সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ জুলাই, ২০১৫ ১৮:৩১

আশরাফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেই স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব নিলেন মোশাররফ

দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে নতুন মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার মতো লোককে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন এতে আমি ভাগ্যবান। যাতে আমি এ দায়িত্ব পালন করতে পারি আপনারা সহযোগিতা করবেন।’

নতুন মন্ত্রণালয়ে তার দায়িত্ব নেওয়ার দিন সাংবাদিকদের উপস্থিতি নিয়ে ‘শঙ্কিত’ মোশাররফ বলেন, একটু তো শঙ্কিত হওয়ারই কথা।

রোববার এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে এসে প্রথমে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেঠক করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এরপর তিনি কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।

এই মন্ত্রণালয়ে তাঁর পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৬৩ সালে আমি এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রথমে খুলনায় জয়েন্ট করি। ৪-৫ মাসের মধ্যে আমি এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার হই। তখন এ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৫ হাজার কিলোমিটার রাস্তা ছিল।’

২০২১ সালে মধ্যম এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে যাওয়ার জন্যে পল্লী উন্নয়নের উপর গুরত্বারোপ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন এজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অপরিসীম। ‘

প্রথম দিনে সংক্ষিপ্তভাবে কর্মকর্তাদের কাছে প্রাথমিক ধারণা নিয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২-৩ সপ্তাহ পর চ্যালেঞ্জগুলো বলতে পারবো।
কথা বলেন সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে দেখা করা বিষয়েও।

তিনি বলেন, ‘উনি (আশরাফ) এখন সমষ্টিগতভাবে আমাদের দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন। উনি আমাদের দলীয় নেতা, উনার অনুমতি নিয়ে যদি আমরা দল করি, উনি আমাদের জেনারেল সেক্রেটারি, উনার অনুমতি নেওয়ার জন্য উনার বাসায় গিয়েছিলাম, যে আপনার অনুমতি প্রার্থনা করছি আমি মন্ত্রণালয়ে জয়েন করব কি না- এটা আমাদের দলীয় ব্যাপার, এটা এ লেবেলেই রাখেন।’

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে মূল দায়িত্ব পালন করলেও অতিরিক্ত হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ও দেখভাল করবেন খন্দকার মোশাররফ।

কোন মন্ত্রণালয়কে বেশি গুরুত্ব দেবেন- জানতে চাইলে মন্ত্রী সাংবাদকিদের বলেন, স্থানীয় সরকার বড় মন্ত্রণালয়, এটা বেশি গুরুত্ব পাবে। তবে মনে করি দুই মন্ত্রণালয়কে সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
‘আমার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই, ১৮ ঘণ্টা কাজ করবো, সমস্যা নাই’, বলে সবার দোয়া চান মন্ত্রী।

এর আগে দপ্তর হারানো সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সৈয়দ আশরাফের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সৈয়দ তোফাজ্জল হোসেন জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নতুন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন রোববার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে বেইলি রোডের বাসায় যান। সাক্ষাতের সময় আগেই ঠিক করা ছিল। উনি ১১টা ২০ পর্যন্ত ছিলেন।

সরকারি ওই বাসা স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসাবেই বরাদ্দ পেয়েছিলেন আশরাফ। বিগত চার দলীয় জোট সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়াও ওই বাসায় ছিলেন।

রোববার সকালে ১৫ মিনিটের ওই সাক্ষাতের পর খন্দকার মোশাররফ সাংবাদিকদের জানান, নতুন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি সাবেক মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন।

আর সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘এক সরকারের সদস্য, এক সংসদের এমপি... আমাদের কোঅপারেশন তো অবশ্যই থাকবে।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে সভানেত্রীর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদধারী সৈয়দ আশরাফকে গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকারের মন্ত্রীর দপ্তর থেকে সরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে, যিনি শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুলের শ্বশুর।

মন্ত্রণালয় ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বৈঠকে অনুপস্থিতি নিয়ে দলের ভেতরে সৈয়দ আশরাফের সমালোচনা ছিল। তবে তাকে আকষ্মিকভাবে দপ্তরছাড়া করার বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের আলোড়ন তুলেছে, যা নিয়ে আলোচনা চলতে গত তিন দিন ধরেই।
এ বিষয়ে একাত্তরের প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ শুধু বলেছেন, ‘তার বাবা বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিয়েছেন। তিনি সেই রক্তের উত্তরসূরি।’

২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর শেখ হাসিনার সরকারে স্থান হয় খন্দকার মোশাররফের। ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায়ও তিনি শুরু থেকে রয়েছেন।

মন্ত্রণালয়ে নিষ্ক্রিয়তার জন্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করার কথা আলোচনায় থাকলেও কার্যত দীর্ঘদিন ধরেই দলের একটা অংশ তাঁকে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে। সৈয়দ আশরাফকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ায় রাজনীতিতে তাঁর থাকা না-থাকা নিয়েও দল এবং বিভিন্ন পর্যায়ে নানা আলোচনা আছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত