সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:৩১

মুখ ফসকে ‘চুমু’ বেরিয়ে গেছে কাদেরের

‘চুমু খাবে না’ বলে নিজের দেওয়া বক্তব্য মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলার প্রেক্ষিতে দেওয়া এই বক্তব্যের জন্য দুঃখও প্রকাশ করেছেন তিনি।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে শনিবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলার প্রসঙ্গ ধরে তিনি রোববার সকালে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে বলেছিলেন, “এখন আপনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে গোলাগুলি করতে করতে আসবেন, তাদের কে কি বল প্রয়োগ করবে না? চুমু খাবে?”

বিকালে ধানমণ্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসার পর সকালের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা করলে আমরা কি চুমু খাব, এ বক্তব্যে কেউ কষ্ট পেলে দুঃখপ্রকাশ করছি। এ বক্তব্য মুখ ফসকে বের হয়ে গিয়েছে। রাজনীতিতে এ ধরনের শব্দ ব্যবহারও হয়, কিন্তু কেউ আমার কাছে আশা করে নাই।”

গুজব ছড়ানোর পর শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে তা থেকে জিগাতলায় শনিবার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছিল।

শনিবার এবং রোববারও আন্দোলনকারীদের উপর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে, তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”

আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার বিষয়ে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেবেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা অবশ্যই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। এটা আমোদের দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। আরও একটু পরিস্থিতি দেখি, আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।”

আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেছেন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ‘অশুভ শক্তি’ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছিল।

কাদের বলেন, “আমরা গতকাল বলেছিলাম, আমীর খসরুর বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে বিএনপি অরাজনৈতিক একটা আন্দোলনকে রাজনৈতিক রঙ, রূপ দিতে চলেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম সেই বক্তব্য সমর্থন দিয়ে প্রমাণ করলেন।

“অবশেষে থলের বিড়াল মিঁউ করে বেরিয়ে পড়েছে। এটা এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়।”

সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জনগণের সাড়া না পেয়ে বিএনপি ও জামায়াত একেকবার একেক আন্দোলনের উপর ভর করছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, “মির্জা ফখরুল ইসলাম দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ অফিসে নাকি সাতজনকে আটকে রেখে আহত করা হয়েছে। গতকাল ফেইসবুকের ভিডিও পোস্টের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন যে অপপ্রচারের সঙ্গে মির্জা ফখরুল ও বিএনপির সংযোগ রয়েছে।

‘ধর্ষিত হয়েছি’ দাবি করে যে তরুণী ফেইসবুকে ভিডিও তুলেছেন, তার সঙ্গেও বিএনপি জড়িত বলে দাবি করেন কাদের।

তিনি বলেন, “আজকে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা করার জন্য বিএনপি-জামায়াত তাদের ছাত্র সংগঠনকে দিয়ে আক্রমণ সাজিয়েছিল। আজকে আওয়ামী লীগ অফিসের পিছন থেকেও আক্রমণ করার চেষ্টা হয়েছিল, এটা আপনারাসহ (সাংবাদিক) অনেকেই দেখেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ অফিসে হামলার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগের উপর দোষ চাপাচ্ছে।”

কাদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের বারবার বলেছেন শিক্ষার্থীদের উপর বল প্রয়োগ করা যাবে না। কিছুক্ষণ আগেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা উপদেশ চেয়েছিলাম। তিনি আমাদের অল্প কথায় বলেছেন এ পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে। এই দুটি শব্দই তিনি বলেছিলেন।”

নেতাকর্মীদের প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এখন ধৈর্য ধরতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে কোন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, সেজন্য সতর্কভাবে সবাইকে অপেক্ষা করার জন্য আহ্বান করছি। এখানে কোনোভাবে আমরা আক্রমণকারী হিসাবে চিহ্নিত হতে চাই না।

“আমরা ক্ষমতায় অছি, আমরা দেশে শান্তি চাই। ক্ষমতায় থেকে অশান্তি কেন চাইবো? তাই নেত্রীর নির্দেশের বাইরে কোনো প্রকারের উস্কানিতে না পড়ার জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘ঘরে ফিরতে শুরু করায়’ তাদের ধন্যবাদ জানান কাদের।

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “আগামীকাল সড়ক পরিবহন আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হবে। এটা পরবর্তীতে সংসদে পাস হবে। নয়দফা দাবির যেগুলো আইনি কারণে বাস্তবায়ন হয়নি, তাও হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন।”

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, একেএম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত