১৯ অক্টোবর, ২০১৫ ১৯:২৯
ব্লগার হত্যা এবং দেশের বেশ কয়েকজন নাগরিককে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঠানো বার্তার পর এবার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে ইমেইলে গণমাধ্যমের জন্যে ছয় দফা ‘নির্দেশনা’ পাঠানো হয়েছে, এবং এ নির্দেশনা গণমাধ্যমের জন্যে আইন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সোমবার (১৯ অক্টোবর) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের ঠিকানায় প্রেরিত এক ই-মেইলে ‘জেহাদবিরোধী’ সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে এতে বলা হয়েছে, “আমাদের নির্দেশনা আজ থেকে আপনাদের জন্য আইন। ইসলামের পথে না চললে আপনাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। উঁচু উঁচু ভবন সব ধুলায় লুটাবে, আপনাদের শির লুটাবে ইসলামের সেনানিদের পদতলে।” খবর সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম।
একই মেইল দেশের শীর্ষস্থানীয় অন্যান্য গণমাধ্যম কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে বলে খবরে উল্লেখ।
নারীদের ঘরের বাইরে চাকরি করা ইসলামী শরীয়াহ মতে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ বলে দাবি করা হয়েছে ওই বার্তায়। বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের নারী কর্মীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।
বার্তার উপরে ঠিকানা লেখা হয়েছে আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, প্রধান কার্যালয়, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ। শেষে প্রেরকের জায়গায় লেখা হয়েছে আবদুল্লাহ বিন সালিম, প্রচার সমন্বয়ক, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামবিরোধী প্রচারণার অভিযোগ তুলে কয়েকজন ব্লগারের নাম উল্লেখ করে তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।
গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে এতে বলা হয়, “আপনারাও যদি নাস্তিক্যবাদীর সহায়তাকারী হন তবে কাউকে ছাড়া হবে না। আপনাদের বাক স্বাধীনতা যদি আমাদের বেঁধে দেয়া সীমা না মানে তবে আমাদের ক্রোধ প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রত্যেক সংবাদ মাধ্যম যেন প্রস্তুত থাকে।”
“যেহেতু নারীদের ঘরের বাইরে চাকুরি করা, বেপর্দা হয়ে ঘোরাঘুরি করা ইসলামি শরীয়াহ মতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাই যারা এদের চাকুরি দিচ্ছেন, করাচ্ছেন, তারাও সমানভাবে দোষী।”
“সকল সংবাদমাধ্যমের প্রতি আহ্বান করছি নারীদের চাকুরি থেকে অব্যাহতি দিন,” বলা হয়েছে এতে।
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো-
ইসলামবিরোধী, নাস্তিক্যবাদী শক্তির কোনো প্রকার প্রচারণায় শামিল হওয়া যাবে না।
ইসলামের সেনানিদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার অপপ্রচার চালানো যাবে না। তাদের যে কোনো জেহাদি কর্মকাণ্ডের সমালোচনা সম্পূর্নরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল।
পত্রিকার বিজ্ঞাপনে নারী মডেলের ছবি ব্যবহার করা যাবে না। কোনো নারীর বেপর্দা ছবি পত্রিকায় ছাপানো যাবে না।
বিনোদন পাতা, নৃত্য, গীত, নাটক, সিনেমা এমন যে কোনো ইসলামী শরীয়তবিরোধী যা সমাজে ‘ফিতনা’ ছড়ায়, যুবক-যুবতীদের মনে যৌনতা উস্কে দেয় তা প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে হবে।
যে কোনো নাস্তিকের মৃত্যুর পরে পত্রিকায় কোনো প্রকারের জেহাদবিরোধী সংবাদ করা যাবে না। করলে সে পত্রিকায় চাকুরিরত এবং মালিক পক্ষকে নাস্তিক, নাস্তিক্যবাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে গণ্য করে সমূলে উপড়ে ফেলা হবে।
চিঠির শেষ অংশে বলা হয়, “আমাদের লক্ষ সেনানী প্রস্তুত হচ্ছে ইসলামের পবিত্র এই ভূমির আনাচে কানাচে। আমাদের প্রস্তুতি শেষের প্রায় চূড়ান্ত। যে কোনো দিন খেলাফত কায়েমের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বো আমরা।”
বিদেশে অবস্থানরত নয়জন এবং দেশে বসবাসরত ছয়জন ব্লগারের নাম তুলে দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, “যারা বিদেশে আছেন তাদের দেশে ফেরার সাথে সাথে আর যারা দেশের অভ্যন্তরে গা ঢাকা দিয়ে আছেন তাদের সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে হত্যা করা হবে।”
নির্দিষ্ট কোনো ‘হত্যা তালিকা’ বা হিট লিস্ট নেই জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, “ফেইসবুক, ব্লগসহ যে কোনো মাধ্যমে যে আল্লাহ, নবী, রাসুল, সাহাবি, ওলামায়ে কেরাম, মাদ্রাসার শিক্ষক, ধর্মপ্রাণ মুসলমান, উম্মুল মোমেনিনদের চরিত্র দিয়ে প্রশ্ন তুলবে, বাজে কথা বলবে তার আজরাইল হিসেবে রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রেরণ করবেন। সুযোগ পাওয়া মাত্র ইসলামের বীর সেনানিরা তাদের কতল করবে।
“এই মর্মে হুঁশিয়ারি প্রদান করা যাচ্ছে যে, দেশ কিংবা বিদেশে পালিয়ে থাকা নাস্তিকদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে কেউ যেন নাস্তিকতার দিকে ঝুঁকে না পড়েন। নইলে পরিণতি হবে নিলয় নীল কিংবা ওয়াশিকুর বাবু, অভিজিৎ রায়ের মত। একটি নাস্তিককেও বেঁচে থাকতে দেওয়া হবে না। এদের হত্যা করা আল্লাহ রাসুলের বিধান মতে ওয়াজিব।”
আপনার মন্তব্য