সিলেটটুডে ডেস্ক

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ২৩:৪৯

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবিধানবিরোধী

বিরোধীদলীয় সদস্যদের দাবি

সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮ সংবিধানবিরোধী ও মতপ্রকাশের অন্তরায় বলে মত দিয়েছে বিরোধীদলীয় কয়েকজন সদস্য। তারা বলেছেন, প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারা প্রয়োগের ফলে তথ্য অধিকার ব্যাপকহারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ফলে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধের অধিকতর বিস্তার ঘটবে।

বুধবার জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে এর বিরোধিতা করে এমপিরা তা অধিকতর যাচাই-বাছাইরে জন্য জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন।

এই আইন অত্যন্ত হতাশাজনক ও বিতর্কিত উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, এই বিলে অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট যুক্ত করা অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারা প্রয়োগের ফলে তথ্য অধিকার অধিকার ব্যাপকহারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ফলে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধের অধিকতর বিস্তার ঘটবে। তাছাড়া ধারাটি অনুসন্ধান সাংবাদিকতাযুক্ত এবং যে কোনো গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সংবিধানের মূল চেতনার বিশেষ করে মুক্তচিন্তা, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিকাশে পথ রুদ্ধ করবে। ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতাবোধ সৃষ্টি করবে। এ জন্য বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা উচিত ছিল।

ফখরুল ইমাম বলেন, অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট প্রয়োগ, ১৯২৩ এর মতো আইনের বিতর্কিত ধারা এই আইনের সঙ্গে যুক্ত করা কতটুকু প্রাসঙ্গিক কতটুকু না তা চিন্তা করা খুবই গুরুত্ব বলে আমি মনে করি। ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি দুর্নীতি ও সুশাসন নিশ্চিতে যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে প্রস্তাবিত আইনটি সে ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, এছাড়া টেকসই উন্নয়ন ও সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের ভূমিকা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। তাই গণমাধ্যমসহ সব নাগরিক যাতে কোনো ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে তার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত আইনটি জনমনে যাচাই এ পাঠানোর প্রস্তাব করছি।

নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, গণমাধ্যমের অধিকার ও তথ্য পাওয়ার অধিকার এই আইনে নিশ্চিত করা হয়নি। স্বাধীনভাবে মতামতের যে অধিকার- তা এই আইনে নিশ্চিত করেনি।

রওশন আরা মান্নান বলেন, ডিজিটাল আইন প্রণয়নের দরকার আছে। কিন্তু মিডিয়া ও সাংবাদিকের মতে এই আইন সংবিধানবিরোধী। তাই সরকারের দরকার ছিল বিলটি আনার আগে জনমত যাচাই করা। সরকার এমন ব্যবস্থা করুক যাতে গণমাধ্যমে সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনা করতে পারে। কারণ জনগণের জন্যই সরকার।

নূর-ই হাসনাত চৌধুরী লিলি বলেন, আমি জানি বিলটি কণ্ঠভোটের মাধ্যমে পাস করে নিয়ে যাবেন। ডিজিটাল আইনের মাধ্যমে অপরাধ দূর করা খুব কঠিন।

শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমাদের সংবিধানের ৩৯ ধারায় সংবাদমাধ্যম ও মুক্তচিন্তার অধিকার দেয়া হয়েছে। চিন্তার স্বাধীনতা বলতে বোঝায় সরকার এমন কোনো আইন পরিচালনা করবে না, যা স্বাধীন চিন্তায় কোনো ধরনের চাপ অনুভব করবে। কিন্তু এই আইনটি সংবিধান থেকে অনেক দূর চলে গেছে। ৫৭ ধারা করার পর সারা বাংলাদেশ এর অপব্যবহার দেখেছি।

শামীম হায়দার আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত পুলিশ বলতে বাধ্য হলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো মামলা করতে পারবেন না। সেই ৫৭ ধারার যে ভীতি এই আইনে আরও বেশি। সেই ৫৭ ধারার বিষয়গুলো এই আইনের বিভিন্ন ধারা বিস্তৃতভাবে আনা হয়েছে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনেক বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কেউ যদি অনলাইনে খবর প্রকাশ করে সেখানে কাঁচি চালানোর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সরকারবিরোধী কোনো ধরনের খবর প্রকাশ করলে আলোচনা ছাড়াই সেই অনলাইন ব্লক করে দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত