নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:১৫

সিলেটের জঙ্গি তামিম আইএসের বাংলাদেশ ও উত্তরপূর্ব ভারতের প্রধান সমন্বয়ক!

কানাডা প্রবাসী সিলেটের বিয়ানীবাজারের সন্তান তামিম আহমেদ চৌধুরী আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন (আইএস) এর  বাংলাদেশ ও উত্তরপূর্ব ভারতের কথিত প্রধান সমন্বয়ক। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর ও আইএসের মুখপাত্র দাবিকে প্রকাশিত তথ্য ঘেঁটে এমনটিই জানা গেছে। অনলাইনে প্রকাশিত আইএসের মুখপাত্র দাবিক-এর ১৪তম সংখ্যায় আইএসের এই অঞ্চলের প্রধান হিসেবে সাংগঠনিক ছদ্মনামে তার দীর্ঘ সাক্ষাতকারও প্রকাশ হয়েছিল।




গত ১৩ এপ্রিল অনলাইনে প্রকাশিত জঙ্গি সংগঠন আইএসের নিজস্ব সাময়িকী দাবিক-এর ১৪তম সংখ্যায় আইএসের কথিত বাংলাদেশ প্রধান শায়খ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফের এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়।  পরে গত ৮ জুন  কানাডার সংবাদ মাধ্যম ন্যাশনাল পোস্ট বাংলাদেশে আইএসের মূল হোতা নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করে যেখানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক শায়খ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফকে ‘বাংলার খিলাফত দলের প্রধান’ প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। পত্রিকাটির অনুসন্ধান অনুযায়ী এই শায়খ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফর প্রকৃত নাম তামিম আহমেদ চৌধুরী।

সেই সাক্ষাতকারে তামিম বলেন "আমরা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের যোদ্ধারা তাদের ছুরিতে শান দিচ্ছে। আমরা বাংলাদেশে খিলাফত রাষ্ট্র কায়েম করব।" এই সাক্ষাতকার প্রকাশের তিন মাসের মধ্যেই গুলশানে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে।

ন্যাশনাল পোস্টের বরাতে গত ৯ জুন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমে বাংলাদেশে আইএসের ‘মূল হোতা’ কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরী! শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারেও তামিম চৌধুরী সাংগঠনিক ছদ্মনাম শেখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

পুলিশ ধারণা করছে তামিমের সাথে সাইফুল্লাহ ওজাকি ও  তারেক মোহাম্মদ তাজউদ্দিন কাওসার বাংলাদেশী তরুণ ছেলেদের আইএসে রিক্রুট ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা করছে। তামিম কানাডা, সাইফুল্লা জাপান ও কাওসার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী হলেও বর্তমানে তাদের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তামিম চৌধুরী ২০১৩ সালের পরে কোন এক সময় কানাডা থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন তবে তার বাংলাদেশে চলে আসার তথ্যও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার আপন চাচাতো ভাই তাজিম আহমদ চৌধুরীর থেকে জানা যায় ২০০১ সালে একবার সিলেট এসেছিলেন তিনি। এদিকে সাইফুল্লাহ ওজাকি ওরফে সুজিত দেবনাথ ও তারেক মোহাম্মদ তাজউদ্দিন কাওসারের দেশে ফেরার কোন তথ্য তাদের পরিবারের কাছে নেই। তারা কেউই প্রবাসের পূর্ব ঠিকানাতেও নেই।

তামিম আহমদ চৌধুরী বিয়ানীবাজারের দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামের শফি আহমদ চৌধুরী ও খালেদা শফি চৌধুরীর ছেলে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, তামিমের জন্ম কানাডায় এবং সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা করেছেন কানাডার নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তার পিতা শফি আহমদ চৌধুরী একসময় চট্টগ্রামে জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সপরিবারে তিনি পাড়ি জমান কানাডায়। তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার দাদা শান্তি কমিটির সহযোগী ছিলেন।

আরও পড়ুন- ‘নিখোঁজ’ তামিমের পরিবারের সদস্যরা জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট!


তামিমের আত্মীয়রা জানান, বিয়ানীবাজার উপজেলার ভারত সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামের বাড়িতে আসার ব্যাপারে সবসময়ই তাদের অনীহা ছিল। শেষ ২০০১ সালে তারা সপরিবারে বাংলাদেশে আসলেও গ্রামের বাড়িতে আসেননি। সিলেট নগরীতে বাসা ভাড়া করে প্রায় ৩ মাস থাকার পর আবারও ফিরে যান কানাডায়।

র‌্যাবের প্রকাশ করা হালনাগাদ নিখোঁজ তালিকায় ৩৭ নম্বরে থাকা তামিম আহমদ চৌধুরীর জন্ম তারিখ ২৫ জুলাই ১৯৮৬ সাল। তার পাসপোর্ট নম্বর এএফ-২৮৩৭০৭৬ ইস্যু: ০৪/০৮/২০১৩ মেয়াদ উত্তীর্ণতারিখঃ ০৩/০৮/২০১৬ পুরাতন পাসপোর্ট নং- এল০৬৩৩৪৭৮ জম্ম নিবন্ধন নং- ১৯৮৬০০৯১২৪১০০১৩৪২।



তামিম আহমদ ব্যক্তি জীবনে বিবাহিত ও তিন সন্তানের জনক। তারা ৩ ভাই ও ১ বোন। গ্রামের বাড়ির কারো সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। মূলত ফেঞ্চুগঞ্জের নানা বাড়ির লোকজনের সাথে তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।

বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: জুবের আহমদ সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তামিমের বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর থেকে আমরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। তবে এ ব্যাপারে কোন তথ্য আমাদের জানা নেই। তারা  স্বপরিবারে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত