সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ জুলাই, ২০১৬ ২৩:৩০

সন্ত্রাসীরা বাইরের শক্তিতে প্রভাবিত : বার্নিকাট

বাংলাদেশে সম্প্রতি যেসব সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীরা এ দেশের ভেতরে বেড়ে উঠলেও এরা বাইরের শক্তি দ্বারা প্রভাবিত বলে মন্তব্য করেছে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।

সোমবার (২৫ জুলাই) নগর ভবনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

মার্শা বার্নিকাট বলেন, বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসবাদের ঘটনাগুলো লক্ষ করলেই বুঝতে পারবেন, প্রতিটি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা দেশের ভেতরে বেড়ে উঠেছে। অতীতের মতো এসব হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা দেশের বাইরে থেকে আসেনি।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংস হামলায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস জড়িত কিন্তু বাংলাদেশ তা মনে করে না। দুই দেশের এমন বিপরীত অবস্থানের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ কীভাবে কাজ করবে, জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এখানকার মতো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মে বড় হয়েছে, কিংবা অভিবাসনের পর দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বাস করছে। এখানের ক্ষেত্রে এটি সত্যি। এখানে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিক বলে মনে হচ্ছে। তার মানে সন্ত্রাসবাদ কি আমাদের দেশগুলোতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে? তা কিন্তু নয়। এর মানে হচ্ছে, কোনো কিছু তাদের প্রভাবিত করছে। হামলাগুলোর প্রসঙ্গ টেনে লোকজন আমাকে বলছেন, এটাই বাংলাদেশ নয়। আমিও সেটা বিশ্বাস করি।’

মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘কয়েকজন, বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদের জন্য যেহেতু সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই, সন্ত্রাস পরিচালনা করে ব্যক্তি...দুই থেকে তিনজন মিলেই করে। তাই এ বিষয়টিতে আমি জোর দিচ্ছি। এখানে এবং অন্য জায়গায় লোকজন যেসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদেরকে কোনো কিছু কিংবা কেউ প্রভাবিত করছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দখলের ইচ্ছে নেই বলে তাঁর সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়ে মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিকতা নিয়ে বিভিন্ন সময় আপনাদের কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া শুনে এবং গণমাধ্যমে খবরের প্রতিক্রিয়ায় আমি সেটা বলেছি। আমি বলার চেষ্টা করেছি, সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। কাজেই কোনো দেশ একা এ সমস্যা মোকাবিলা করতে চাইলে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বে। কারণ, সন্ত্রাসীদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। কাজেই একসঙ্গে কাজ করলে আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠব। যারা আমাদের চেষ্টার সমালোচনা করছেন এবং মনে করছেন আমার বাংলাদেশ দখলের মতো কোনো শয়তানি কিংবা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চাই, তাঁদের সবাইকে আশ্বস্ত করে বলছি, আমাদের লক্ষ্য ঠিক তার উল্টো। একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, বিশ্বের জন্য মঙ্গল।’

মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আমরা জানি আমাদের একার পক্ষে এ লড়াই করা সম্ভব নয়। আমরা বিশ্বাস করি, অন্য দেশের ক্ষেত্রেও এটা সত্যি। আমাদের যে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আছে, সেটাই আমরা এখানে আনতে চাই। আমি এটিও বলেছি, বাংলাদেশ, বিশেষ করে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের দৃশ্যপটের অংশ হয়েছে।’

স্ট্রং সিটিজ নেটওয়ার্ক নামের একটি সংস্থায় যোগ দিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে আমন্ত্রণ জানান মার্শা বার্নিকাট। ওই নেটওয়ার্কে যুক্ত বিশ্বের বিভিন্ন নগর তাদের এলাকাকে নিরাপদ, বিশেষ করে উগ্রপন্থা দমনে একসঙ্গে কাজ করে থাকে।

সাঈদ খোকন জানান, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নকাজ ব্যাহত হবে না।

এদিকে সন্ত্রাসবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে পর্যালোচনায় বসছেন মার্শা বার্নিকাট। কাল বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এ আলোচনার কথা রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত