সিলেটটুডে ডেস্ক

১১ জুলাই, ২০১৫ ১৪:৫০

চা শিল্পের উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

এক সময়কার চা রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ চা আমদানিকারক দেশে পরিণত হওয়ার আশঙ্কার প্রেক্ষিতে চা শিল্পের উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে চা উৎপাদকেরা সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারবেন। অনাবাদি ৬ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হবে, ১০ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা অতিরিক্ত উৎপাদন হবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চা শিল্পের উন্নয়নে কৃষি ব্যাংককে ১০০ কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়নযোগ্য একটি তহবিল দেয়া হবে। আর সেটা হলে দেশের ১০৬টি চা বাগানের ৬ হাজার ৪৪০ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষ করা সম্ভব হবে। এতে দেশে অতিরিক্ত ১০ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উত্পাদন সম্ভব হবে।

উৎপাদন বেশি হলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বাকি অংশ রফতানি করা যাবে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৩৭ লাখ ডলারের চা রফতানি হয়েছে। অবশ্য গেল অর্থ বছর (২০১৪-১৫) তা প্রায় ২৪ শতাংশ কমে গেছে।

গত ২১ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় চা শিল্পের উন্নয়নে এ সহায়তা দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। কৃষি ব্যাংক থেকে চা উৎপাদকরা সহজ শর্তে এবং এক অংকের সুদে ঋণ নিতে পারবেন।

জানা যায়, ‘চা বাগানে অব্যবহৃত চাষযোগ্য জমিতে চা চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পে’ অর্থায়নের জন্য চা বোর্ড ও চা সংসদ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ডেপুটি গভর্নর চা শিল্পের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দেন।

চা বোর্ড ও চা সংসদ প্রস্তাব দেয়, ২০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৬টি চা বাগানের আওতায় ৬ হাজার ৪৪০ হেক্টর অনাবাদি জমিতে চা সম্প্র্রসারণ করা হবে। উক্ত জমিতে চা সম্প্রসারণ করলে প্রায় ১০ কোটি ৬০ লাখ বা ১৬ মিলিয়ন কেজি অতিরিক্ত চা উৎপাদন সম্ভব হবে। ঋণের অংশ বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ শতাংশ হারে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে পুনঃঅর্থায়ন করলে বাগান মালিকগণ কম সুদে ঋণ নিয়ে চা চাষ সম্প্রসারণ করবে।

এর প্রেক্ষিতে কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৬৩২তম সভায় এ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন সাপেক্ষে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত হয়। তারা প্রস্তাব করে, কৃষি ব্যাংক বাগানের বিপরীতে চা উন্নয়ন ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ করবে। ব্যাংক সুদের হার ও সার্ভিস চার্জ ৭ বছর গ্রেস পিরিয়ডের জন্য প্রযোজ্য হবে। ১৫টি বার্ষিক কিস্তিতে ঋণ আদায় করা হবে। যে তফসিল অনুযায়ী ঋণ আদায় হবে, সে একই তফসিল অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা হবে।

এর প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায় কৃষি ব্যাংককে চা শিল্পের উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে প্রকল্পটির মেয়াদ হবে ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১০ বছর। ১০টি বার্ষিক কিস্তিতে কৃষি ব্যাংক গ্রাহকের নিকট অর্থ আদায় করে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করবে।

বর্তমানে চা খাতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকই বেশি ভূমিকা রাখছে। ২০১৫ সালে চা উত্পাদনে ঋণ মঞ্জুর হয় ৬০৯ কোটি, বিতরণ হয় ৫৭৬ কোটি ও আদায় হয় ৪৪২ কোটি টাকা। আনাদায়ী থাকে ১৮২ কোটি টাকা। একইবছরে চা উন্নয়নে মঞ্জুরী হয় ২৪ কোটি, বিতরণ হয় ৯ কোটি ও আদায় হয় ৫০ কোটি। অনাদায়ী থাকে ১৮৮ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, দেশে চা চাষ শুরু হয় উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। প্রথম চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম ক্লাবে ১৮৪০ সালে। এরপর সিলেটের মালনীছড়ায় ১৮৫৪ সালে চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে চা উৎপাদনকারী দেশ হিসাবে বাংলাদেশ ১১তম অবস্থানে রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত