২৬ মে, ২০১৮ ১২:০৯
চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৯ জেলায় ১১ জন ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২৫ মে) রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত বরগুনা, কুমিল্লা, দিনাজপুর, পাবনা, ঠাকুরগাঁও, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, জয়পুরহাট ও ফেনীতে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত সবাই মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, নিহতরা সবাই মাদক চোরাকারবারে জড়িত ছিল। কারও কারও বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে একাধিক মামলাও রয়েছে।
বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়-
বরগুনা
সদর উপজেলার জাকির তবক গ্রামে দুই দল মাদক বিক্রেতার মধ্যে গোলাগুলিতে সবির হোসেন খান (৩৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সদর থানার ওসি এস এম মাসুদুজ্জামান বলেন, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মাদক বিক্রি ও ভাগাভাগি নিয়ে মনির ও সবির হোসেনের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গেলে অনেকে পালিয়ে যায়। তবে রাস্তার পাশে সবিরের গুলিবিদ্ধ লাশ মেলে।
কুমিল্লা
কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন দুইজন।
নিহতরা হলেন - ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার আশাবাড়ি গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে বাবুল (৪০) ও দক্ষিণ তেতাভূমি গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে আলমাস (৩৬)।
বাবুলের বিরুদ্ধে ১৬টি আলমাসের বিরুদ্ধে আটটি মাদক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাহ্মণপাড়া থানার ওসি সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কেজি গাঁজা ও একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।
দিনাজপুর
সদর উপজেলার রামসাগর এলাকায় দুই দল মাদক বিক্রেতার মধ্যে গোলাগুলিতে আব্দুস সালাম (৩৬) নামে একজন আর বীরগঞ্জ উপজেলায় র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সাবদারুল (৪০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
পাবনা
পাবনায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আব্দুর রহমান (৪২) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রহমান দোগাছী ইউনিয়নের কবিরপুর গ্রামের আছের উদ্দিন শেখের ছেলে।
জেলার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বলেন, গ্রেপ্তারের পর তাকে নিয়ে রাত ৩টার দিকে মহেন্দ্রপুর এলাকায় মাদক উদ্ধারে যায় পুলিশ।
“তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ করে ককটেল নিক্ষেপ করে, গুলি ছোঁড়ে। পুলিশ পাল্টা গুলি ছোড়ে। রহমান পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।”
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি শাটারগান, তিন রাউন্ড গুলি, চারটি গুলির খোসা, ২০০ ইয়াবা ও পাঁচ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেছে বলে তিনি জানান।
ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২০০ ইয়াবা, কয়েকটি ধারালো অস্ত্র, পাঁচটি বিস্ফোরিত ককটেলের ধ্বংসাবশেষ, পাঁচটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ। তিনি বলেন, নিহত মোবারকের বিরুদ্ধে সদর ও পীরগঞ্জ থানায় ১৫টি মাদক ও চোরাচালান মামলা রয়েছে।
চাঁদপুর
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে পাঁচ মাদক মামলার আসামি বাবলু (৩৫) নিহত হয়েছেন।
কচুয়া থানার ওসি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, বাবুলের বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় পাঁচটি মাদক মামলা রয়েছে। তার বাড়ি থেকে পুলিশ ১১০টি ইয়াবা উদ্ধার করেছে।
জয়পুরহাট
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে রেন্টু মিয়া (৩৪) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন।
র্যাব ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলিসহ ‘বেশ কিছু’ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের জয়পুরহাট ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামিম হোসেন।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় মো. শাহজাহান (৩০) নামে এক মাদক বিক্রেতা কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২০০ গ্রাম হেরোইন, পাঁচটি গুলির খোসা, একটি রামদা ও একটি কিরিচ উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, শাহজাহানের বিরুদ্ধে থানায় আটটি মাদক মামলা রয়েছে।
ফেনী
ফেনীর রুহিতিয়া এলাকা থেকে কবির হোসেন (৫০) নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বন্দুক, একটি গুলি ও গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।
মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত এই বন্দুকযুদ্ধে গত সাত দিনে অন্তত ৬৫ জনের মৃত্যু হল দেশের বিভিন্ন জেলায়।
তবে বিভিন্ন সময়ে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ এসেছে, ধরে নিয়ে হত্যা করা হয় তাদের স্বজনদের।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে।
চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৯ জেলায় ১১ জন ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হয়েছেন।
আপনার মন্তব্য