সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ২৩:৫৪

মীর কাশেম আলীকে রক্ষায় ষড়যন্ত্র চলছে : ইমরান

যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীকে ‘রক্ষার ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে শাহবাগে সমাবেশ ও মশাল মিছিল করেছে গণজাগরণ মঞ্চ।

সোমবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিকাল পাঁচটায় সমাবেশ শুরু হয়। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

বক্তব্যে তিনি বলেন, “ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের মীর কাশেম আলী তার অর্থ-বিত্ত-প্রতিপত্তিকে কাজে লাগিয়ে কোনোভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে কিনা সেই আশঙ্কা আমাদের শুরু থেকেই ছিল। নানাসময়ে গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিতও হয়েছে, বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে। এই সকল প্রতিকূলতার মধ্যেও তার বিরুদ্ধে আনীত ১৪ টি অভিযোগের মধ্যে দশটি অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে, যার মধ্যে দুটি অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি আটটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে মোট বাহাত্তর বছরের কারাদণ্ডের রায় দেয়া হয়েছে।

"আমরা জানি এই মীর কাশেম আলী মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত কুখ্যাত ইসলামি ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক এবং বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত ঘাতক আলবদর বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ছিল। মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের নির্যাতনের যে অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছিল তা প্রত্যক্ষদর্শী ১৪ জনের সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।"

ইমরান বলেন, সাম্প্রতিকসময়ে বিভিন্ন বক্তব্য বিবৃতিতে এবং বিচার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কার্যকলাপে আমাদের মাঝে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে যে, এই রাজাকারকে কোনোভাবে রক্ষার চেষ্টা হয় কিনা। আমরা দেখেছি সদ্য অবসর নেয়া একজন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, যিনি এখনো সরকারি সুযোগসুবিধা ভোগ করছেন, তিনি কিভাবে অবসরে গিয়েই যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়ে আইনি লড়াই করতে চেয়েছিলেন। এখনো বিচারবিভাগে এই নজরুল ইসলামের সম-আদর্শের যেসব সহকর্মী রয়ে গেছেন তাদের কাছ থেকে ঠিক কতটুকু ন্যায়বিচার আমরা পেতে পারি সে ব্যাপারেও আমরা সন্দিহান।

"সম্প্রতি মাননীয় প্রধান বিচারপতি আদালতে একটি বক্তব্য রেখেছেন, যেখানে তিনি প্রসিকিউশন ও তদন্তকারী দলের নানা দুর্বলতার কথা বলেছেন। আমরা ধরে নিচ্ছি যে দশটি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে তিনি সেগুলোর কথা বলেননি। যে চারটি অভিযোগে শাস্তি দেয়া যায়নি, তিনি সেগুলোর কথাই বলেছেন। মাননীয় প্রধান বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই দেশি বিদেশি বিভিন্ন চক্র যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। তাই আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি আমাদের প্রধান বিচারপতি মহোদয় এমন কোনো বক্তব্য দিবেন না যা নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী অপশক্তি কোনো রকম জল ঘোলা করার সুযোগ পায়। আমরা আরো লক্ষ্য করেছি, প্রসিকিউশন ও তদন্তকারীদলকে অভিযুক্ত করে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন কিন্তু তার অধীনস্থ একজন সাবেক বিচারপতির যুদ্ধাপরাধীর পক্ষাবলম্বন করা নিয়ে কোনো বক্তব্য দেন নি অথচ সেটাই যৌক্তিক ছিল কেননা সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম রাষ্ট্র ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মধ্যকার বিচারে মানবতাবিরোধীদের পক্ষাবলম্বন করে মূলত রাষ্ট্রের বিপক্ষেই দাঁড়িয়েছেন”।  
 
কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় মন্তব্য করে ইমরান এইচ সরকার বলেন, “প্রসিকিউশন, তদন্তকারী দল এমনকি প্রধান বিচারপতি, কেউই কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নন। তাদেরকে মনে রাখতে হবে, আমরা কেউ ব্যক্তি স্বার্থে এই বিচার চাচ্ছিনা। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হওয়ার পর যে পঁচিশ জনের অধিক সহযোদ্ধা প্রাণ দিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই এই মানবতাবিরোধী অপরাধের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে একটি মানবিক বাংলাদেশের জন্যেই লড়াই করে গেছেন। কাজেই কোনো অপশক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই রায় পরিবর্তিত হলে আমরা কেউই এমনকি আদালতও এর দায় এড়াতে পারবেনা এবং প্রত্যেককেই ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কোনো মহল যদি যুদ্ধাপরাধীদের কাছে মাথা নত করেন কিংবা কোনোরকম আপসরফার চেষ্টা করেন, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন”।

সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে ইমরান এইচ সরকার বলেন, “আট তারিখের রায়কে কেন্দ্র করে আমাদের সকলকে সজাগ থাকতে হবে। আদালত অবমাননার ভয় দেখিয়ে আমাদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করলে তা উপেক্ষা করেই আমাদের রাজপথে প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে। যদি এই আলবদর কমান্ডারের মৃত্যুদণ্ড ভিন্ন অন্য কোনো রায় হয় তবে জনগণ ধরে নিবে, মীর কাশেম আলীর অর্থবিত্তের কাছে হেরে গিয়ে একে অন্যের উপর দায় চাপিয়ে মূলত এই যুদ্ধাপরাধীকে পার পাইয়ে দেবার নীলনকশাই বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এরকম কোনো অপচেষ্টা করা হলে তার দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার জন্য জনগণ প্রস্তুত আছে”।
 
সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র। এই কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে ২, ৪, ৬ মার্চ প্রতিদিন বিকাল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত শাহবাগে গণ অবস্থান। এছাড়া প্রতিবারের মতোই আপিল বিভাগ কর্তৃক রায় ঘোষণার দিন,৮ মার্চ সকাল থেকে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচী পালন করবে গণজাগরণ মঞ্চ।

সমাবেশের পর গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা মশাল মিছিল বের করেন। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি  ঘুরে আবার শাহবাগে এসে শেষ হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত