সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ২৩:২৭

শহীদের সংখ্যা সম্পর্কিত খালেদার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলো বিএনপি

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিতর্কিত মন্তব্যের এক সপ্তাহ পর এক সংবাদ বিবৃতিতে বিএনপি দাবি করে বলেছে খালেদা জিয়ার প্রদত্ত ভাষণের একটি অংশের বিকৃত ব্যাখ্যা করে ক্ষমতাসীন মহল যে অপপ্রচার ও বিভিন্ন মতলবি কার্যক্রম শুরু করেছে।

দলটি দাবি করে বলছে, “ওই ভাষণে দেশনেত্রী (খালেদা) স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান শহীদদের সংখ্যা নিয়ে যে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক রয়েছে, রেফারেন্স হিসেবে সে কথার উল্লেখ করেছিলেন।”

এর মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া শহীদদের অসম্মান নয়, বরং তাদের পরিচিতি ও প্রকৃত সংখ্যা বের করার প্রয়োজনীয়তার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন বলে দাবি করেন ফখরুল।

“তাদেরকে যাতে উপযুক্ত সন্মান প্রদর্শন করা যায়। এই কথা বলার মাধ্যমে শহীদদের প্রতি কেনো ধরনের অসম্মান প্রদর্শন করার প্রশ্নই আসে না,” বলেন তিনি।

খালেদা জিয়ার বক্তব্যের ‘অপব্যাখ্যা’ করে ক্ষমতাসীনরা অপরাজনীতি করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

“দেশনেত্রীর প্রদত্ত ভাষণের একটি অংশ বিকৃত ব্যাখ্যা করে ক্ষমতাসীন মহল অপপ্রচার ও বিভিন্ন মতলবী কার্যক্রম শুরু করেছে। যারা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করে নাই, বরং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করেছে, যারা প্রকৃত শহীদদের তালিকা ও পরিচিত সংরক্ষণের মাধ্যমে তাদের সম্মান্বিত করতে চায় না, তারাই দেশনেত্রীর বক্তব্যকে বিকৃত ব্যাখ্যা করে অপরাজনীতিতে মেতে উঠেছে।”

ক্ষমতাসীনদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে বিশ্বাসী দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, “মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম প্রতিষ্ঠিত বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে বিশ্বাসী এদেশের সর্ববৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল। রণাঙ্গনের অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এই দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

“মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশনেত্রী (খালেদা) নিজেও তার শিশু সন্তানদের নিয়ে দুঃসহ বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই- মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান দেওয়ার ব্যাপারটি এই দলকে কারও কাছ থেকে শিখতে হবে না।”

ফখরুল বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করার উদ্দেশ্যে প্রথম মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

“তিনিই (জিয়াউর রহমান) মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করেছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহের সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করেন। তার নির্দেশে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকা রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোর নামকরণ করেছিলেন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নামে।”

ওই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বেগম জিয়াকে। মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল ধারণা করা হচ্ছিল তাতে ওই বিতর্কিত বক্তব্যের বিষয়টিই তুলে ধরা হবে। তবে ওই সংবাদ সম্মেলনে তাকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তিনি মৃদু হেসে এড়িয়ে যান। বলেন, ‘আজ নয়। অন্যদিন বলবো।’

উল্লেখ্য, গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় খালেদা বলেন, “আজকে বলা হয়, এতো লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানারকম তথ্য আছে।”

তার এই বক্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। বক্তব্য প্রত্যাহার করে খালেদাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এক আইনজীবী উকিল নোটিস পাঠিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে বলেন এবং খালেদার নামে আদালতে দুটি মামলাও করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত