নিউজ ডেস্ক

০৯ জুন, ২০১৫ ০০:২০

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে আইনের দাবিতে টিএসসিতে মানববন্ধন আজ

ছবি: ফেসবুক ইভেন্ট থেকে সংগৃহিত

‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে Genocide Denial Law চাই’ দাবিতে মানবন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করা এ প্রজন্মের উদ্যমি তরুণদের উদ্যোগে মঙ্গলবার বিকেল চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এবং আগামি শনিবার (১৩ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

ফেসবুক ইভেন্টের অন্যতম আয়োজক 'অর্ফিয়াস রিবর্নমুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের দিকে উল্লেখ করে জানান- 'টিএসসির থেকে অল্পদুরেই রুপসীবাংলা, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। একাত্তরের ৯ জুন। সন্ধ্যে সাতটার কিছু বেশি হবে, একটা গাড়ি... তাতে বাদল স্বপন জিয়া... আর আছেন মায়া। সাথে দলনেতা আলম, হাবিবুল আলম বীর প্রতীক। এই ৯ জুন তারিখেই ঢাকায় প্রথম গেরিলা অপারেশন হয়, একদল লেজেন্ডের জন্ম হয়। আজ অর্ধশতাব্দীও হয়নি, সেই ৯ জুনে আমাদের এমন একটা দাবি নিয়ে দাড়াতে হচ্ছে, এরচেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।' যারা আসবেন, নিজের শেকড়ের টানেই আসবেন- লিখেন তিনি।

ফেসবুক ইভেন্টটি গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) খোলা হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ফেসবুক ইভেন্টে ‘গোয়িং’ দিয়ে, পোস্ট-লাইক-কমেন্ট করে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে এমন প্রজন্ম নিজেদের সমর্থন জানাচ্ছে এবং একইভাবে নিজেদের টাইমলাইনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে আইন প্রণয়নেরও দাবি জানাচ্ছে।

কী কারণে ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে Genocide Denial Law চাই’ তার স্বপক্ষে ইভেন্টের বর্ণনায় বলা হয়েছে- ‘আমাদের বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই। থাকবেই বা কেনো, বারবার ঘুরে দাঁড়ানো মানুষের দেশ এটা, দ্রোহ আর প্রেমের দেশ এটা। আমাদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি, পারবে না। রক্ত দিতে এদেশের মানুষ ভয় পায়নি কখনোই, বারবার মরে অধিকার আদায় করে নিয়েছে, নিজের ভাষার,নিজের সংস্কৃতির, নিজের ভূখণ্ডের, নিজের অস্তিত্বের।

এই দেশটার জন্যে, এই মানচিত্র আর পতাকাটার জন্যে বাংলা মায়ের সন্তানেরা অকাতরে জীবন দিয়েছে। এই দেশের মানুষেরা আনন্দে মনের কথা বলতে পারবে, শুধু এটুকু স্বপ্নের জন্যে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত গুলি চালিয়ে গিয়েছে, আপন মনে হাসতে পারবে, খেলতে পারবে, পড়াশোনা করতে পারবে, ভালোবাসতে পারবে এইটুকু অধিকারের জন্যে বুকে মাইন বেঁধে ট্যাংক উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের মৃত্যুকে আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না।

যে মানুষগুলো আমাদের জন্যে নিজেদের জীবন দিয়ে দিলো, তাদের স্বপ্নগুলো আমাদের পুরণ করতে হবে। তাদের অবদানকে অস্বীকার করে, তাদের স্বপ্নকে, তাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে কেউ এদেশে থাকতে পারবে না। কথা বলার অধিকার এনে দিলো যে মানুষগুলো, বাকস্বাধীনতার অধিকার এনে দিলো যে মানুষগুলো, তাদের অস্বীকার করার অর্থ নিজের শেকড়কে অস্বীকার করা। নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। এটা হতে দেয়া যাবে না।

যারা এই দেশটাকেই স্বীকার করে না, যারা এই দেশের জন্মযুদ্ধের ইতিহাসটাই স্বীকার করে না, এই দেশের কোনো আইন তাদের জন্যে না, এই দেশের কোনো অধিকার- কোনো সুযোগসুবিধা তাদের জন্যে না; হতে পারে না

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর সময় নাজি গণহত্যায় অসংখ্য মানুষ মারা যায়। ইউরোপের ১৪টি দেশে সেই গণহত্যাকে অস্বীকার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এবছরেই ১১ ফেব্রুয়ারি ফরাসি ইতিহাসবিদ Vincent Reynouard কে দুবছরের জেল দেয়া হয়, Laws against Holocaust Denial এর মাধ্যমে। ইহুদীনিধন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পুরো ইউরোপব্যাপী গণহত্যা, আর্মেনীয় গণহত্যাসহ সেসময়ের মানবতাবিরোধী অপরাধ সমর্থনের কারণে গত ১৬ বছরে উনিশজন প্রতিষ্ঠিত সুপরিচিত রাজনীতিবিদ, ঐতিহাসিক এবং ক্যাথলিক ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জেল জরিমানা করা হয়েছে।

খোদ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যারা সবসময় আমাদের যুদ্ধাপরাধীর বিচারে নাক গলানোর চেষ্টা করে, তারাই ২০০৭ সালে Gayssot Act এর অনুরূপ আইন পাস করে, ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালকে স্বীকার করে অভিযুক্তকে অনধিক তিন বছরের সাজা দেয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত জানায়।

আমাদের দাবি খুব সাধারণ একটি দাবি। বাংলাদেশে Genocide Denial Law চাই। এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও তার ইতিহাসকে বিকৃত করে, এমন ব্যক্তি গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন হোক, সে আইনের প্রয়োগ হোক।

কেউ যেনো আর কখনোই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা, মুক্তিবাহিনীর কর্মকাণ্ড অথবা একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের কুকীর্তি সম্পর্কে অসত্য বক্তব্য না রাখতে পারে। এমন যেকোনো কিছুকে যেনো এদেশের আইনে বিচার করা হয়।'

আয়োজকেরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে আইনের দাবিতে স্লোগান সম্বলিত যে কোন ধরণের ব্যানার-প্ল্যাকার্ড সাথে নিয়ে আসার জন্যে অংশগ্রহণকারিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত