অনলাইন প্রতিবেদক

০৪ জুলাই, ২০১৬ ২২:০৩

নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি বাংলাদেশ, টাইমের প্রতিবেদন

ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিসান বেকারিতে সংঘবদ্ধ জঙ্গি হামলার ঘটনায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি অবস্থান করছে বলে এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টাইম ম্যাগাজিন।

গত ১ জুলাইয়ের হামলার পরবর্তীতে সারাবিশ্বের নজর এখন দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটির দিকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সোমবার ‘Bangladesh Faces an Uncertain New Reality After the Dhaka Attack’ শিরোনামে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘টাইম’। নিখিল কুমারের এ প্রতিবেদনটি প্রস্তুতে ঢাকা থেকে সহযোগিতা করেছেন একেএম মঈনুদ্দিন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ সারাবিশ্বের জন্য একটি প্যারাডক্স সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার ছোট এ দেশটি বিশ্বের গরীব দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রায়ই দুর্নীতির শীর্ষ তালিকায় দেশটির নাম থাকে এবং দেশটি প্রায়ই রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। এছাড়াও দেশটি জলবায়ূ পরিবর্তনে প্রভাবে হুমকির সম্মুখীন।

টাইমের এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতার মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। বিশ্বব্যাংক কর্তৃক গত এপ্রিলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে উল্লেখ করা হয় যে, ‘যে কোন পরিস্থিতিতেই, বাংলাদেশের অর্থনীতি ভাল করেছে’ এবং দেশটি ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। আইএমএফ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ৯০ দশক থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ‘দৃঢ় ও স্থিতিশীল’ বলেও উল্লেখ করা হয় টাইমের প্রতিবেদনে। এছাড়াও দেশটির নারী অধিকার ও খাদ্য নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন ভালো দিক উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছর ধরে উন্নয়নের অগ্রযাত্রার মধ্যেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশটি উগ্রবাদীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে যার শুরু ২০১৩ সালে। এ সময় থেকেই ইসলামের জন্য হুমকি হিসেবে গণ্য করে লেখক ও অ্যাক্টিভিস্টদের হত্যা শুরু হয়, একই সাথে শুরু হয় ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হত্যাও। এ সকল ক্ষেত্রে আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা অস্বীকার করে বলেছেন যে এসব হত্যাকান্ড স্থানীয় ধর্মীয় উগ্রবাদীদের কাজ যারা বিরোধি দলগুলোর সাথে সম্পৃক্ত, বিশেষ করে ডানপন্থি ইসলামিস্ট দলগুলো।

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের বরাতে টাইম ম্যাগাজিনের এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত সময়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপারে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের নজরদারি রয়েছে এবং যদিও বাংলাদেশ সরকার এটিকে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং আন্তর্জাতিক ইস্যু থেকে দুরে সরিয়ে রেখেছে।

তবে জুলাই ১ তারিখে রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিসান বেকারিতে সংঘবদ্ধ জঙ্গি হামলা বাংলাদেশের সমস্ত পরিস্থিতিরই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এ হামলা রাজধানীর এমন এক এলাকায় ঘটেছে, যেটি দেশের বিত্তশালী, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও কূটনৈতিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যা আন্তর্জাতিক একটি জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে টাইমের প্রতিবেদককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গওহর রিজভী জানান, “জঙ্গিরা বাংলাদেশি, স্থানীয় এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত”। তিনি আরো বলেন, “আইএস সংক্রান্ত আলোচনা জাতীয় ইস্যু নয়। সন্ত্রাসবাদীরা সন্ত্রাসবাদী, তারা সব রকমেরই হতে পারে। এ ঘটনা থেকে আমরা শিখতে চাই এবং সরকার চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে সামনে এগিয়ে যাবে”।

কিন্তু এ মুহূর্তেই আইএস এ হামলা ও হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে একটি বড় প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও এ ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কতটা প্রস্তুত, তাও এখন প্রশ্নের সম্মুখীন।
অভিজিৎ রায় সহ সকল হত্যাকা-ের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার উল্টো আক্রান্তদের সমালোচনা করার বিষয়টিকেও আলোচনায় এনেছে টাইমের এ প্রতিবেদন। এ সময় নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় হত্যাকান্ড পরবর্তী সময়ে টাইম ম্যাগাজিনকে দেয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা হত্যাকারীদের ধরতে শক্ত পদক্ষেপের বিষয়টি না উল্লেখ করে বলেন,“কেউ যদি মনে করে তার ধর্ম নেই, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু কোন ধর্মের বিপক্ষে লেখার কোন অধিকার কারো নেই”।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা নিজেকে অসাম্প্রদায়িকতার রক্ষক হিসেবে ঘোষণা করলেও গত সেপ্টেম্বরে টাইমকে দেয়া এক বক্তব্যে অভিজিৎ রায় ও নীলাদ্রি নীলের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, “কারো ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত দেয়া উচিত হয়নি। একটি সমাজে বসবাস করতে হলে, সে সমাজের মূল্যবোধের সম্মান রাখতে হয়, অন্যের অনুভূতিকেও সম্মান দিতে হয়”।

যদিও এ সকল বক্তব্য প্রথম বিদেশি ইতালিয়ান নাগরিক সিজারে তাভেল্লা হত্যাকান্ডের পূর্বে দেয়া। এর পরে একজন সন্ত্রাসবিরোধি পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকেও হত্যা করা হয় এবং শেখ হাসিনা সারাদেশে একটি সাঁড়াশি অভিযানও শুরু করেন যাকে সরকার থেকে জঙ্গিবাদ বিরোধি অভিযান হিসেবে উল্লেখ করলেও বিরোধি দলগুলো এটি তাদের নেতাকর্মীদের নিগ্রহের একটি অভিযান হিসেবে উল্লেখ করে।

তবে গুলশান হামলার পর, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে বাংলাদেশ এক নতুন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে বলে সারাবিশ্বের নজর পড়েছে এবং এ পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগে ব্যক্তি পর্যায়ের বিদেশিদের লক্ষ্যবস্তু করা হলেও এ হামলায় দেশের গার্মেন্টস খাত ও উন্নয়ন সহায়ক খাতে কর্মরত বিদেশিদের হত্যা করা হয়েছে যা এ সকল খাতে প্রভাব আনতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে টাইমের এ প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত