সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ জুলাই, ২০১৬ ০২:২৭

নিখোঁজ জঙ্গিদের মধ্যেও একজন নর্থ সাউথের, দুজন সহোদর

সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে যে ১০ জনের ছবি প্রকাশ করে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে, তাদের দু'জন সহোদর। এ দু'জনের নাম ইব্রাহীম হাসান খান ও জুনায়েদ খান। তাদের বাবা মুনির হাসান খান রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা।

ধারণা করা হচ্ছে, তারা দু'জন জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কোনো জঙ্গিডেরায় অবস্থান করছেন অথবা জঙ্গি অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে পালিয়ে গেছেন। একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে নিখোঁজ ১০ জনের মধ্যে মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান ওরফে আবুল বাশার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। ছবি প্রকাশের পর পরিবার তাকে শনাক্ত করেছে। তিনিও দেশে অথবা বিদেশে কোনো জঙ্গি আস্তানায় অবস্থান করছেন বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।

গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সন্দেহভাজন জঙ্গি ইব্রাহীম ও জুনায়েদ নিখোঁজ হওয়ার আগে পরিবারের সঙ্গে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করতেন। তাদের দু'জনের পাসপোর্টের বিষয়ে পাওয়া তথ্য নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। দু'জনের পাসপোর্ট নম্বর একই (এএফ ৭৪৯৩৩৭৮)। তাদের অবস্থান শনাক্তে গোয়েন্দারা কাজ করছেন।

দুই সহোদর কতদিন ধরে নিখোঁজ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় খোঁজ করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ভাটারা থানার ওসি নুরুল মোত্তাকীন বলেন, এ বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। অবশ্য থানার ডিউটি অফিসার এসআই কমল কান্ত মণ্ডল বলেন, ইব্রাহীম ও জুনায়েদ নিখোঁজ হওয়া নিয়ে ভাটারা থানায় কোনো জিডি হয়নি।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে অভিজাত ও ধনাঢ্য পরিবারের কাছ থেকে তাদের মেধাবী সন্তান নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ধরনের কিছু ঘটনায় জিডি করা হলেও মূল বিষয় আঁচ করতে পেরে স্বজনরা বিষয়টি চেপে যান। তাদের মধ্য থেকেই পৃথক গ্রুপ গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলা চালিয়েছে।

বাসারুজ্জামান নর্থ সাউথের সাবেক শিক্ষার্থী : নিখোঁজ তালিকায় থাকা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ বাসারুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলায়। তার বাবা সিরাজ উদ্দিন তানোরের লালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে বাসারুজ্জামান বড়।

গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলাকারী নিহত জঙ্গিদের মধ্যে নিবরাস ইসলাম এবং গত বৃহস্পতিবার শোলাকিয়ায় হামলা চালাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত জঙ্গি আবীর রহমানও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিল। তারা দু'জনও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। দুটি হামলার সঙ্গে জড়িতরা বেশ কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিল।

বাসারুজ্জামানের পরিবার বলছে, তিনি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। ছয়-সাত মাস আগে বাসারুজ্জামান দুই মাসের জন্য অফিসের কাজে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হন। এর পর থেকেই তিনি নিখোঁজ।

তার বাবা সিরাজ উদ্দিন বলেন, ছয়-সাত মাস আগে নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি আর সন্তানের খোঁজ পাননি। বাসারুজ্জামানের মামা আবুল কাশেম তানোর থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও তালন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি জানান, বাসারুজ্জামান ২০০৭ সালে নর্থ সাউথে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়েছেন। দুই বছর আগে বিয়ে করে তেজগাঁওয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়।

তানোর থানার ওসি আব্দুস সালাম জানান, ঈদের আগে বাসারুজ্জামানের শ্বশুর তেজগাঁও থানায় জিডি করেছেন। এরপর তার গ্রামের বাড়িতে খোঁজ করা হয়েছে। অবশ্য তেজগাঁও থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম ওই জিডির কথা অস্বীকার করেছেন।

এদিকে গত ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী খুন হওয়ার পর বাগমারা উপজেলার শরিফুল ইসলাম নামে এক যুবক নিখোঁজ থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। শরিফুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগেরই শিক্ষার্থী। তার জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার বিষয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খতিয়ে দেখছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরদার তমিজউদ্দীন আহমেদ জানান, এক বছর ধরে নিখোঁজ শরিফুল। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। পরিবার দাবি করছে, শরিফুলের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই।

সূত্র : সমকাল

আপনার মন্তব্য

আলোচিত