সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ মে, ২০১৮ ১৪:২৪

ঐশীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল

রাজধানীর চামেলীবাগে সাড়ে চার বছর আগে পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমানকে হাইকোর্টের দেওয়া যাবজ্জীবন দণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
 
সোমবার (২৮ মে) আপিল করার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সুফিয়া খাতুন।

এই মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের আদেশ দিয়েছিলেন।

পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৭ মে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ঐশী রহমানের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে ৪ জুন এই হত্যা মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

সেসময় রায়ে আদালত বলেন, ঐশীর পিতা পুলিশবাহিনীতে ও মা ডেসটিনিতে চাকরিরত ছিলেন। জীবন জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

ঐশীকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেনি। তারা যখন উপলব্ধি করছিলেন এ বিষয়টি ঠিক সেসময় তার জীবন আসক্তিতে  উচ্ছন্নে চলে গেছে।

রায়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়, আমেরিকা,অস্ট্রেলিয়া,কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ডকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে মৃত্যুদণ্ড কমানোর কোনও গাইডলাইন নেই। এমনকি তা বিলুপ্ত করার পরিবেশ আসেনি। শিক্ষার হার বেড়েছে। জনসংখ্যাও বেড়েছে। ফলে অপরাধের প্রবণতাও বাড়ছে। এ অবস্থায় মৃত্যুদণ্ড রহিত করা যুক্তিসঙ্গত নয়।

এতে আরও বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয়। এটা কার্যকর করলেই যে সমাজ থেকে অপরাধ দূর হয়ে যবে তা নয়। কম সাজাও অনেক সময় সমাজ থেকে অপরাধ কমাতে সুষ্পষ্ঠভাবে গুরুত্বপূর্ণভাবে ভূমিকা রাখতে পারে বা সাহায্য করে।

মৃত্যুদণ্ড রহিত করতে সমাজের প্রতিটি স্তরে সুশাসন ও মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা রোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শুধু রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

রায়ে বলা হয়,তবে সন্তানদের জন্য বাবা-মা ও অভিভাবকই হলেন প্রাথমিক শিক্ষক। এ হিসেবে তাদের জন্য ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করা ও সন্তানকে সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল।  

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। সেদিনই নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মশিউর রহমান রুবেল পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর ২৪ আগস্ট আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় ঐশী।

এই মামলার অন্য আসামি ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে খুনের ঘটনার পর ঐশীদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে দু’বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এবং অপর আসামী ঐশীর বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি এ মামলায় খালাস পান।

এছাড়া পুলিশ দম্পতি হত্যায় ঐশী রহমানকে সহযোগিতার অভিযোগ থেকে গত ৬ মে গৃহপরিচারিকা খাদিজা আক্তার সুমিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত