সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ মে, ২০১৮ ০২:৩০

চা শ্রমিক দিবস আজ

২০ মে; চা শ্রমিক দিবস আজ। আজকের দিনের সাথে মিশে আছে চা- শ্রমিকদের আত্মত্যাগের ইতিহাস।

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ভারতে চা- শিল্পের সূচনা। বাংলাদেশে সিলেটে ১৮৫৪ সালে মালনীছড়া চা- বাগান প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন শুরু হয়। চা- শিল্প লাভজনক হওয়ার ফলে ব্রিটিশ কোম্পানি একের পর এক বাগান প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করলে প্রচুর পরিমাণ চা- শ্রমিকদের প্রয়োজন হয় তখন দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের অনুর্বর অঞ্চল উড়িষ্যা, মাদ্রাজ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, মিজোরাম প্রভৃতি অঞ্চলে অভাবপীড়িত হাজার হাজার বেকার কৃষক মজুরদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে দালালদের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থান থেকে পুরুষ নারী ও শিশুদের জোরপূর্বক নিয়ে আসা হয়।

এসকল মানুষদের আসাম ও সিলেট অঞ্চলে গহীন জঙ্গলে নাম মাত্র মজুরিতে অমানুষিক পরিশ্রম করতে বাধ্য করে। সারা দিনের খাটুনিতে তারা ঠিকমত খাবার জুটাতে পারত না। অখাদ্য অসুখ বিসুখ মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া বিষাক্ত সাপের কামড় হিংস্র জন্তু জানোয়ারদের আক্রমণ এবং একি সাথে মালিকদের নির্মম নির্যাতন চলত। রাষ্ট্রীয় আইনে এমনি একটি আইন “ওয়ার্ক ম্যানন্স ব্রিচ অব কন্ট্রাক্ট এক্ট” যে আইনে বলা হয়েছিল যদি শ্রমিকরা চুক্তিভঙ্গ করে বাগান থেকে চলে যেতে চায় তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বাগান মালিকদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল তাদের গ্রেপ্তার করার।

এরকম অসংখ্য জঘন্য কালোআইনের বেড়াজালে শ্রমিকদের জীবন প্রায় দাসত্বের জীবনের পরিণত হয়েছিল। চা- শ্রমিকদের বেঁচে থাকার কোন পথ খোলা ছিল না। অসহায় এই শ্রমিকদের আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল অথচ এই শ্রমিকদের বলা হয়েছিল “গাছ হিলায়ে তো পয়সা মিলেগা” এখানে টাকার গাছ আছে গাছে ঝাঁকি দিলে টাকা মিলবে সেই গাছের টাকায় তাদের দুঃখ ঘুচে যাবে। গাছ থেকে টাকা আসতো ঠিকই, তা পুরোটাই চলে যেত মালিকের পকেটে আর চা- শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ ছিল অকথ্য নির্যাতন শোষণের দুর্বিষহ জীবন তাই তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে নিজ মুল্লুকে যাওয়ার বাসনা নিয়ে দিনক্ষণ ঠিক করে রওয়ানা দিল নিজ মাতৃভূমির উদ্দেশ্যে।

চা শ্রমিকদের উপর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদে সে সময়কার চা শ্রমিক নেতা পণ্ডিত গঙ্গাচরণ দীক্ষিত ও পণ্ডিত দেওসরন নিজ দেশে চা শ্রমিকদের ফিরে যাবার জন্য ‘মুল্লুকে চল’ (দেশে চল) আন্দোলনের ডাক দেন। 'মুল্লুকে চল' আন্দোলনের ডাকে ১৯২১ সালের ২০ মে সিলেট থেকে পায়ে হেঁটে চাঁদপুর মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছান সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজারের অধিক চা শ্রমিক। তারা জাহাজে চড়ে দেশে ফিরে যেতে চাইলে ব্রিটিশ সৈন্যরা নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে শত শত চা শ্রমিককে হত্যা করে এবং মৃতদেহ ভাসিয়ে দেয় মেঘনা নদীতে। যারা ব্রিটিশ সৈন্যদের হাত থেকে ঐ দিন পালিয়ে এসেছিলেন তাদেরকেও আন্দোলন করার অপরাধে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।

ইতিহাসে যুক্ত হল মালিক শ্রেণি কর্তৃক শ্রমজীবী মানুষকে পৈশাচিকভাবে হত্যার একটি ঘৃণ্যতম লোমহর্ষক ঘটনা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত