সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ মে, ২০১৮ ২০:৪০

১৬ দিনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১০৫

সারাদেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে গত ১৬ দিনে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন অন্তত ১০৫ জন। সর্বশেষ রবিবার রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৯ জেলায় ১২ জন নিহত হন।

র‌্যাব-পুলিশের দাবি, নিহতরা মাদক ব্যবসায়ী। তাদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে তাদের লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়ে। এক পর্যায়ে পাল্টা গুলি ছুড়লে দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হলে এসব নিহতের ঘটনা ঘটে।

রবিবার দিবাগত রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কথিত এই বন্দুকযুদ্ধে কুমিল্লা, পিরোজপুর ও সাতক্ষীরায় দুইজন করে এবং ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, পাবনা ও নাটোরে একজন করে নিহত হয়।

এ ছাড়া দুই দল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাতক্ষীরায় দুজন ও ঝিনাইদহে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ ও দেবিদ্বার উপজেলায় রবিবার রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধের দুটি পৃথক ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দেবিদ্বার উপজেলায় ভিংলাবাড়ি বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ভিংলাবাড়ি এলাকার ইনামুল হক দোলন (৩৫) নিহত হন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১০ কেজি গাঁজা, ১০০ ইয়াবা ট্যাবলেট এবং একটি পাইপগান উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কালিকাপুর এলাকার নুরু মিয়া (৫৫) নিহত হয়েছেন। এ সময় তিন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে।

পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কেজি গাঁজা, একটি পিস্তল এবং গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। নুরুর বিরুদ্ধে থানায় মাদকসহ ১৩টি মামলা রয়েছে।

পিরোজপুরে রবিবার রাত ২টায় সদর উপজেলার কওরিখারা গ্রামে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নেসারাবাদ উপজেলার ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদ (৫০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর নিহতের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদের ভাষ্য, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপ গান, ১৭৫টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ৫০ গ্রাম গাঁজা এবং চারটি গুলি উদ্ধার করেছে। নিহত ওয়াহিদের বিরুদ্ধে মাদকসহ আটটি মামলা রয়েছে বলে জানান আবুল কালাম আজাদ।

এদিকে জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঘটিছাড়া গ্রামে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মিজানুর রহমান (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর নিহতের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

মঠবাড়িয়ার সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তফা স্বপন দাবি করেন, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুই কেজি গাঁজা, ৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেট এবং চারটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে। নিহত মিজানের বিরুদ্ধে থানায় মাদকের ছয়টি মামলা রয়েছে।

ঢাকার মিরপুর এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ীর নিহতের কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে তাকে মাদক ব্যবসায়ী দাবি করলেও তাৎক্ষণিক নাম-পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি।

রুপনগর থানার উপ-পরিদর্শক মিজান জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল এবং ৫ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার বাঘনগরকান্দি এলাকায় রবিবার রাত ২টার দিকে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ খালেকুদ্দিন নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর নিহতের কথা জানিয়েছে র‌্যাব। এতে র‍্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন।

র‌্যাব বলছে, ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য,একটি পিস্তল ও কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

সাতক্ষীরায় সোমবার সকালে ৭টার দিকে সদর উপজেলার বংকাল-আগুনপুর এলাকা থেকে দুই মাদক ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

নিহতদের মধ্যে একজন ভোমড়া গ্রামের খলিলুর রহমান পুটি (৩৫) এবং অপরজনের পরিচয় নিশ্চিত করেনি পুলিশ।

সদর থানার উপ-পরিদর্শক প্রবীর কুমার দাস জানান, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি শটগান, এক বোতল মদ ও ১০৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, মাদক ব্যবসায়ীদের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় তারা নিহত হয়েছেন।

ঝিনাইদহে সদর উপজেলায় ফরিদ (২৭) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। রাত ১টায় উপজেলার জার গ্রামের দুই মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ফরিদ নিহত হয়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমদাদুল হক শেখ জানান, ফরিদের বিরুদ্ধে থানায় ৯টি মাদক মামলা রয়েছে। পুলিশের টহল দল ‘বন্দুকযুদ্ধের’ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ২০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।

ফরিদের বাড়ি  শহরের পাগলাকানাই এলাকায়।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের বৈচাতলী এলাকায় রাত ২টায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবু সাঈদ বাদশা ওরফে লাল বাদশা (৪৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীর নিহতের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত বাদশা উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পূর্ব গোবিন্দপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ ছৈয়ালের ছেলে।

ঘটনাস্থল থেকে ১১১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ১টি একনলা বন্দুক, ৩টি ককটেল, ৪ রাউন্ডগুলি উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি শাহ্ আলম।

শাহ আলম জানান, বাদশার বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় ৭টি, চাঁদপুর সদরে ২টি, চট্টগ্রামে একটিসহ মোট ১০টি মাদকের মামলা রয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মুরমা গ্রামে রাত ২টায় দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রুপের মধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সুমন বিশ্বাস ওরফে কানা সুমন (৩৬) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীর নিহতের কথা জানিয়েছে পুলিশ। নিহত সুমন ওই এলাকার ছেলে।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি গাজী সালাউদ্দিন জানান, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে সুমনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় ছুরি ও বিপুল পরিমাণে ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের কথা জানিয়ে ওসি দাবি করেন, নিহত সুমন মাদকসহ ২৫টি মামলার আসামি।

পাবনার বেড়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইজ্জত আলী প্রামানিক (২৮) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, নিহত ইজ্জত আলী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী এবং ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন।

ঘটনাস্থল থেকে বেশকিছু অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের কথা জানিয়ে পাবনার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির দাবি করেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তাদের পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

পুলিশ সুপার জানান, নিহত ইজ্জত আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজী ও অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৪টি মামলা রয়েছে।

মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে প্রতিদিন নিহতের ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক দলসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা আইনের আওতায় এনে মাদক ব্যবসায়ী, পাচার ও সরবরাহকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার কথা বলছেন।

বিশ্লষকদের মতে, বন্দুকযুদ্ধে এ ধরনের নিহতের ঘটনার মধ্য দিয়ে মাদকের আগ্রাসন থামবে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত