কবির য়াহমদ

২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ২২:৫৩

যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে ট্রাইব্যুনাল-২

৫ বছরে ১৪ রায়

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এর দুই বছর পর স্থাপিত হয় ট্রাইব্যুনাল-২। মামলার প্রক্রিয়ার পাঁচ বছর হলেও রায়ের ক্ষেত্রে প্রথম রায় দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের তিন বছরের মাথায় ২০১৩ সালে ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে। দুই বছর পর যাত্রা শুরু করলেও মামলার রায়ের ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের শেষ পর্যন্ত এগিয়ে আছে ট্রাইব্যুনাল-২। ট্রাইব্যুনাল-১ এর ছয়টি রায়ের বিপরিতে ট্রাইব্যুনাল- ২ থেকে রায় আসে আটটি রায়। আইসিটি ট্রাইব্যুনাল থেকে আসা ১৪ টি রায়ের মধ্যে দৃশ্যমানভাবে রায় কার্যকরের সংখ্যা ১ হলেও রাজাকার গোলাম আযম এবং রাজাকার আবদুল আলীম শাস্তি ভোগ অবস্থায় মারা যায়, সেই হিসেবে কার্যকর হওয়া রায়ের সংখ্যা ৩!

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে আসা রায়গুলোর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামি নেতা দেইল্ল্যা রাজাকার দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর ফাঁসির রায় হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে উচ্চ আদালতের আপীলের বিভক্ত রায়ে রাজাকার সাইদির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জামায়াতে ইসলামির সাবেক আমির যুদ্ধাপরাধিদের মাস্টার মাইণ্ড একাত্তরের গণহত্যার সাইবোর্ড গোলাম আযমকে বয়স বিবেচনায় ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৫ জুলাই ২০১৩। দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গোলাম আযম মারা যায় ২৩ অক্টোবর ২০১৪ সালে। বিএনপির স্থায়ি কমিটির সদস্য ও রাজাকার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনাল থেকে ১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে। জামায়াতে ইসলামির আমির মতিউর রহমান নিজামী ওরফে মইত্যা রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল ২৯ অক্টোবর ২০১৪তে। পলাতক বিএনপির স্থানীয় নেতা জাহিদ হোসেন খোকনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আইসিটি ট্রাইব্যুনাল ১৩ নভেম্বর ২০১৪। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামীলীগের বহিস্কৃত ও জামায়াত নেতা মোবারক হোসেনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল ২৪ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে।

 

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে আসা রায়গুলোর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামির সাবেক রুকন মাওলানা আবুল কালাম আযাদ মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয় ২১ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে। এটা যুদ্ধাপরাধের মামলার প্রথম রায়। বাচ্চু রাজাকার পলাতক থাকায় তার শাস্তি কার্যকর হয়নি। মিরপুরের কসাই খ্যাত জামায়াতে ইসলামি নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে। মামলার রায়ের পর কাদের মোল্লা আদালতে ভি চিহ্ন প্রদর্শন করে ফলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সারাদেশ। এরপর উচ্চ আদালতের আপীলের রায়ে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আপীল বিভাগ। দণ্ড কার্যকর হয় ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসের যুদ্ধাপরাধিদের বিরুদ্ধে প্রথম কার্যকর হওয়া কোন শাস্তি। জামায়াতে ইসলামির নেতা কামারুজ্জামান মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল ৯ মে ২০১৩। উচ্চ আদালতের আপীলের রায়ে এই রায় বহাল থাকে। জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহমান মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল ১৭ জুলাই ২০১৩। জিয়াউর রহমানের মন্ত্রি ও বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল ৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে। বুদ্ধিজীবি হত্যা মামলার আসামী পলাতক আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরীর মঈনুদ্দিনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল ৩ নভেম্বর ২০১৩তে। আসামীদ্বয় পলাতক। জামায়াতে ইসলামির নেতা রাজাকার মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল ২ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ একাত্তরের মুসলিম লীগ নেতা, হবিগঞ্জ বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং জাতীয় পার্টি সরকারের সাবেক কৃষিপ্রতিমন্ত্রি রাজাকার সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মানবতাবিরোধি অপরাধের দায়ের মৃত্যদণ্ডের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত