সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:৫৪

স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়েতে বাঁধা দেওয়ায় গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

যৌতুকের দাবি ও স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়েতে বাঁধা দেওয়ায় সুপারিগাছের সঙ্গে বেঁধে এক গৃহবধূকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার লালমনিরহাট সদর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ নির্যাতনকারী শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের চরখাটামারী গ্রামের মৃত আবদুল বারিকের মেয়ে আমেনা বেগম বাতাসীর (৩০) সঙ্গে প্রায় পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয় একই গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে আবদুল আজিজ মিয়ার (৩৫)। বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিভিন্ন সময় যৌতুক বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে আসছিল। কিন্তু বাতাসী তার বাবার বাড়ি থেকে ওই টাকা এনে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের খড়গ।

এরই মধ্যে বাতাসীর কোলজুড়ে আসে এক কন্যাসন্তান। তাতেও বাদ সাধে যৌতুকলোভী ওই পরিবারটি। কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ায় তার ওপর যেন মানসিক নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

আবারও যৌতুকলোভী শ্বশুর-শাশুড়ি টাকার জন্য চাপ দেন। এক পর্যায়ে বাতাসীকে মারধর করে তার কোলের সন্তানকে কেড়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তার পরও স্বামীর বাড়ি ছেড়ে যাননি বাতাসী। এরই মধ্যে গত শনিবার সকালে তার স্বামীকে অন্যত্র বিয়ে দিতে মেয়ে দেখতে পাঠান শ্বশুর-শাশুড়ি। বাতাসী এর প্রতিবাদ করলে ওই দিন দুপুরে শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে বসতবাড়ির পাশে সুপারি বাগানে নিয়ে যান। সেখানে তার এক হাত ও এক পা সুপারি গাছে বেঁধে নির্যাতন শুরু করেন।

এ ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকার লোকজন বাতাসীকে উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেই সঙ্গে ওই গৃহবধূর শ্বশুর আমির হোসেন ও শাশুড়ি আজিরন বেগমকে (৫৫) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী লালমনিরহাট আদর্শ ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাইদুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি লোকমুখে শুনে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মোবাইলে সেই দৃশ্য ধারণ করেন। এরপর তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশকে মোবাইল ফোনে জানান এবং স্থানীয়দের সহায়তায় গৃহবধূর শ্বশুর-শাশুড়িকে আটকে রাখেন। পরে পুলিশ এসে গৃহবধূকে উদ্ধার করে তার শ্বশুর-শাশুড়িকে থানায় নিয়ে যায়।

কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরকার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা।

এ ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা করেছেন বাতাসী। আটককৃতদের এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রোববার জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

লালমনিরহাট সদর থানার ওসি এএইচএম মাহফুজার রহমান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দু'জনকে গ্রেফতার করে। তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত