নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ মে, ২০১৫ ০০:৩৪

বছরের প্রথম তিন মাসে দেশে চা উৎপাদন কমেছে ৬২ শতাংশ

দেশজুড়ে প্রচণ্ড দাবদাহে চা উৎপাদন কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ। এতে বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) পণ্যটির উৎপাদন ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমেছে। উৎপাদন কমার প্রভাব পড়েছে চলতি নিলাম (২০১৫-১৬) বর্ষের শুরুতে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে পণ্যটির দাম। উৎপাদন না বাড়লে দেশে চায়ের দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ টি বোর্ডের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশের ১৬৬টি বাগানে চা উৎপাদন হয়েছে মোট ২ লাখ ১০ হাজার ২০০ কেজি। গত বছর একই সময়ে উৎপাদন হয়েছিল ৫ লাখ ৫৮ হাজার কেজি। অর্থাৎ ২০১৪ সালের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছর উৎপাদন ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমেছে। মার্চের পর কী পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে, এ-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য আসেনি। তবে উৎপাদনের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে কম হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় নিলাম বর্ষের শুরু থেকেই চায়ের চাহিদা ও দাম দুটোই ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।

টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিটিএবি) সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে মৌসুমের চতুর্থ নিলামে মোট ১১ লাখ ৭ হাজার ৭৯৩ কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করা হয়। যা আগের বছরের একই নিলামের তুলনায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৬২২ কেজি কম। আগামী ২ জুন অনুষ্ঠেয় পঞ্চম নিলামে পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩ কেজি কম অর্থাৎ ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬ কেজি চা বিক্রির প্রস্তাব দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মাসের ৬ মে থেকে শুরু হওয়া নিলাম বর্ষের প্রথম দিনে গত বর্ষের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কম চা প্রস্তাব হয়ে আসছে।

টি বোর্ড সূত্রে আরো জানা গেছে, ২০১১ সালে দেশে চা উৎপাদন হয় ৬ কোটি ৩৯ হাজার কেজি। এছাড়া ২০১২ সালে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৬৩ হাজার, ২০১৩ সালে ৬ কোটি ৬২ লাখ ৫৯ হাজার এবং সর্বশেষ গত বছর ৬ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। চলতি বছর পণ্যটির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৬ কোটি ৪০ লাখ কেজি। তবে বছরের প্রথম তিন মাসে উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে যাওয়ায় লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মাইনউদ্দিন আহমেদ বলেন, বছরের শুরুতে আগাম বৃষ্টিপাত হওয়ায় চা উৎপাদনের জন্য ভালো হয়েছিল। কিন্তু প্রচণ্ড দাবদাহ, খরা, থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে চা গাছে নতুন কুঁড়ি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে চা বাগানে এত বেশি আকারে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে।

নিলাম প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া তথ্যানুসারে, প্রথম নিলামে প্রতি কেজি গড়ে ২০০ টাকা দরে ৯১ শতাংশ চা বিক্রি হয়। দ্বিতীয় নিলামে ২১০ দশমিক ২২ টাকা দরে ৯৩ শতাংশ এবং তৃতীয় নিলামে ২০৮ টাকা দরে ৯৫ শতাংশ চা বিক্রি হয়েছে। এদিকে চায়ের সরবরাহ সংকটে গত মঙ্গলবারের চতুর্থ নিলামে ২১৩ টাকা দরে প্রায় ৯৮ শতাংশ চা বিক্রি হয়ে গেছে। কেজিপ্রতি চায়ের গড় দাম ২০০ টাকার কিছুটা বেশি হলেও সর্বনিম্ন ১৬০ থেকে সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা দরেও বিক্রি হয়েছে।  

এ বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় চা নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্রোকার্সের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অঞ্জন দেব বর্মণ বলেন, নিলামে চাহিদা থাকায় ভালো মানের চায়ের দামও ছিল বেশি। প্রস্তাবিত চায়ের চেয়ে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা বেশি হওয়ায় অধিকাংশ চা বিক্রি হয়ে যায়। বছরের প্রথম নিলামে আগের বছরের কিছু চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করায় প্রায় ১০ শতাংশের মতো অবিক্রীত ছিল। তবে দ্বিতীয় নিলামে প্রস্তাবিত সব চা বিক্রি হয়ে যায়।

টিটিএবির সহসভাপতি আবদুল হাই চৌধুরী বলেন, চায়ের পরিপূর্ণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হয় মে মাস থেকে। গত বছরের চেয়ে উৎপাদন কম হওয়ায় চায়ের নিলামে এর প্রভাব পড়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়লে চা উৎপাদন আগের গতিতে ফিরে আসতে পারে। তবে শুরুতে উৎপাদন কমে যাওয়ায় শেষ দিকের উৎপাদন দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না বলেই মনে করছেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত