১১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০৪
ঢাকার গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সংঘটিত জঙ্গি হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
রোববার (১০ জুলাই) হেফাজতের আমির আহমদ শফি ও মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীর নামে গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর স্বাক্ষর রয়েছে।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় প্রাণহানির পর হেফাজতের ভূমিকা নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) প্রধান প্রশ্ন তোলার পরদিন বিবৃতিতে তারা বলেছে, “হেফাজত ও আলেম সমাজ দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত।
“কারো কথায় নয়, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, জুলম-নির্যাতন, দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা ঈমানি দায়িত্ব হিসেবে সব সময় সোচ্চার ছিলাম আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। কারো চোখ রাঙানিকে আলেমরা ভয় করে না।”
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় ১৭ বিদেশিসহ অন্তত ২২ জন নিহতের পর সপ্তাহ না হতেই বৃহস্পতিবার শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের আগে পুলিশের ওপর হামলা হয়। শোলাকিয়ায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের স্মরণে শনিবার সেখানে এক সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বক্তব্যে হেফাজতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তিনি হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা নীরব কেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আপনারা কেন সোচ্চার হচ্ছেন না? যদি আপনারা নীরব থাকেন তাহলে জঙ্গিবাদের প্রতি আপনাদের সমর্থন প্রমাণ করে।”
তার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে হেফাজতের বিবৃতিতে বলা হয়, “হেফাজতকে নিয়ে পুলিশ প্রধানের বক্তব্য অসত্য ও জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। পুলিশ প্রধানের কাজ হেফাজতকে ঘায়েল করা নয়, অপরাধীদের ধরে শাস্তি নিশ্চিত করা।”
এই দুই হামলায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সম্পৃক্ততা নিয়ে হেফাজত বলছে, “কওমী মাদ্রাসা নয়, বরং সরকারি নিয়ন্ত্রিত আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোই জঙ্গিবাদের উর্বর প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে।”
গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার নিন্দা জানিয়ে এতে বলা হয়, যারা গুলশানে নিরাপরাধ মানুষ খুন করে, এমনকি পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনেও মানুষ হত্যা করে তারা ইসলাম, মুসলিম ও মানবতার শত্রু।
“মানুষ খুন, নারী, শিশু ও বয়স্কদের হত্যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমনকি রাসুল (সা.) যুদ্ধের ময়দানে নারী, শিশু ও বয়স্কদের হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন। ইসলাম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে।”
গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনায় পুরো জাতি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে দেশি-বিদেশি নাগরিক ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “নাগরিক হিসেবে আমরা কেউ নিরাপদ নই। নিরাপত্তা বাহিনীও আজ এ সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ। দেশপ্রেমিক জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোসহ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এ সন্ত্রাস মোকাবেলা করতে হবে।”
‘মাতৃভূমি বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মহামারি আকার ধারণ করেছে’ মন্তব্য করে হেফাজতের বিবৃতিতে বলা হয়, সন্ত্রাস মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থ হলে দেশ মহাবিপদের সম্মুখীন হবে, যার জন্য সরকারকে দায়ী থাকতে হবে।
‘রাজনীতির নোংরা খেলায় না মেতে’ প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
আপনার মন্তব্য