সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ মার্চ, ২০১৬ ১৫:৩২

শেখ হাসিনার চোখের জল ক্রিকেট দল জিতলে বেরোয়, ব্লগারদের মারলে বেরোয় না : তসলিমা

পাকিস্তানের বিপক্ষে বুধবার বাংলাদেশের খেলা দেখতে মাঠে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জয়ের পর বিজয়ানন্দে কেঁদেছেন প্রধানমন্ত্রী। সে ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে ফেসবুকে। ক্রিকেটের প্রতি প্রধানমন্ত্রী এই আবেগের প্রশংসা করেছেন অনেকে।

তবে ক্রিকেটের বিজয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই কান্না নিয় প্রশ্ন তুলেছেন নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

নিজের ফেসবুকে তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার চোখের জল ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দল জিতে গেলে বেরোয়। বাংলাদেশের ব্লগারদের কুপিয়ে মেরে ফেললে বেরোয় না।’

বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দুপুরে তসলিমা নাসরিন তার ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজে এ মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার চোখের চরিত্র আমাদের চোখের চরিত্রের মতো নয়। হাসিনার চোখ দিয়ে সুখে জল বেরোয়, দুঃখে বেরোয় না।’

‘অবশ্য প্রশ্ন থেকে যায়, কুপিয়ে মেরে ফেলার ঘটনাগুলোয় আদৌ তিনি দুঃখটুঃখ কিছু পান কি না’, মন্তব্য তসলিমা নাসরিনের।

বুধবার (২ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচটি দেখতে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও তার স্ত্রী পেপ্পি সিদ্দিককে নিয়ে ভিভিআইপি লাউঞ্জে বসে খেলা দেখেন তিনি।

দুর্দান্ত খেলে ৫ উইকেটে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠায় উচ্ছ্বাসের একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন এবং পতাকা নেড়ে অভিনন্দন জানান।

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা পাকিস্তানের দেয়া ১৩০ রানের লক্ষ্য টপকে যাওয়ার পর পুরো স্টেডিয়ামের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন শেখ হাসিনা। ভিভিআইপি লাউঞ্জ থেকেই মাঠে উপস্থিতদের উদ্দেশে হাত নাড়েন তিনি। এরপর জাতীয় পতাকাও ওড়ান।

এক পর্যায়ে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি শেখ হাসিনা। আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে তার দুচোখ বেয়ে। চশমা খুলে চোখ মুছতেও দেখা যায় তাকে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ আবেগঘন দৃশ্যের ছবি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে প্রধানমন্ত্রীর এই ‘মাতৃরূপ’-এ মুগ্ধতার কথা ব্যক্ত করেছেন। এর পরই নারীবাদী লেখক তসলিমা নাসরিন এ ‘প্রশ্নবাণ’ ছুড়লেন।

এর আগে আরেকটি স্ট্যাটাসে তসলিমা নাসরিন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ দেখেননি তিনি। তবে বাংলাদেশের এ জয়ে তিনিও আনন্দিত। বলেন, ‘রাতেই খবর পেয়েছি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জিতেছে। আমি তো বেজায় খুশি।’

ওই স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘এখন ভারত-বাংলাদেশ ফাইনালে কোন দল জিতবে? ভারতীয়রা বলছে ভারত। বাংলাদেশিরা বলছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক খেলার মাঠে ফাইনালে খেলে, বাঘা বাঘা দলকেও মাঝে মাঝে হারিয়ে দেয়, এটা আমার কাছে আজও বিস্ময়ের ব্যপার!’

বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল ম্যাচটি দেখবেন উল্লেখ করে তসলিমা নাসরিন আরও বলেন, ‘ভারতের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানকে হারিয়ে দেয়ারও যোগ্যতা রাখে বাংলাদেশ, এরকম মন্তব্যও শুনছি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশ কবে যে উঠে এসেছে ওপরে, শিরদাঁড়া শক্ত করে কবে যে দাঁড়িয়েছে! এখন জায়ান্টদেরও ভয় পাইয়ে দিচ্ছে! একটা সময় তো এসব কল্পনারও অতীত ছিল।’


বুধবার টসে জিতে আগে ব্যাট  করতে নেমে পাকিস্তান করেছিল ৭ উইকেটে ১২৯ রান। জবাবে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ৫ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৩ রান। মাহমুদুল্লাহ ৪ হাঁকিয়ে ফাইনালে ওঠার উৎসবে মাতান পুরো দলকে।

এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে বিদায়ঘণ্টা বেজেছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার। লিগ পদ্ধতির বাকি ম্যাচগুলো এখন শুধুই নিয়মরক্ষার। আগামী ৬ মার্চ ভারতের বিরুদ্ধে শিরোপা লড়াইয়ে মাঠে নামবে টাইগাররা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত