সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ জুলাই, ২০১৬ ০৪:৩৫

নিবরাসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আগেও মামলা হয়েছিল

ঢাকার গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনার জড়িত জঙ্গি নিবরাস ইসলামের নামে এর আগেও ঢাকায় একটি মামলা হয়েছিল, কিন্তু সে সময় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে নি।

জঙ্গি নিবরাসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এ বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় একটি মামলাও হয়। কিন্তু পুলিশ তখন তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করলেও নিবরাসকে ধরতে পারে নি।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর ছিদ্দিক একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, যেহেতু ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ) মামলাটি করেছিল তাই এর তদন্তও তারা করেছে। এর সঙ্গে থানা-পুলিশের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

ডিবির উপকমিশনার (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন নিবরাসের নাম পাওয়া যায়। কিন্তু ঠিকানা তারা বলেনি। রিমান্ডে নেওয়ার পরও ওই তিনজন নিবরাসের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি।

নিবরাসের একজন স্বজনের বরাত দিয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো জানিয়েছে, নিবরাসের নিখোঁজের বিষয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। তবে ওই একই ডায়েরিতে তৌসিফ ও শেহজাদ নামের আরও দুজনের নিখোঁজের কথা উল্লেখ আছে। এর মধ্যে তৌসিফ মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং শেহজাদ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের। আবার ৯ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় করা মামলায় তৌসিফ ও শেহজাদকে পলাতক আসামি দেখানো হয়। ধানমন্ডি থানার ওই জিডিতে নিবরাসসহ তিনজনেরই পুরো নাম-ঠিকানা ছিল।

শাহবাগ থানায় করা ওই মামলার এজাহারে দেখা যায়, ৯ ফেব্রুয়ারি ডিবির জঙ্গি দমন ও আন্তদেশীয় অপরাধ নিরোধ টিমের (দক্ষিণ) উপপরিদর্শক আবুল বাশার মামলাটি করেন।

এজাহারে বলা হয়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মূল ভবনের বিপরীতে ফুটওভারব্রিজের নিচে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে রাইয়ান মিনহাজ ওরফে রাইজু ওরফে আরমিন (২৪), আহমেদ শাম্বুর রায়হান ওরফে চিলার (২৩) ও তৌহিদ বিন আহমেদ ওরফে রিয়াজ ওরফে কাচ্চিকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ওই তিনজন জানান, তাদের সঙ্গে আরও আট-নয়জন ছিলেন।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পলাতক ব্যক্তিরা হলেন নিবরাস ইসলাম ওরফে শিমু (২৪), সেজাদ রউফ ওরফে অর্ক ওরফে মরক্ক (২৪), তৌশিক (২৪), সাবাব সালাউদ্দিন ওরফে হক ওরফে হনু, সালভি আলী ওরফে মালাভী (২৫), রিফাত, তুরাজ (২৮), ইয়াসিন তালুকদার ও গালিব (২৭)।

এজাহারে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তিনজন ঢাকা শহরে বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করার জন্য একত্র হয়েছিলেন বলে জানান। তাদের কাছ থেকে জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসেট, হার্ডডিস্ক, জিহাদি বই ও অন্য মালামাল জব্দ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই রাত পৌনে নয়টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হত্যাযজ্ঞ চালায় নিবরাস ইসলামসহ অন্য জঙ্গিরা। এর প্রতিরোধ করতে গিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারান। এরপর জঙ্গিরা জিম্মিদের ২০ জনকে হত্যা করে। হত্যার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ইতালির ৯, জাপানে ৭, ভারতের ১ এবং বাংলাদেশের ৩ জন।

জঙ্গি হামলার পরদিন শনিবার (২ জুলাই) সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের অবসানের পর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, সন্দেহভাজন ছয় হামলাকারী নিহত হয়েছে এবং একজন ধরা পড়েছে। অবশ্য নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে পরে হামলাকারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

নিবরাস ঢাকার উত্তরার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের ছেলে। এ জঙ্গি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। তিনি অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক মোনাশ ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সার্ভিসেসের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।  নিবরাস এর আগে পড়েছেন ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুলে। মালয়েশিয়া থেকে পরবর্তীতে দেশে ফিরে নিবরাস ভর্তি হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওয়ারি আর উত্তরায় বাড়ি আছে তার ব্যবসায়ী বাবার। নিবরাসের তিন চাচার মধ্যে একজন সরকারের উপ সচিব, একজন পুলিশ কর্মকর্তা, আরেকজন বিজ্ঞানী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত