সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ মে, ২০১৬ ০১:২৪

এবার কার মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক করব, প্রশ্ন বন্যার

এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও ইসলামি মৌলবাদ ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী মানবাধিকার কর্মী ও লেখক রাফিদা আহমেদ বন্যা। এতে ধর্ম নিরপেক্ষ চিন্তাধারা বা উদারপন্থি আরও বহু মানুষ নিহত হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

সিএনএন-এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত নিজের একটি লেখায় এমন আশঙ্কার কথা জানান বন্যা।

বন্যা লিখেছেন, ‘গত বছর ২৬ ফেব্রুয়ারির সকালে আমি আমার স্বামী হারানোর শোকে ডুবে ছিলাম। ওই অবস্থায়ই আমার মনে প্রশ্ন জাগে: এরপর আমি কার মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক করব?’

লেখায় বন্যা তার এবং অভিজিতের ওপর হামলার স্মৃতিচারণ করেন। এরপর এর ধারাবাহিকতায় উল্লেখ করেন তাকে ‘বোন’ ডাকা ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস এবং অভিজিতের বইয়ের প্রকাশকসহ অন্যান্য ব্লগার ও লেখকদের ওপর চালানো সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ডের কথা।

‘আমাদের অপরাধ? বিজ্ঞান, দার্শন, যুক্তিবাদ ও মুক্তচিন্তার প্রসার ঘটাতে অভিজিৎ মুক্তমনা নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অভিজিৎ জীবনের উদ্ভব, সমকামিতার পেছনের বিজ্ঞান, শূন্য থেকে মহাবিশ্বের জন্মসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ১০টি বই রচনা ও সম্পাদনা করেছিলেন। আমি বিবর্তনবাদের ওপর একটি বই লিখেছিলাম। অন্যদিকে অনন্ত মুক্তমনা ব্লগারে লিখতেন এবং যুক্তি নামের একটি ম্যাগাজিন প্রকাশসহ দর্শন ও বিজ্ঞান বিষয়ে বই লিখেছেন।’

বন্যা বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা প্রকাশ্যেই ইসলামের সমালোচনা করতাম। কিন্তু শুধু ইসলাম না, আমরা যুক্তি ও বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সব ধর্মেরই সমালোচনা করতাম।’

তিনি অভিযোগ করেন, এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের যতটা ক্ষুব্ধ হওয়ার কথা ছিল, তার কিছুই দেখা যায়নি। ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে সরকার নীরবতা অবলম্বন করে এসেছে। ফলে এ ধরণের হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে।

‘চতুর্থ হত্যাকাণ্ডের পর যখন এই কথিত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সরকার মুখ খুলল, তারা উল্টো ঘটনাগুলোকে ছোট করে দেখিয়ে নির্লজ্জের মতো হামলার শিকার মানুষগুলোকেই দায়ী করল এবং সবাইকে সাবধান করে দিলো যেন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে এমন কিছু লেখা না হয়।’

বন্যা বলেন, সরকার অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। হাতে গোনা দু’একজন গ্রেফতার হলেও বিচার এগোয়নি। বরং ব্লগার, লেখক-প্রকাশকদের ধর্মকে আঘাত করা লেখার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর ফলস্বরূপ দেশে বিচারহীনতা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

ব্লগার হত্যা পদ্ধতির অনুকরণেই দেশের সংখ্যালঘু বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, বিদেশী নাগরিক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং দেশে সমকামীদের প্রথম ম্যাগাজিনের সম্পাদককে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বন্যা। অভিযোগ করেন, ইসলামি মৌলবাদীরা স্বাধীন মত প্রকাশক সব চ্যানেল বন্ধ করে দিচ্ছে, থামিয়ে দিচ্ছে সৃজনশীল কর্মকাণ্ড ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য।

বন্যা সতর্ক করে বলেন, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু আয় বৈষম্য, দারিদ্র্য, বৈশ্বিক ভোগবাদের প্রভাব, ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাবিহীন বিরাট জনগোষ্ঠী, রাজনৈতিক কোন্দল এবং চরমপন্থি জঙ্গি মতবাদের নিয়মিত অনুপ্রবেশ - সব মিলিয়ে দেশটি জঙ্গিবাদের প্রজননস্থলে পরিণত হতে পারে। এ সবকিছু বাংলাদেশকে ইসলামি মৌলবাদের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যদি বাংলাদেশ সরকার ও দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না নেয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত