জীবনানন্দ দাশ পুরষ্কার: প্রথম আলোর বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ!

জীবনানন্দ দাশ পুরষ্কার চালু আছে সংবাদটি প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ জানত না এমন না, কারণ তারা নিজেরাই এ পুরষ্কার প্রদানের খবর তাদের পত্রিকায়ও প্রকাশ করেছিল। তবু কেন তারা দখলদারিতে নেমেছে এই প্রশ্ন ঘুরছে সবার মাঝে।

 প্রকাশিত: ২০১৫-০১-২৭ ২২:৫৮:৫৯

 আপডেট: ২০১৫-০১-২৮ ০০:৩৩:২৮

হাসান আজিজুল হক পুরষ্কারসূচক মানপত্র তুলে দিচ্ছেন কথাসাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম ও কবি খালেদ হোসাইনের হাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রথম আলো পত্রিকা প্রবর্তন করেছে জীবনানন্দ দাশ সাহিত্য পুরষ্কার। কবিতার ক্যাটাগরিতে এবারের পুরষ্কার পেয়েছেন সাইয়েদ জামিল। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে তিনি কবি এবং প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো পাণ্ডুলিপি দেখে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তাকে পুরষ্কারের জন্যে নির্বাচিত করেছেন। নগদ অর্থের পাশাপাশি আলোচ্য কবি’র বই প্রকাশ করবে প্রথমা প্রকাশন।

ক্লিন্টন বি সিলি ও প্রথমা'র অর্থায়নে প্রথম আলোর প্রবর্তন করেছে  জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার। এবার প্রথম আলোর উদ্যোগে এই পুরষ্কার দেওয়া হবে। কবি জীবনানন্দ দাশের নামে এই পুরষ্কার প্রবর্তনের কথা প্রকাশ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই পত্রিকা কর্তৃপক্ষের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন পাওয়া উচিত ছিল কিন্তু তা না হয়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। কারণ এই পুরষ্কার আগে থেকেই চালু আছে এবং বিভাগীয় শহর বরিশালের কিছু তরুণ সাহিত্যপ্রেমিদের উদ্যোগে ২০০৭ সাল থেকে কথাসাহিত্য ও গদ্যসাহিত্য এই দুই বিভাগের জন্যে দেওয়া হচ্ছে এই পুরষ্কার। বরিশালের সে পুরষ্কার প্রদান এখনও বন্ধ হয়নি এবং আয়োজকদের মাধ্যমে জানা গেছে তারা এখনও আছেন এই কর্মসূচিতে এবং প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ এই পুরষ্কার প্রবর্তনের আগে তাদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগও করেনি।

ফেসবুকে প্রকাশিত কবি সাইয়েদ জামিলের কবিতা এবং তার পাকিস্তান প্রেমের নমুনার চাইতেও বড় ব্যাপার হয়ে ওঠেছে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের চৌর্যবৃত্তিক মানসিকতার, কারণ জীবনানন্দের নামে ২০০৭ সাল থেকে পুরষ্কার প্রদান করে আসছে বরিশাল থেকে প্রকাশিত কয়েকটি ছোট কাগজ ও বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত একটা সাহিত্য অনুরাগিগোষ্ঠী। এই পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে হাসান আজিজুল হকের মতো প্রথিতযশা সাহিত্যিক উপস্থিত থেকে তরুণ সাহিত্যকর্মিদের সাহিত্য নিবেদনকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এছাড়াও ২০১৪ সালে পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরীও।

জীবনানন্দ দাশ’র শহর বরিশাল থেকে জীবনানন্দ দাশ সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ২০০৭ সাল থেকে। পুরস্কারটি ''ধানসিড়ি সাহিত্য সৈকত, ছোটকাগজ দূর্বা ও আড্ডা ধানসিড়ি'' নামের তিনটি সংগঠনের যৌথ প্রচেষ্টার ফসল। ২০০৭ সালে প্রবর্তিত এ পুরষ্কারের সাথে ২০১৪ সালে যুক্ত হয় আর একটি পরিবার- রাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। ২০০৭, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের প্রতি বছর দুজন করে সাহিত্যিককে (গদ্য ও কাব্য) এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের পুরষ্কারপ্রাপ্তদের হাতে সীমিত সামর্থের মধ্যে থেকেও আয়োজকরা তুলে দিয়েছিল মানপত্র/ক্রেস্টের পাশাপাশি নগদ দশ হাজার টাকাও।

আট বছর হয়ে গেলেও আয়োজকেরা মাত্র চার বার দিতে পেরেছিলেন এই পুরষ্কার। প্রতিবারই তারা কথাসাহিত্য ও গদ্যসাহিত্যের জন্যে দুজন লেখককে সম্মানিত করেছিলেন। ২০০৭ সালের পুরস্কারপ্রাপ্তরা ছিলেন কাব্যসাহিত্যে  আসাদ মান্নান এবং  গদ্যসাহিত্যে সালমা বাণী। ২০০৮ সালের পুরস্কারপ্রাপ্তরা  ছিলেন কাব্যসাহিত্যে কামাল চৌধুরী ও গদ্যসাহিত্যে সুশান্ত মজুমদার। ২০১৩ সালের পুরস্কারপ্রাপ্তরা ছিলেন কাব্যসাহিত্যে খোন্দকার আশরাফ হোসেন ও গদ্যসাহিত্যে শান্তনু কায়সার এবং ২০১৪ সালের পুরস্কারপ্রাপ্তরা ছিলেন কাব্যসাহিত্যে খালেদ হোসাইন ও গদ্যসাহিত্যে ইমতিয়ার শামীম।

আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, জীবনানন্দ পুরষ্কার (বরিশাল) প্রতিবছর জীবনানন্দের জন্মমাস ফেব্রুয়ারিতে পুরষ্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিকদের নাম ঘোষণা করে থাকে, এবং জীবনানন্দের মহাপ্রয়াণের মাস অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরষ্কারটি প্রদান করা হয়ে থাকে। উল্লেখিত এ দুই মাসে পুরষ্কারটি ঘোষণা ও প্রদান জীবনানন্দের সাথে তাদের আত্মিক সম্পর্ককে প্রকাশ করে থাকে, সেই সাথে পুরষ্কারটি তার নামের সার্থকতাও বহন করে। কিন্তু এবার প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ জানুয়ারি মাসেই তাদের পুরষ্কার প্রদানের ঘোষণা দিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।

প্রথম আলো প্রবর্তিত জীবনানন্দ দাশ সাহিত্য পুরষ্কার বাংলাদেশে প্রথম প্রবর্তন নয়। রীতিমত জোর করেই এই পুরষ্কার প্রদানের বিষয়টি ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে সাহিত্য সংশ্লিষ্টজনদের ধারণা।



জীবন্দানন্দ দাশ পুরষ্কার চালু আছে সংবাদটি প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ জানত না এমন না, কারণ তারা নিজেরাই এ পুরষ্কার প্রদানের খবর তাদের পত্রিকায়ও প্রকাশ করেছিল। তবু কেন তারা দখলদারিতে নেমেছে এই প্রশ্ন ঘুরছে সবার মাঝে।





আপনার মন্তব্য