- আমি কিন্তু সিরিয়াস, আমি সত্যি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি রাহুল। বল তুমি আমাকে ভালবাস কিনা?
- লাবণ্য আমি তোমাকে বন্ধু মনে করি। কথাটা বলে একটা মিষ্টি হাসি দিলো রাহুল

কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলেনি। হঠাৎ করে লাবণ্য উঠে চলে গেল, যাবার আগে রাহুলের হাতে একটি ছোট প্যাকেট দিয়ে গেল। বললো- বাসায় নিয়ে খুলে দেখবে আমি যাই।
রাহুল কিছু বললো না। শুধু চেয়ে রইলো লাবণ্যের চলে যাওয়ার দিকে। বাসায় ফিরে প্যাকেটটা খুললো সে, ভেতরে একটা চিঠি, একটা গোলাপ, আর একটা নীল পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবিটা পেয়ে কিছুটা অবাক হলো সে, রাহুল চিঠি পড়তে শুরু করলো-
"রাহুল,
আগামীকাল পহেলা ফাল্গুন বসন্তের প্রথম দিন। কাল থেকে আমাদের নতুন পথ চলা শুরু হবে। রাহুল, আমি তোমার হাত ধরে সারাজীবন থাকতে চাই। আমি তুমিময় হতে চাই, বসন্তের প্রথম দিনই আমরা পালন করবো ভালবাসা দিবস। তুমি অবশ্যই আসবে কাল সকাল ৯টায় আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।"

চিঠি পড়ে বেশ কিছুক্ষণ সে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে রইলো। চলে গেল ভাবনার দেশে, হঠাৎ করে ছোট বোনের ডাকে ভাবনা থেকে বাস্তবে এলো সে।

আজ পহেলা ফাল্গুন। সকাল বেলা লাবণ্যের দেয়া নীল পাঞ্জাবি পরে বেড়িয়ে গেল সে। রাস্তায় ফুলের দোকান থেকে অনেকগুলো ফুল কিনলো আজ। তাদের পছন্দের জায়গায় কাছে এসে লাবণ্যকে দেখতে পেল। লাবণ্যকে চেনাই যাচ্ছে না, বাসন্তী রঙয়ের শাড়ি, মাথায় ফুলের খোপা বেঁধে রেখেছে, সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগলো তাকে। গতরাতেও যেখানে রাহুল ভেবেছিল প্রেম করবে না, সেই ভাবনা ভুলে আজ খুব বেশি ভালবাসতে ইচ্ছে করলো।

লাবণ্যর কাছে গিয়ে হাতের ফুলগুলো তুলে দিল লাবণ্যর হাতে। একটা মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো দুজনের মুখেই।
একটা সুন্দর আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে দুজন হেঁটে যাচ্ছে। লাবণ্যর কণ্ঠে রবী ঠাকুরের সেই গান, আহা আজি এ বসন্তে........

লাবণ্যের হাত ধরে হেঁটে হেঁটে মুগ্ধ হয়ে সেই গানের সুরে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে রাহুল। মনে মনে ভাবছে, এভাবেই দুজনের বসন্ত ফিরে আসুক বারবার।

আপনার মন্তব্য