সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ আগস্ট, ২০১৮ ০০:১৪

নূর চৌধুরীকে ফেরাতে কানাডার ফেডারেল কোর্টে বাংলাদেশ

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডে দণ্ডিত নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরাতে কানাডার ফেডারেল কোর্টে আইনি লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশও।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে কানাডার সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন নূর চৌধুরী। সেই আবেদন রিফিউজ করে দেশটির সরকার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হলে কানাডার ফেডারেল কোর্টে একটি আপিল আবেদন করেন নূর চৌধুরী। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের মে মাসে ফেডারেল কোর্টে আইনি লড়াইয়ে অংশ নেয় বাংলাদেশও।

সূত্র জানায়, ২০০২ সালে কানাডার অভিবাসন ও শরণার্থী বোর্ড নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রীকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তার অপরাধ ছিল শান্তি ও মানবাধিকারের বিরুদ্ধে। ২০০৩ সালে কানাডার ফেডারেল কোর্ট নূর চৌধুরীর আবেদন খারিজ করে এবং অভিবাসন বোর্ডের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। ২০০৬ সালে কানাডা ত্যাগ করতে বলে অভিবাসন বিভাগ। ২০১১ সালের একটি সাক্ষাৎকারে নূর চৌধুরী ও তার আইনজীবী বলেন, তাদের আবেদনে কোর্ট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কানাডার সরকার দেশ ত্যাগ করার বিষয়ে কিছু বলতে পারে না।

কূটনৈতিক সূত্রে জানায় গেছে, ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি কানাডার বাংলাদেশ হাই কমিশন নূর চৌধুরীর অবস্থান জানতে চেয়ে দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে একটি চিঠি দেয়। এই তথ্য জানার জন্য বাংলাদেশের জনগণ আগ্রহী বলে ওই চিঠিতে গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশ হাইকমিশন। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে আপত্তি ও কানাডার প্রাইভেসি অ্যাক্টের কারণে দেশটির মন্ত্রী এ বিষয়ে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।

সূত্র আরও জানায়, ২০১৬ সালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কথা বলে। যার প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও কানাডার কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের মাঝে আলোচনা হয়। তবে মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে কানাডার আপত্তি ও বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার তথ্য বিনিময়-সংক্রান্ত চুক্তি না থাকায় সে বিষয়ে দেশটির কিছুই করার নেই।

জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ মার্চ বাংলাদেশ হাইকমিশন দুই দেশের তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। গত ৮ মে দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী জানান, কানাডায় প্রাইভেসি অ্যাক্ট অনুযায়ী অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ব বিষয়ক কোনো তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির লিখিত অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কানাডার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দেয়া জবাবের উপযুক্ত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আবেদনে বলা হয়েছে, তথ্য প্রকাশে জনগণের চাহিদা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চৌধুরী খুবই ঘৃণিত অপরাধে দণ্ডিত, বাংলাদেশ ও কানাডার সরকারের অপরাধীদের ব্যাপারে তথ্য বিনিময় করার বিষয়ে ‘ইম্পটেন্ট ইন্টারেস্ট’ রয়েছে।

বাংলাদেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে কানাডার ফেডারেল কোর্ট নূর চৌধুরীকে নোটিশ দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র মতে, সে নোটিশে নূর চৌধুরীকে কানাডার ফেডারেল কোর্ট বলেছে, আপনি যদি এই আবেদনের বিরোধিতা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আপনার অনুপস্থিতেই এবং কোনো নোটিশ না করেই আদালত তার রায় প্রদান করবে।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘খুনি নূর চৌধুরীর ব্যাপারটা হচ্ছে...আপনারা জানেন কানাডায় একটা আইন আছে, যদি কোনো দেশে মৃত্যুদণ্ড থাকে এবং সেই দেশে মৃত্যুদণ্ড সাজা পেতে পারে এমন কোনো আসামিকে তারা ডিপোর্ট করে না। একদিকে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, অন্যদিকে এটা কতটা হেনিয়াস ক্রাইম সেটা আমরা কানাডিয়ান নতুন সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমাদের ওপর তাদের যথেষ্ট ইয়ে আছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রীও সেটা উত্থাপন করেছিলেন ও আলাপ-আলোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু তাদের আইন আছে, সেটা বহাল রেখেই কীভাবে তাকে হস্তান্তর করতে পারে সেই প্রক্রিয়া আমরা এখন আলোচনা করছি। তারা যেহেতু আলোচনা করতে রাজি হয়েছে, এজন্য আমরা আশাবাদী যে তাদের আনতে পারব।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ২০০৭ সালে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন নূর চৌধুরী। তবে সেটি কানাডার সরকার রিফিউজ করে দেয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কানাডার সরকারের সঙ্গে একাধিকবার এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করে। তারপর থেকে বাংলাদেশ এখন আইনি লড়াইয়ে আছে। নূর চৌধুরী কানাডার ফেডারেল কোর্টে আপিল করেন। সেই আইনি প্রক্রিয়া এখন চলছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত