সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ মে, ২০১৮ ০১:২৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলের ৮ টি ধারায় আপত্তি, পরিবর্তনের আশ্বাস

গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংসদীয় কমিটির বৈঠক

গণমাধ্যমকর্মীদের আপত্তির মুখে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলের অন্তত আটটি ধারায় পরিবর্তন আসছে। একই সঙ্গে বিলের বেশ কিছু ধারার অস্পষ্টতা দূর করার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।

বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল নিয়ে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মঙ্গলবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ সিদ্ধান্ত নেয়। কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে দেওয়া লিখিত প্রস্তাবগুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনায় নেওয়া হবে।

গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮' এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। বহুল আলোচিত ওই আইনের খসড়া গত ৯ এপ্রিল সংসদে ওঠার পর সেটি পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। তবে আসন্ন বাজেট অধিবেশনে বিলটি পাস নাও হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।

কমিটির বিশেষ আমন্ত্রণে মঙ্গলবারের বৈঠকে অংশ নেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি গোলাম সারওয়ার, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব ওমর ফারুক, বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকোর সভাপতি সালমান এফ রহমান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মোজাম্মেল বাবু।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে তিনটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। তাদের বক্তব্যের বেশিরভাগ জুড়েই ছিল প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন ধারার সংজ্ঞা ও স্পষ্টীকরণ বিষয়ক। তিনি বলেন, বিলের মূল কাঠামো ঠিক থাকবে। তবে ভাষাগত কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। যেসব বিষয় স্পষ্ট নয় সেগুলো স্পষ্ট করা হবে।

বৈঠক শেষে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, 'অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকতার অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রে যেসব ধারায় বাধা আসতে পারে সেগুলো তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। তা না হলে অতীতে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছি। আমরা সাংবাদিকতা রক্ষার জন্য আন্দোলনে যাব-সেটা বলে এসেছি।'

তিনি বলেন, এ বিষয়ে কমিটির সঙ্গে আবারও বসার কথা হয়েছে। দরকার হলে বার বার বৈঠক হবে। কিন্তু বিলটি সংসদে ওঠার আগে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্বেগের বিষয়গুলো দূর করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে হবে।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, প্রস্তাবিত আইনের আটটি ধারায় আপত্তি দেওয়া হয়েছে এবং কিছুক্ষেত্রে সংজ্ঞায় অস্পষ্টতা রয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। কমিটি এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়েছে। কয়েকটি বিষয়ে আমূল পরিবর্তন আশা করে তিনি বলেন, চূড়ান্ত রূপ পাওয়ার পরে আবারও বৈঠক হবে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, দেশের মুক্ত সাংবাদিকতা ব্যাহত হবে এমন কোনো আইন সরকার করছে না। গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা আটটি ধারায় আপত্তি দিয়েছেন। এগুলো সংযোজন-বিয়োজন করে বিলটি পাসের জন্য সুপারিশ করা হবে। তার আগে আবারও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হবে। তবে বাজেটের বাইরে আসন্ন সংসদ অধিবেশনে অন্য বিষয়ে আলোচনার সুযোগ খুবই কম বলেও জানান আইনমন্ত্রী।

অ্যাটকোর প্রেসিডেন্ট ও ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বলেন, বিলের যেসব ধারা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে তা কমিটিকে অবহিত করা হয়েছে। একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু বলেন, সংশ্নিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন- গণমাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত নয়; অনিয়ন্ত্রিত গুজবনির্ভর মিডিয়ার হাত থেকে মূলধারার গণমাধ্যমকে সুরক্ষা দিতেই এই আইন হচ্ছে।

বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণের নামে বা গুপ্তচরবৃত্তিকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা যাবে না। এই আইনটি গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রয়োগে প্রেস কাউন্সিলকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অপরাধ দমন করার জন্য, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ বা সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য নয়।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ বলেন, খসড়া আইনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এ বিষয়টি স্পষ্ট করার তাগিদ দিয়েছেন।

সংবিধানের প্রস্তাবনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে সংজ্ঞা আছে এখানেও তাই রাখা হবে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অনুভূতির ওপর আঘাতের ক্ষেত্রেও সংজ্ঞায়িত করার প্রস্তাব এসেছে। এক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ২৯৫-এর আদলে একটি সংজ্ঞা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি। গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়টি বিলে সজ্ঞায়িত করা নেই। এখানে ১৯২৩ সালের 'অফিসিয়াল সিক্রেটস' ল'তে যেই সংজ্ঞা আছে সেটা সংযোজন করা হবে।

বৈঠকে কমিটির সদস্যদের মধ্যে অংশ নেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, শওকত হাচানুর রহমান, কাজী ফিরোজ রশীদ, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত