নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ০১:৩০

‘গরু জবাই নিষিদ্ধের দাবি করা হয়নি, মিডিয়ায় ভুয়া খবর’

যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বাংলাদেশে গরু জবাই নিষিদ্ধের দাবি করেছে এমন সংবাদের প্রতিবাদে উত্তাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। এ সংবাদের প্রতিবাদ করেছেন অনেকেই, এর মধ্যে আছেন ঐক্য পরিষদের নেতারাও। এমন সংবাদকে ভূয়া বলে দাবি করেছেন তারা।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ‌'বাংলাদেশে গরু জবাই বন্ধের দাবি নিউ ইয়র্ক হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের'- এমন শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করে। এ নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। তবে নিউয়র্কে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজকরা জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত কোন দাবি জানানো হয় নি ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে।

যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতা শিতাংশু গুহ এ সংবাদটি মিথ্যা দাবি করে বলেন, "বাংলাদেশে গরু জবাই বন্ধের দাবী যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের"-শীর্ষক একটি সংবাদ আমরা মিডিয়ায় দেখেছি। বাংলাদেশ ও প্রবাস থেকে আমরা যথেষ্ট ফোনকল পাচ্ছি। সামাজিক মিডিয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুমোদিত ঐক্য পরিষদ কমিটির প্রেস-কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলাম। এ ধরনের বক্তব্য ঐক্য পরিষদ দেয়নি। এটা যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বক্তব্য নয়।'

তিনি আরও বলেন, ‌এটা প্রবাসী হিন্দুদেরও কথা নয়। আমরা মনে করি বাংলাদেশের হিন্দুদের বক্তব্যও ওটা নয়। বাংলাদেশের কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা সংগঠন এমন কথা বলতে পারেন না।'

এ ধরনের অপপ্রচারের প্রতিবাদে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এমন জানিয়ে শিতাংশু গুহ ফেসবুকে লিখেন, ‌'ইতিমধ্যে আমার সাথে ঐক্য পরিষদের সভাপতি নবেন্দু দত্ত; নয়ন বড়ুয়া এবং সাধারণ সম্পাদক স্বপন দাস-সহ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান এটর্নি অশোক কর্মকার; সদস্য সচিব চন্দন সেনগুপ্ত, যুগ্ম-সম্পাদক প্রিয়তোষ দে, ও অন্যান্য নেতাদের কথা হয়েছে, সবাই একবাক্যে আমার সাথে একমত হয়েছেন। ঐক্য পরিষদ এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য ও কর্মসূচি দিচ্ছে।'

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেই দৈনিক মানবজমিন ও অন্যান্য কিছু অনলাইন মিডিয়ার লিঙ্ক শেয়ার করে এধরনের দাবির সমালোচনা করছেন।

প্রবাসী সাহিত্যিক কুলদা রায় ব্যক্তিগতভাবে ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেসবুকে এ নিয়ে লিখেন,  বাংলাদেশে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশে গরু জবাই নিষিদ্ধ করার দাবী করেছে এক সংবাদ সম্মেলনে।

তিনি আরও লিখেন, নিউ ইয়র্কে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দুটি গ্রুপ আছে। একটির নেতা শিতাংশু গুহকে আমি ফোন করি। তিনি জানান, তারা কোনো সংবাদ সম্মেলন করেননি। গরু জবাই নিষিদ্ধ করার দাবীর সঙ্গে একমত নন।

কুলদা রায় আরও লিখেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অপর অংশের নেতা ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্যের সঙ্গে ফোনে কথা বলি। তিনি জানান, গতকাল তারা জ্যাকশন হাইটসে একিটি সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। সেখানে তারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু গরু জবাই নিষিদ্ধের কোনো দাবী তারা করেননি। এ ধরনের কোনো দাবীর সঙ্গে তারা একমত নন।  তিনি আরো বলেন, সাংবাদিক সম্মেলনে একজন ভারতীয় সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ভারতে গরু জবাই নিষিদ্ধের দাবী করছে উগ্র হিন্দুরা। এ বিষয়ে আপনাদের মতামত কি? হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা জানান এ বিষয়ে তারা একমত নন। এটা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আদর্শ পরিপন্থী।

