সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ জুন, ২০১৬ ০০:১৭

একটি এসএমএস পেয়ে আগেভাগেই বাসা থেকে বের হয়েছিলেন মাহমুদা

প্রতিদিন সকাল ৮টায় শুরু হয় স্কুলের ক্লাস। কিন্তু শনিবার এক এসএমএস সূত্রে জানতে পারেন রোববার থেকে স্কুলে অ্যাসেম্বলি হবে। তাই নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা আগে ছেলে  মাহির আক্তারকে নিয়ে জিইসি এলাকার ফ্ল্যাট থেকে বের হয়েছিলেন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা অাক্তার মিতু(৩২)। প্রশ্ন উঠেছে দুর্বৃত্তরা কীভাবে জানতে পারলো, মাহমুদার আগেভাগে বেরুনোর এ তথ্য ?

পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের প্রতিবেশি ও পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী সিনথিয়া আখতার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাহির আক্তার নগরীর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ওই স্কুলে আমার ছেলেও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। আগে স্কুল শুরুর সময় সকাল ৮টা হলেও শনিবার রাতে ভাবি আমাকে ফোন করে জানান তাকে স্কুল থেকে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। রোববারে স্কুলে অ্যাসেম্বলি হবে। তাই মাহিরকে সাতটা ২০ মিনিটে স্কুলে পৌঁছাতে হবে। স্কুলের গাড়িও একটু এগিয়ে সকাল ৬ টা ৫০ এর দিকে জিইসি’র মেরিডিয়ান রেস্টুরেন্টের সামনে স্কুলের বাস আসবে। তাই ভাবি ছেলেকে গাড়ি তুলে দিয়ে আসতে ৬ টা ৪০ এর দিকে বাসা থেকে বের হন।’

এদিকে স্কুল থেকে এমন কোনো এসএমএস পাঠানো হয়েছিলো কিনা তা জানতে যোগাযোগ করা হলে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের স্কুল শাখার উপাধ্যক্ষ সৌমিত কুমার দাশ বলেন, ‘প্রতিদিন নিয়মিত সময়ে স্কুল শুরু হয়। আজ আগেভাগে স্কুল শুরু হবে এমন নির্দেশনা দিয়ে স্কুল থেকে কোনো এসএমএস পাঠানো হয়নি।’

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত পরিকল্পিত। তাই নিহত মাহমুদা অাক্তারের চলার গতিবিধিতে নজর রেখেছিল তারা। প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, কোথা থেকে এসেছিল সেই এসএমএস? দুর্বৃত্তরাইরা বা কীভাবে জানতে পারলো আগেভাগে বেরুনোর সে তথ্য ?

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই ঘটনাস্থল রেকি করেছিল। ঘটনাস্থল থেকে ১০০ গজ দূরে বাসা থেকে বের হয়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে কখন আসবেন, তা নিশ্চয় দুর্বৃত্তরা আগে থেকে খোঁজখবর রাখছিল।’

রোববার সকাল ৭টার দিকে নগরীর জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে গুলি করে মাহমুদা অাক্তারকে হত্যা করা হয়। দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। অতি সম্প্রতি বাবুল আক্তারের পদোন্নতির পর ঢাকায় অবস্থান করলেও তার স্ত্রী  ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নগরীর জিইসি এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন।

ঘটনাস্থলে থাকা পিবিআই চট্টগ্রাম প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বশির আহমেদ খান জানান, সকাল ৬টা ৩৫মিনিট দিকে বাসা থেকে ১০০ গজ দূরে ছেলেকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে যাওয়ার পথে তিনজন মোটরসাইকেল আরোহী তাকে ধাক্কা দেয়। এরপর তারা ছুরিকাঘাত করে পরপর তিন রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি মাহমুদা আক্তারের মাথার বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

তিনি আরো জানান, এই হত্যাকাণ্ডের ধরন জঙ্গিদের দ্বারা সংঘটিত আগের হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে মিল আছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনাস্থলের অাশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। খুনিদের ধরতে অভিযান চলছে।

এদিকে ঘটনার পরপর সিআইডি, ডিবি, সিবিআই ও পুলিশ বিষয়টি তদন্তে মাঠে নেমেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার। এসময় তিনি হত্যাকাণ্ডের সাথে জেএমবি জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান।

উল্লেখ্য, এসপি বাবুল আক্তার গত বৃহস্পতিবার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সিএমপি ছেড়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগদানের জন্য বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি চট্টগ্রামে জেএমবির সামরিক প্রধান জাবেদসহ বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দেশে নতুন করে জঙ্গিবাদের উত্থানটি আবিষ্কার করেছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত