রাজশাহীতে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের রজত জয়ন্তী পালন করা হয়েছে। সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর শাহ্ মখদুম কলেজ প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের রজত জয়ন্তী পালন করা হয়।

দুপুর ১২টায় শহীদ কামারুজ্জামান চত্বর থেকে র‌্যালি শুরু হয়ে শাহ্ মখদুম কলেজে গিয়ে শেষ হয়। রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিভূতি ভূষণ মাহাতো ও দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ও আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা এমপি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শাহ্ মখদুম কলেজের অধ্যক্ষ এস এম রেজাউল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা।

অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়, সহ-সভাপতি গণেশ মার্ডি, নওগাঁ জেলা উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন মুকুল, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন দিলু, সমাজ সেবক ও আদিবাসী চিন্তাবিদ সূর্য হেমব্রম, আদিবাসী যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুণ মুন্ডা, আদিবাসী নারী পরিষদ রাজশাহী জেলা সাধারণ সম্পাদক লিপি টুডু প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার আড়াই সহস্রাধিক আদিবাসী নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।

রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক বলেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ফলে আদিবাসীদের কিছু দাবি পূরণ হয়েছে। আদিবাসীদের এই সংগ্রামের ফলে আগামীতে বাংলাদেশে বাঙ্গালিদের পাশাপাশি আদিবাসীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আদিবাসীদের উন্নয়নে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, কাউকে পিছনে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের কাছে আমি আহ্বান জানাই। আদিবাসীদের লড়াই সংগ্রামের সাথে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমি থাকব।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জননেতা ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের আন্দোলনের ফলে সংবিধানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি এসেছে। কিন্তু আদিবাসীরা এতে সন্তুষ্ট নয়। আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করা জরুরী। আদিবাসীদের এগিয়ে নিতে শিক্ষা ও সরকারী চাকরীতে কোটা বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।

এছাড়াও তিনি আদিবাসীদের নিজ মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের জন্য জাতীয় আদিবাসী পরিষদের আলোচনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের আন্দোলন সংগ্রামকে বিভক্ত করতে কিছু ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে উঠেছে এবং এদেরকে প্রতিহত করতে হবে।