"তখন সম্মেলনে শ্যামল চক্রবর্তী নামে একজন শ্রোতা দর্শকদের আসন থেকে উঠে এসে বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে গরু জবাই নিষিদ্ধ করার দাবী করছেন। এটা একান্তই তার ব্যক্তিগত দাবী। তিনি কোনো সংগঠনের হয়ে বলছেন না। তিনি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত নন। ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্য জানান যে, মানব জমিন পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদেরর প্রতিবাদ করে একটি প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছেন মানব জমিন পত্রিকার সম্পাদক বরাবরে। তিনি আরো দাবী করেন, মানব জমিন পত্রিকাটি তাদের সংগঠনের নাম জড়িত করে যে খবরটি প্রকাশ করেছেন তা অসত্য।"

উল্লেখ্য, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় ও সিলেটের স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে "নিউ ইয়র্কে সংবাদ সম্মেলন, বাংলাদেশে গরু জবাই বন্ধের দাবি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের" শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, "বাংলাদেশে অবিলম্বে আইন করে গরু জবাই বন্ধের দাবি জানিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ যুক্তরাষ্ট্র শাখা। শুক্রবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে নিউ ইয়র্কে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। এছাড়া দাবি করা হয় যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নজিরবিহীন নিপীড়ন চলছে এবং তাদের বেদখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তির মধ্যে চার ভাগের তিন ভাগ দখল করে নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।"

ঐক্য পরিষদ মানবাধিকার সংগঠন, প্রাণীর অধিকার রক্ষার সংগঠন নয়
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ইউ এস এ, ইনক. -এর জরুরি সভায় গৃহীত প্রস্তাবের আলোকে সাধারণ সম্পাদক স্বপন দাস সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র শাখার নামে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হরেছে। প্রকাশিত সংবাদে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র-এর নাম অবৈধভাবে ব্যবহার করে কিছু স্বার্থপর বিতর্কিত ব্যক্তি অতি বিতর্কিত কিছু মন্তব্য করেছেন যা কোনভাবেই বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এর কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন করে না এবং ওই সাংবাদিক সম্মেলনে যারা অংশ গ্রহণ করেছেন তারা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ইউ এস এ, ইনক.  এর সাথে যুক্ত নন। তারা অবৈধভাবে আমাদের সংগঠনের নাম ব্যবহার করছেন। বাংলাদেশে গরু জবাই বন্ধের কোনো বক্তব্যের সাথে কেন্দ্রীয় কমিটি বা বৈধ ও স্বীকৃত বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ইউ এস এ, ইনক.-এর কোনো সংশ্রব নেই। আমরা তাদের এই ঘৃণ্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ একটি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার সংগঠন, এটা গরু কিংবা কোনো প্রাণীর অধিকার রক্ষার সংগঠন নয়।

এইসব অপশক্তি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করার জন্য সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাথে হাত মিলিয়েছে। আমরা প্রকৃত বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ইউ এস এ, ইনক. এর নেতৃবৃন্দ ওই অবৈধ সংগঠন ও তার উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে বিবেচনা করছি।

আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে  বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সকল রকম সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে এবং সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে এমন কোনো বক্তব্য ঐক্য পরিষদ অনুমোদন করে না।

ঐসব অপশক্তি বাংলাদেশের সম্প্রদায়িক অপশক্তির ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছে বলেই আমরা বিবেচনা করছি। বাংলাদেশের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাই বোনদের প্রতি আহবান তারা যেন এই অশুভ শক্তির অশুভ প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হন।

নবেন্দু দত্ত,         নয়ন বড়ুয়া,                 রেভ. জেমস রায়
 (সভাপতি)        (সভাপতি)                  (সভাপতি)

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত