সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ জুলাই, ২০১৬ ০৩:২৮

জঙ্গিদের লাশ নিচ্ছে না পরিবার, দেওয়া হবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামকে!

ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের লাশ গ্রহণের জন্যে এখনও তাদের পরিবার আগ্রহ দেখায় নি। এমন অবস্থায় আর কিছুদিন অপেক্ষা করে সে লাশগুলো দাফনের জন্যে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামকে দেওয়া হতে পারে।

এরই মধ্যে নিহত এ জঙ্গিদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। সোমবার (১১ জুলাই) এ সংক্রান্ত আবেদন করেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির।

পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-কমিশনার আমিনুর রহমান জানান, ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি চাইলে আদালত তাদের আবেদন মঞ্জুর করেন। নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হতে তাদের পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। এছাড়াও নিহত পাঁচ জঙ্গির অস্থি-মজ্জা ও রক্ত মাখা জামা-কাপড়, রক্ত ও চুল জব্দ ও সংগ্রহ করার অনমুতি চাওয়া হয়েছে আদালতের কাছে।

জানা যায়, নিহত পাঁচ জঙ্গির ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়াও সন্দেহভাজন জঙ্গিদের কাছ থেকেও ডিএনএ আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া, ঘটনাস্থল থেকেও শতাধিক আলামত সংগ্রহ করা হয়।

গত ৬ জুলাই এ মামলার নথি (এফআইআর) আদালতে উপস্থাপন করা হলে আগামী ২৪ আগষ্ট মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে, জঙ্গি হামলার পর পরই সাইট ইনটেজিন্স তাদের পরিচয় প্রকাশ করে এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করে বলেও সাইট জানায়। হামলাকারীরা দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে এবং সে ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা সহ ২২ জন নিহত হন। এরপর সেনাবাহিনীর প্যারা কম্যান্ড দলের অভিযানে জঙ্গিরা নিহত হয়।  

এদিকে, গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে কমান্ডো অভিযানের ১০ দিন পরেও নিহত হামলাকারীদের মৃতদেহ রাখা হয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)।

মৃতদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য গত শনিবার (২ জুলাই) বিকেলে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রভোস্ট মার্শালের (০১৭৬৯০১২৫২৪) সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য আইএসপিআরের পক্ষ থেকে অনুরোধও জানানো হয়। সোমবার রাত পর্যন্ত কেবল নিহত সাইফুলের বোন ও রোহানের বাবা ছাড়া আর কারো পরিবারই পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেনি।

জানা গেছে, এভাবে আরো সপ্তাহখানেক মৃতদেহগুলো সিএমএইচে রেখে পরিবারের জন্য অপেক্ষা করা হবে। এসময়ের মধ্যেও পরিবারের কেউ যোগাযোগ না করলে মৃতদেহগুলো আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হবে।

এদিকে, জঙ্গি হামলার ঘটনায় মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে ডিবির পশ্চিমের এডিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত কাজ চলছে। এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।’

র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘দুটি অ্যাটাকই সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে। এটা নিয়ে এখনই মন্তব্য করা যাবে না। একটু সময় লাগবে। এই ধরনের হামলার পেছনে কারা অস্ত্রের জোগান দিলেন বা অর্থের যোগান দিলেন- সে বিষয়গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। হামলার প্রাথমিক প্রতিরোধেই প্রাণ হারান পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডো অভিযানে ছয় সন্ত্রাসী নিহত হলেও তারা আগেই ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। নিহত জিম্মিদের মধ্যে রয়েছেন ইতালির ৯ জন, জাপানের ৭ জন, ভারতের ১ জন, এবং বাংলাদেশের ৩ জন।

জঙ্গি হামলার পরদিন শনিবার (২ জুলাই) সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের অবসানের পর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, সন্দেহভাজন ছয় হামলাকারী নিহত হয়েছে এবং একজন ধরা পড়েছে। অবশ্য নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে পরে হামলাকারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

এদিকে, সাইট ইনটেলিজেন্স হামলাকারীদের ছবি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই হামলাকারীদের ছবি দেখে পরিচয় শনাক্ত করেছেন। জঙ্গি নিবরাস ইসলাম নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। তিনি অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক মোনাশ ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সার্ভিসেসের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।  নিবরাস এর আগে পড়েছেন ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুলে। মালয়েশিয়া থেকে পরবর্তীতে দেশে ফিরে নিবরাস ভর্তি হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওয়ারি আর উত্তরায় বাড়ি আছে তার ব্যবসায়ী বাবার। নিবরাসের তিন চাচার মধ্যে একজন সরকারের উপ সচিব, একজন পুলিশ কর্মকর্তা, আরেকজন বিজ্ঞানী।

মীর সামেহ মুবাশ্বের ও রোহান ইমতিয়াজ দুজনেই স্কলাসটিকা স্কুলের সাবেক ও বর্তমান ছাত্র। মুবাশ্বেরের বাবা মীর হায়াত কবির অ্যালকাটেল-লুসেন্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তা। মা খালেদা পারভীন সরকারি কলেজের শিক্ষক। বড় ভাই পড়ছেন কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে। মুবাশ্বের ‘এ লেভেল’ পরীক্ষার আগে গত মার্চে নিখোঁজ হন। আর রোহানের বাবা ইমতিয়াজ খান বাবুল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এবং বাংলাদেশ সাইক্লিস্ট ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি। মানব পাচারের অভিযোগে তদন্ত হচ্ছে তার।  ২০ বছর বয়সী রোহান স্কলাসটিকা শেষ করে পড়ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে। তার মাও নামি ওই স্কুলের শিক্ষক।

শফিকুল ইসলাম ও খায়রুল ইসলাম উভয়ের বাড়ি বগুড়ায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত