সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ মে, ২০১৮ ০৩:৪৫

সেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগপত্র

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের চিকিৎসক রিয়াদ সিদ্দিকী প্রাণের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৯ মে) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৫-এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহারের আদালতে এই অভিযোগপত্রটি দাখিল করা হয়।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আলী আজগর স্বপন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি জানান, গত ২৩ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক রোজিনা বেগম। এ মামলায় আসামি রিয়াদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনও করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগীর শরীরে চিকিৎসক রিয়াদের চিহ্ন পাওয়া গেলেও জোরপূর্বক ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ধর্ষণের অভিযোগে চিকিৎসক রিয়াদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩, ৯-এর ক ধারায় একটি মামলা করেন এক ব্যক্তি। পরে ৯ জানুয়ারি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় (জিআর) এই মামলার এজাহার আসে।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই ব্যক্তির বাড়ি ভোলা জেলায়। তাঁর কিশোরী মেয়ে চর্মরোগে আক্রান্ত ছিল। গত বছরের ৬ অক্টোবর ভোলার যমুনা মেডিকেল সার্ভিসেসে চিকিৎসক রিয়াদ সিদ্দিকীর কাছে ওই ছাত্রী তার চর্মরোগের সমস্যা নিয়ে পরামর্শ নিতে যায়। বিএসএমএমইউর চিকিৎসক হলেও রিয়াদ সিদ্দিকী প্রতি শুক্রবার ভোলায় রোগী দেখতেন। চিকিৎসক রিয়াদ প্রথম সাক্ষাতের সময় ওই কিশোরীকে বিবস্ত্র করে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে মলম লাগিয়ে দেন। এ বিষয়ে কিশোরী প্রতিবাদ করলে রিয়াদ বলেন, ‘আমি তোমার ডাক্তার। আমার কাজ এগুলা করা, আমি এগুলো করব।’ এই বলে ওই চিকিৎসক ছাত্রীর সব স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন এবং কাউকে কিছু বলতে বারণ করেন। এরপর ছাত্রী লজ্জায় কাউকে কিছু বলেনি।

এরপর গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ওই ছাত্রী পুনরায় চিকিৎসা করাতে চিকিৎসক রিয়াদের কাছে যায়। ওই দিন রিয়াদ আবার জোর করে বিবস্ত্র করেন এবং যৌন কাজে লিপ্ত হন। ওই ছাত্রী তখন চিৎকার করলে চিকিৎসক ওড়না দিয়ে তার মুখ বেঁধে ফেলেন। ছাত্রীকে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসক রিয়াদ ওই ছাত্রীর কিছু গোপনীয় ছবি তুলেন এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। সেই সঙ্গে ছাত্রীকে নিয়মিত তাঁর কাছে আসতে বলেন। এরপর চিকিৎসক বিভিন্ন সময়ে ওই ছাত্রীর মা-বাবাকে ফোন করে জানান, আপনার মেয়ের মরণব্যাধি রোগ হয়েছে। তাকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হবে। এ ছাড়া চিকিৎসক রিয়াদ সিদ্দিকী ওই ছাত্রীর মা-বাবাকে তাঁদের মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন।

গত ৩০ ডিসেম্বর ওই ছাত্রীর মা-বাবাকে ফোন দিয়ে চিকিৎসক রিয়াদ বলেন, ‘আপনার মেয়ের চিকিৎসার জন্য বোর্ড বসানো হবে।’ পরের দিন ৩১ ডিসেম্বর ছাত্রীর মা-বাবা মেয়েকে নিয়ে সকালে ঢাকায় আসেন এবং বিএসএমএমইউ হাসপাতালে এসে পৌঁছান।

এরপর চিকিৎসক রিয়াদকে ফোন দিলে ওইদিন সকাল ১০টায় মেয়েটির মা-বাবা হাসপাতালের বটগাছের সামনে দেখা করেন এবং বোর্ড বসিয়ে চিকিৎসক দেখানো হবে বলে ক্যান্টিনে অপেক্ষা করতে বলেন। চিকিৎসক রিয়াদ ওই ছাত্রীকে হাসপাতালের বি ব্লকে এক নির্জন স্থানে নিয়ে যান এবং ধর্ষণ করার চেষ্টা করেন। ওই ছাত্রী কান্নাকাটি করে এবং একপর্যায়ে পালিয়ে যায়। পরে এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত