সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০২:৩১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এত উদ্বেগ কেন: প্রধানমন্ত্রী

বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এত উদ্বেগ কেন। ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ চিন্তা থেকে বিবেচনা করলে হবে না। সমগ্র রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করতে হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাস হওয়ার পর দিন বৃহস্পতিবার দশম সংসদের ২২তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

নতুন আইনটি বাক স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার পরিপন্থি বলে ইতোমধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। সাংবাদিকদের অন্য সংগঠনগুলোও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জানি না আমাদের সাংবাদিকেরা কেন এত বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠছে? তারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে কেন? কী কারণে? এর কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না।”

নতুন আইনের ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদ উদ্বেগ জানিয়েছে। এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের জন্য বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া নিয়েও উদ্বিগ্ন সংবাদকর্মীরা।

আইনের ৩২ ধারায় বলা আছে, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের তথ্য উপাত্ত, যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা উপনেবেশিক আমলের ‘অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট’র আওতাভুক্ত অপরাধ হবে। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।

এই ধারার ফলে প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হবে বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা। সংসদীয় কমিটিতেও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন সাংবাদিকরা।

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক অসামাজিক, বিভ্রান্তিকর ও জঙ্গিবাদী ভাবধারা প্রচার করা হয়। মানুষের চরিত্র হনন করা হয়। রাজনৈতিক কুৎসা রটনা করা হয়। এগুলো সমাজে অশুভ বার্তা দেয়। সমাজে ও পরিবারে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। এগুলো দেখা, মানুষ ও সমাজকে নিরাপদ রাখা সরকারের দায়িত্ব। এতে কারও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক নামকরা সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যক্তি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পরপরই এ নিয়ে মতামত দিয়েছেন। তাদের কণ্ঠ রোধ হয়নি। সে জন্যই তারা মতামত দিতে পারছেন। না হলে মতামত দিতে পারতেন না। ২০০১–২০০৬ সালে সাংবাদিকদের ওপর কীভাবে নির্যাতন হয়েছে, তারা হয়তো তা ভুলে গেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকতা সমাজে সংঘাত বাড়ানোর জন্য নয়। মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা সংবাদপত্রের কাজ হতে পারে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটাই দেখা যাচ্ছে।

সংসদ নেতা বলেন, তার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছে। তারা চান এর সুফল জনগণ ভোগ করুক, কুফল থেকে দূরে থাকুক। সে লক্ষ্য নিয়েই ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস হয়েছে। এখানে শুধু গোষ্ঠী স্বার্থ দেখলে হবে না।

‘সমাজ ও দেশের স্বার্থে’ এই আইনটির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্মার্ট ডিভাইসে যেমন বিশ্বটা হাতের মুঠোয়, তেমনি এর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের অসামাজিক বিষয়গুলোও চলে আসে। এখানে নানা ধরনের গেমস আছে। অনেক সময় ছোট ছেলে-মেয়েরা বা যুবক শ্রেণি এমন বিষয় দেখে, যা সমাজে অশুভ বার্তা বয়ে আনে। সেটা অশ্লীল বা একেবারেই অসামাজিক, কুরুচিপূর্ণ। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী এ ধরনের নানা বিষয় চলে আসে।

“এখানে এমনভাবে অপপ্রচার হয়, যাতে পারিবারিক কোন্দলও সৃষ্টি হয়। নানা রকমের অঘটনও ঘটে। শিশু থেকে যুবক পর্যন্ত এডিকটেড হয়ে পড়ে। মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলে বিপথে চলে যায়, আত্মহত্যা করে, অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা সমাজ ও সংসারের জন্য বিরাট বোঝা হয়ে যায়।”

৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া সংসদের ২২তম অধিবেশন বৃহস্পতিবার শেষ হয়। অধিবেশন সমাপ্তি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করার মধ্য দিয়ে অধিবেশনের ইতি টানেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

অধিবেশনে বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল, সড়ক পরিবহন বিল এবং কওমি সনদকে স্বীকৃতি দিতে ১৮টি বিল পাস হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত