সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ মে, ২০১৮ ২১:১৯

মাদক নির্মূলে বন্দুকের ব্যবহারে উদ্বিগ্ন সুলতানা কামাল

মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠক সুলতানা কামাল বলেছেন, কেন এই উপায়েই মাদক সন্ত্রাসকে দমন করা হচ্ছে? অন্যকোনো উপায় কি নাই? তিনি বলেছেন, মাদকব্যবসার অভিযোগে 'বন্ধুকযুদ্ধে' নিহতের প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। আসলে বন্ধুকযুদ্ধে তারা মারা যাচ্ছে কি-না অথবা অন্য কোনোভাবে বন্ধুকের অপব্যবহার হচ্ছে কি-না এটা খতিয়ে দেখতে হবে।

জাতিসংঘের সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনার (ইউপিআর) আওতায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নাগরিক সমাজের পর্যবেক্ষণ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর সোশ্যাল এক্টিভিজম (সিএসএ), কাপেং ফাউন্ডেশন, এএলআরডি এবং এনএনএমসি'র যৌথ উদ্যোগে সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সিএসএর চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল বলেন, প্রতিদিন অসম্ভবরকম উদ্বেগজনক সংখ্যায় বন্ধুকের ব্যবহার দেখতে পাচ্ছি। এটা বন্ধ করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমরাই দায়ী থাকব।

তিনি বলেন, মাদকের মতো বিষাক্ত ব্যাপারের দমন সবাই চায়। মাদক এখন ছোটদের মাঝেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন এমন ব্যক্তিরা এসবের সঙ্গে জড়িত, যাদের নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। তাই মাদকের বিরুদ্ধে কড়া আইন ও ব্যবস্থা নেওয়া হোক সেটা চাই। তবে সংবিধান বলেও একটা কথা আছে। সংবিধানের ৩১-৩৫ ধারায় বলা হয়েছে, যত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হোক বা অপরাধী হোক রাষ্ট্র কতগুলো নিয়মনীতি তৈরি করবে এবং সে অনুযায়ী বিচার হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগ্নেয়াস্ত্র জনগণের টাকায় কেনা। এর ব্যবহারবিধিও রয়েছে। দেশ কি জরুরি অবস্থার মধ্যে আছে- প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, প্রতিদিনই গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা দেখতে পাচ্ছি। এ ধরণের বন্ধুকযুদ্ধ চলছেই। আমরা কোনো যুদ্ধের মধ্যে নাই। অথচ বন্ধুকযুদ্ধের নামে দৈনিক ৫-৬ জন করে মারা যাচ্ছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বিচারবহির্ভূত হত্যা কিভাবে বন্ধ করা যায়, সেটাই হোক রাষ্ট্রের নীতি।

সুলতানা কামাল বলেন, মৃত্যুদণ্ড দিয়ে অপরাধ রোধ করা যায় না। নিম্ন আদালতে প্রায়ই অপরাধীদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। তবে আমরা মনে করি, মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। এ বিষয়ে বিকল্প চিন্তাভাবনা করতে হবে।

এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, সরকারের দিক থেকে বলা হচ্ছে যে, মাদকের বিরুদ্ধে একটা অভিযান চলছে। অভিযানের বিষয়ে কারোই দ্বিমত নেই। কিন্তু যে পদ্ধতিতে কাজটি হচ্ছে সেটি সঠিক হচ্ছে কি না, ভেবে দেখা দরকার।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সিএসএ'র সদস্য আকলিমা ফেরদৌস লিসা জানান, ইউপিআর-এর আওতায় গত ১৪ মে জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এক পর্যালোচনা হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল এতে অংশ নেয়। সেখানে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে সুপারিশ তুলে ধরা হয়। ২৫১টি সুপারিশের মধ্যে ১৬৭টি সুপারিশ গ্রহণে বাংলাদেশ সম্মতি জানিয়েছে, ২৩টি বিষয়ে মতামত জানাতে সময় নিয়েছে আর ৬১টি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর মধ্যে গুমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ, উদ্বাস্তুবিষয়ক সনদ, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ক এবং শিশুশ্রম নির্মূলবিষয়ক সনদ স্বাক্ষর করেনি বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এএনএমসি'র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মোজাহিদুল ইসলাম, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত