সিলেটটুডে ডেস্ক

০৪ জুলাই, ২০১৬ ০৩:০২

ওয়াশরুমে লুকিয়েও বাঁচতে পারেনি তারিশি

গুলশান হামলায় নিহত একমাত্র ভারতীয় নাগরিক, ১৯ বছরের তরুণী তারিশি জৈনের মরদেহ সোমবার দুপুরে জেট এয়ারওয়েজের বিমানে দিল্লিতে গিয়ে পৌঁছনোর কথা রয়েছে।

ঘটনাচক্রে ওই বিমানেই তার দিল্লিতে ফেরার কথা ছিল – যাতে ফিরোজাবাদে একটা গেট-টুগেদারে তারা পরিবারের সবাই এক সঙ্গে মিলিত হতে পারেন।

এখন তারিশি নয়, ওই বিমানে যাবে তার দেহ।

ফিরোজাবাদের মেয়ে হলেও ঢাকার সঙ্গে তারিশির আত্মীয়তা বহু বছরের, তার বাবা সঞ্জীব জৈন গত প্রায় পনেরো-কুড়ি বছর ধরে ঢাকাতেই একটি গার্মেন্ট ব্যবসা চালাচ্ছেন।

সেই ব্যবসার সুবাদে ঢাকাতেই সপরিবারে বাস করতেন তিনি, একমাত্র মেয়েকেও পড়িয়েছেন ঢাকার আমেরিকান স্কুলে।

তারিশি ইকোনমকিস নিয়ে পড়ছিল ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি-তে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে ঢাকায় এসেছিল বাবার কাছে।

তার ভাইও দু’দিন আগেই কানাডা থেকে পৌঁছে গিয়েছিল দিল্লিতে।

ইচ্ছে ছিল তারপর বাবা-মা-ভাই-বোন সবাই মিলে যাবে উত্তরপ্রদেশে আগ্রার কাছে তাদের আদি বাড়ি ফিরোজাবাদে। ফিরোজাবাদেই তারিশির বাবার অন্য ভাইদের বিশাল কাঁচের ব্যবসা।

শুক্রবার রাতে বন্ধু অবিন্তা কবীর আর ফারাজ আয়াজ হোসেনের সঙ্গে মিলে তারিশি গিয়েছিল গুলশানের হোলি আর্টিজান কাফেতে।

তারা সবাই ছিল আমেরিকান স্কুলে একে অন্যের সহপাঠী।

রাত দশটা নাগাদ তারিশির বাবা সঞ্জীব জৈনের কাছে মেয়ের মোবাইল থেকে ফোন আসে, রেস্তোরাঁয় বন্দুকধারী জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে।

প্রাণ বাঁচাতে তারা তিনজনই আশ্রয় নিয়েছে একটি ওয়াশরুমের ভেতর।

উদভ্রান্তর মতো সঞ্জীব জৈন সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন ওই ক্যাফের সামনে।

সারা রাত আটক মানুষজনদের উদ্বিগ্ন আরও নানা আত্মীয়স্বজনের সাথে তিনি পায়চারি করতে থাকেন – মাঝে দু’একবার মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথাও হয়।

শনিবার সকাল ছ’টার একটু আগে পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায় তারিশির ফোন। তার পর আর মেয়ের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ হয়নি সঞ্জীব জৈনের।

শনিবার পৌনে আটটা নাগাদ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’র পর যখন ক্যাফের ভেতর থেকে উদ্ধার হয় কুড়িটি দেহ, তার মধ্যে ছিল তারিশি জৈনের দেহও।

বিকেলে তারিশির আত্মীয়পরিজনরা তাকে শনাক্ত করেন।

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঘটনার পর থেকেই ফিরোজাবাদে তারিশির কাকা রাকেশ জৈন ও পরিবারের অন্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছিলেন।

তিনি তাদের দ্রুত বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য ভিসারও ব্যবস্থা করে দেন।

পরিবারের অনুমতি নিয়ে সুষমা স্বরাজই শনিবার বিকেলে প্রথম টুইটারে জানান যে নিহতদের মধ্যে তারিশি জৈন নামে এক ভারতীয় তরুণীও আছে।

এদিকে তারিশির পরিবারের কোনও কোনও সদস্য ভারতের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শুধু গলা চিরে হত্যাই নয়, হত্যার আগে তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছিল বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

তারিশির যে দেহ তার পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করেছেন, সেখানে শরীরের বিভিন্ন জায়গাতেই আঘাত বা ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে যা থেকে তার পরিবারের মধ্যে এই আশঙ্কা জোরালো হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত