সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:৫৯

সরকারের চাপের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হই: এসকে সিনহা

আত্মীজীবনীমূলক বই লিখেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। যেখানে তিনি দাবি করছেন তাকে সরকারের চাপ এবং হুমকির মুখে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

'এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে আত্মজীবনীমূলক এই বইয়ে বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধান বিচারপতি দাবি করেছেন, তিনি দেশ ছেড়েছেন ‘হুমকির মুখে’; একই কারণে বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।   

৬১০ পৃষ্ঠার এই বইটি অ্যামাজনের কিন্ডেল সংস্করণে বিক্রি হচ্ছে। বইয়ের কিছু অংশ অ্যামাজনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।  

এই বইতে বিচারপতি সিনহা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন কোন পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়েছিল, এবং কিভাবে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়, এবং তারপর কেন তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন।

তিনি দাবি করেন, হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মুখে তিনি দেশে ছেড়েছেন। বিচারপতি সিনহা লিখেছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়টি যেন সরকারের পক্ষ যায়, সেজন্যে তার ওপর 'সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে চাপ তৈরি করা হয়েছিল।'

বইয়ের ভূমিকায় বিচারপতি সিনহা লিখেছেন, ১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশের বিচারাঙ্গনে যুক্ত থাকার সুবাদে এর রূপান্তর এবং বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাগুলো দেখার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সিলেটের নিম্ন আদালতের একজন আইনজীবী হিসেবে শুরু করে বাংলাদেশের বিচারালয়ের শীর্ষ অবস্থানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্য হয়েছে তার।

“কিন্তু ২০১৭ সালে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে ঐতিহাসিক এক রায় দেওয়ার পর বর্তমান সরকার আমাকে পদত্যাগ করতে এবং নির্বাসনে যেতে বাধ্য করে।”

বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেওয়াকে ওই রায়ের মাধ্যমে অবৈধ ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। আর তারপর যা ঘটেছে, তাকে বিচারপতি সিনহা বর্ণনা করেছেন ‘নজিরবিহীন ঘটনা’ হিসেবে।

২০১৭ সালে সংবিধানের ১৬শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত একটি মামলার আপীলের রায়কে কেন্দ্র করে তোপের মুখে পড়েন এসকে সিনহা।

বইতে এসকে সিনহা লেখেন, "প্রধানমন্ত্রী এবং তার দলের অন্যান্য সদস্য ও মন্ত্রীরা পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে যাবার জন্য আমার কঠোর নিন্দা করেন। প্রধানমন্ত্রী সহ ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা আমার বিরুদ্ধে অসদাচরণ এবং দুর্নীতির অভিযোগ এনে বদনাম করতে শুরু করেন।"

"আমি যখন আমার সরকারি বাসভবনে আবদ্ধ, আইনজীবী এবং বিচারকদের আমার সাথে দেখা করতে দেয়া হচ্ছিল না, তখন সংবাদমাধ্যমকে বলা হয় - আমি অসুস্থ, আমি চিকিৎসার জন্য ছুটি চেয়েছি।"

"একাধিক মন্ত্রী বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবো।"

"অক্টোবরের ১৪ তারিখ, যখন আমি দেশ ছাড়তে বাধ্য হই - তখন আমি পরিস্থিতি স্পষ্ট করার চেষ্টায় একটি বিবৃতি দেই যে আমি অসুস্থ নই এবং আমি চিরকালের জন্য দেশ ছেড়ে যাচ্ছি না।"

"আমি আশা করছিলাম যে আমার প্রত্যক্ষ অনুপস্থিতি এবং আদালতের নিয়মিত ছুটি - এ দুটো মিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সহায়ক হবে, এবং শুভবুদ্ধির উদয় হবে, সরকার ওই রায়ের যে মর্মবস্তু - অর্থাৎ বিচারবিভাগের স্বাধীনতা যে জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর - তা বুঝতে পারবে।"

এসকে সিনহা লেখেন, তাঁর এ বইতে তার ব্যক্তিগত ও বিচার বিভাগে কর্মজীবনের কথা, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রতি চ্যালেঞ্জসমূহ, বিচারবিভাগ ও রাজনীতিবিদদের মূল্যবোধের অবক্ষয়, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, পুলিশের বাড়াবাড়ি, জরুরি অবস্থার প্রভাব প্রভৃতির বিবরণ আছে।

বইয়ের ভূমিকায় তিনি সংক্ষেপে "বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের দ্বন্দ্ব" বর্ণনা করেছেন এবং তার ভাষায় কী পরিস্থিতিতে তিনি প্রধান বিচারপতির পদ ত্যাগ করে বিদেশে গিয়েছিলেন তা লিখেছেন।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা এসকে সিনহা ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান। সরকারের পক্ষ থেকে অসুস্থতার কথা বলা হলেও ১৩ অক্টেবর তিনি রীতিমত বোমা ফাটিয়ে বিদেশে চলে যান।

তাঁর ছুটির মেয়াদ শেষে ১১ নভেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিচারপতি সিনহা পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন।

পদত্যাগ করার পর বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়। সেসব অভিযোগ নিয়ে দুদক পরে অনুসন্ধানও শুরু করে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত