প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের যে কোটা, তাতে হাই কোর্টের রায় রয়ে গেছে। যেখানে হাই কোর্টের রায় আছে যে, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সংরক্ষিত থাকবে। তাহলে আমরা কীভাবে কোর্টের ওই রায় ভায়োলেট করব? সেটা তো আমরা করতে পারছি না।”

বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) বিকেলে দশম জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে কোটা পূরণ হবে না, কোটার যেটা খালি থাকবে, তা মেধার তালিকা থেকে নিয়োগ হবে। এটা আমরা করে দিয়েছি। গত কয়েক বছর থেকেই এই প্রক্রিয়া চালু রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তো বলেছি টোটাল কোটা বাদ দিতে। কিন্তু হাইকোর্টের রায় রয়েছে। এই রায় অবমাননা করে তখন তো আমি কনটেম্পট অব কোর্টে পড়ে যাব। আমরা তো কেবিনেট সেক্রেটারি দিয়ে একটি কমিটিও করে দিয়েছি। তারা সেটা দেখছে। তাহলে এদের অসুবিধাটা কোথায়?”

সংসদে এদিনের অধিবেশনে কোটা আন্দোলনকারীদের সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটা নিয়ে আন্দোলন। এটা কী আন্দোলন নাকি। ঠিক তারা যে কী চায়, বারবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, সেটা কিন্তু সঠিকভাবে বলতে পারে না। আজকে আন্দোলন তারা করছে খুব ভালো কথা। বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, ছেলেপুলে আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু ভিসির বাড়িতে আক্রমণ করে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া, গাড়ি আগুন দিয়ে পোড়ানো, বাড়ি ভাঙচুর করা, বেডরুম পর্যন্ত পৌঁছে ভাঙচুর এবং লুটপাট করা, স্টিলের আলমারি ভেঙে গহনা, টাকাপয়সা সবকিছু লুটপাট করেছে। ভিসির পরিবার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লুকিয়ে থেকে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এটা কি কোনও শিক্ষার্থীর কাজ? এটা কি কোনও শিক্ষার্থী করতে পারে? কথায় কথায় বলে ক্লাস করবে না। ক্লাসে তালা দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত কারা হবে? আমরা সেশনজট দূর করেছি। এদের কারণে এখন আবারও সেই সেশনজট।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘১৫ টাকা সিট ভাড়া আর ৩৮ টাকায় খাবার, কোথায় আছে পৃথিবীর। আজ নতুন নতুন হল বানিয়েছি। ১৫ টাকা সিট ভাড়া আর ৩৮ টাকায় খাবার খেয়ে তারা লাফালাফি করে। তাহলে সিট ভাড়া আর খাবারের বাজার দর যা রয়েছে, তাদের তা দিতে হবে। সেটা তারা দিক।’

আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তারা হলের গেট ভেঙে ফেলে দিবে, মধ্য রাতে হল থেকে ছাত্রীরা বেরিয়ে যাবে। টেনশনে আমি বাঁচি না। আমি পুলিশকে, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী তাদের বলেছি- এই মেয়েদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। ভোর ৬টা পর্যন্ত জেগে থেকে যার যার হলে পৌঁছে যাওয়ার পর আমি ঘুমাতে গেছি।”

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।

সরকার চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ১১ এপ্রিল সংসদেই বক্তব্যে কোটা বাতিলের কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

তখন তিনি বিরক্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, “বারবার এই আন্দোলন.. ঝামেলা মিটাবার জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল; পরিষ্কার কথা; আমি এটাই মনে করি, সেটা হল বাতিল।”