সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ জুলাই, ২০১৬ ১৭:১১

নিখোঁজ ১৭ তরুণের খোঁজে ‘ওয়ান্টেড নোটিশ’ যাচ্ছে ইন্টারপোলে

তিন মাস থেকে চার বছর পর্যন্ত রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ বাংলাদেশী ১৭ তরুণের নামে 'ওয়ান্টেড নোটিশ' যাচ্ছে আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলে। ইতিমধ্যেই তাদের প্রোফাইল তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া আরও ২০৩ জন তরুণ নিখোঁজ থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। জঙ্গি সম্পৃক্ততায় জড়িত হওয়ার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধেও পর্যায়ক্রমে ওয়ান্টেড নোটিশ জারি করার উদ্যোগ নেবে পুলিশ।

ঐ ১৭ তরুণের প্রায় সবাই ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের উগ্রপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হয়ে কাজ করছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের আটক করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল কাউন্সিল ব্যুরোর (এসসিবি-ইন্টারপোল) এআইজি রফিকুল গনি। তিনি বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ১৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সংকেত পেলেই ইন্টারপোলকে তাদের বিরুদ্ধে ওয়ান্টেড নোটিশ জারির জন্য অনুরোধ জানানো হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর গুলশানে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর নিখোঁজ তরুণদের কয়েকজন আইএসের হয়ে কাজ করার তথ্য মেলে। তাদের মধ্যে আছেন রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান, বাড্ডার জুনায়েদ খান (পাসপোর্ট নম্বর-এএফ ৭৪৯৩৩৭৮), ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম (পাসপোর্ট নম্বর-৫২৫৮৪১৬২৫), ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান (পাসপোর্ট নম্বর-এএফ ৭৪৯৩৩৭৮), ধানমণ্ডির জুবায়েদুর রহিম (পাসপোর্ট নম্বর-ই ১০৪৭৭১৯), চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী (পাসপোর্ট নম্বর-এল ০৬৩৩৪৭৮), লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন (পাসপোর্ট নম্বর-এফ ০৫৮৫৫৬৮), সিলেটের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি (পাসপোর্ট নম্বর-টিকে ৮০৯৯৮৬০) ও জুনুন শিকদার (পাসপোর্ট নম্বর-বিই ০৯৪৯১৭২)। এছাড়া আরও রয়েছেন গ্রামীণফোনের সাবেক কর্মকর্তা তাহমিদ রহমান শফি, আইবিএর সাবেক ছাত্র তৌসিফ হাসান ও প্রয়াত মেজর (অব.) ওয়াসিকুর রহমানের ছেলে আরফাত ওরফে তুষার। তিনি ঢাকা ডেন্টাল কলেজের সাবেক ছাত্র।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের নামের তালিকা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছে এমন ব্যক্তিদের সন্ধানে প্রতিদিনই আবেদন ও তথ্য আসছে পুলিশ সদর দফতরে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত নিখোঁজদের এ তালিকা ২০৩-এ পৌঁছে। এদের মধ্যে রাজশাহীর ২৭, খুলনার ১৮, ঢাকার ৫৯, সিলেটের ২২, বগুড়ার ৫২, বরিশালের ১৫ ও বাকিরা চট্টগ্রামের।

রহস্যজনক এ নিখোঁজের তালিকায় তরুণদের পাশাপাশি রয়েছে অনেক তরুণীও। এদের মধ্যে বেশির ভাগই নিখোঁজের পর লাপাত্তা রয়েছে ২ মাস থেকে ৪ বছর আগে থেকে। এসব ঘটনায় স্বজনদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরিও হয়েছে। তবে এতদিন এসব নিখোঁজের সন্ধানে তেমন একটা তৎপরতা চালায়নি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর গুলশানে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর নিখোঁজ এসব তরুণের খোঁজ নিতে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। নিখোঁজ এসব তরুণের খোঁজে তারা এখন মরিয়া। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের। তাদের সন্ধান জানতে দেশের সব থানায় ও সব সরকারি-বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। আগামী এক সপ্তাহের এই তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে বলে পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়।

পুলিশের পক্ষ থেকে নিখোঁজদের ব্যাপারে অভিভাবকদের কাছে তথ্য চাওয়ার পর সারা দেশ থেকে প্রতিদিনই আবেদন আসছে। এজন্য পুলিশ সদর দফতরে আলাদা একটি সেল গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এসব আবেদন ওই সেলে জমা হচ্ছে। এসব আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর পুলিশ সদর দফতরের পক্ষে সন্দেহভাজন এ ১৭ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে নোটিশ পাঠানো হচ্ছে।

সূত্রঃ যুগান্তর

আপনার মন্তব্য

আলোচিত