সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ জুন, ২০১৫ ০১:৩৫

৩১ জুলাই থেকে ছিটমহল বিনিময়

স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের সব বাধা কাটার পর আগামী ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে শুরু হবে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়।

নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে চুক্তি অনুসমর্থনের দলিল হস্তান্তরের দুদিনের মধ্যে দুই দেশের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়।

স্থল সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের দীর্ঘ দিনের সমস্যার সমাধানের পর এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দেড় শতাধিক ছিটমহলের অর্ধ লক্ষ মানুষের মুক্তির পথ খুলবে।

১৯৭৪ সালের চুক্তি, ২০১১ সালের প্রটোকল কার্যকরে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের বিনিময় করা চিঠি সোমবার ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন থেকে পাঠানো হয়। একই চিঠি আসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ছিটমহল বিনিময় শুরুর চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরুর আগে বিচ্ছিন্ন ওই সব ভূমিতে দুই দেশের কর্মকর্তাদের যৌথ পরিদর্শন হবে।

ভূমি বিনিময়ের জন্য ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হওয়ায় এই সমস্যা ঝুলে ছিল দশকের পর দশক। গত মে মাসে ভারতের পার্লামেন্টে ওই বিল পাস হওয়ার পরই বাংলাদেশ সফরের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন মোদী।

সফরে মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শীর্ষ বৈঠকের আগে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা দলিল বিনিময় করেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ‍মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অনুষ্ঠানে ছিলেন।

দুই দেশের সীমান্ত সমস্যার সমাধানকে ইতিহাসিক উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “সারা বিশ্ব হয়ত জমির জন্য যুদ্ধ করতে পারে, কিন্তু আমরা দুটি দেশ জমিকে সম্পর্কের সেতু হিসেবে ব্যবহার করেছি।”

বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, এতে রয়েছে ৩৭ হাজার মানুষের বাস। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দা ১৪ হাজার। ২০১১ সালে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে শুমারিতে এই তথ্য পাওয়া যায়।

ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন মোট ৭ হাজার ১১০ একর; অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ একর।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলে আসছেন, চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল (৭১১০ একর জমি) ভারতের অংশ হয়ে যাবে। আর ভারতের ১১১টি ছিটমহল (১৭১৬০ একর জমি) বাংলাদেশের অংশ হয়ে যাবে।

এগুলোর মধ্যে লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি, কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, নীলফামারী জেলায় ৪টি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহলবাসী তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নাগরিকত্ব বেছে নিতে পারবেন।

ছিটমহল বিনিময়ের ফলে ভারত যে প্রায় ১০ হাজার একর জমি বেশি হারাবে, সে জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে না বলে প্রটোকলে উল্লেখ রয়েছে।

প্রটোকলের আওতায় অপদখলীয় ভূমি নিয়ে বিরোধের অবসানও ঘটবে। এতে ভারত অপদখলীয় ২৭৭৭ একর জমির মালিকানা পাবে। আর ২২৬৭ একর জমির উপর বাংলাদেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে।

উত্তরাধিকার সূত্রে ভারতের স্থল সীমান্ত নিয়ে এই সমস্যাটি পেয়েছিল বাংলাদেশ। অবিভক্ত ভারতের অংশ থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই সমস্যার অবসানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়।

এর আওতায় ছিটমহল বিনিময়ে বাংলাদেশের দিক থেকে সব প্রক্রিয়া সারা হয়েছিল, কিন্তু ভারতের প্রক্রিয়ায় আটকে ছিল চুক্তি কার্যকর।

এর মধ্যে ২০১১ সালে ভারতে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধানে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল সই হয়।

এরপর কংগ্রেস সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও তার মধ্যেই নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে যায়। ক্ষমতায় আসে বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী।

তবে কংগ্রেস সরকারের সেই উদ্যোগকে সফল করতে আরও সচেষ্ট ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ছিটমহল বিনিময়ে আপত্তি জানানো আঞ্চলিক দলগুলোকে মানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত