সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ অক্টোবর, ২০১৮ ১৬:৫০

কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়া

কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শনিবার বিকালে পুরান ঢাকার কারাগার থেকে শাহবাগের হাসপাতালটিতে নেওয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসনকে।

৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিএসএমএমইউতে দুটি কেবিন দুপুর থেকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। বিকালে খালেদাকে আনার আগে দুপুরে তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র হাসপাতালে আনা হয়।

বেলা সোয়া ৩টার দিকে খালেদাকে নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে পুলিশের সাদা রঙের একটি গাড়ি। এর সামনে-পেছনে ছিল পুলিশ, র‌্যাবের বেশ কয়েকটি গাড়ি। একটি অ্যাম্বুলেন্সও ছিল গাড়িবহরে।

আধা ঘণ্টা পর পৌনে ৪টার দিকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পৌঁছে গাড়িটি; গোলাপি রঙের শাড়ি পরা খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে হুইল চেয়ারে ওঠেন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ছয় তলায়।

কারাগারে থাকা খালেদার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমকেও গাড়ি থেকে নেমে হাসপাতালে উঠতে দেখা যায়। কয়েকটি ব্যাগও এসময় নামানো হয় গাড়ি থেকে।

বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী এসময় উপস্থিত ছিলেন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে; তবে পুলিশের বাধার কারণে তারা দলীয় নেত্রীর কাছে যেতে পারেননি।

পুলিশের বাধায় আটকে বৃষ্টির মধ্যে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে খালেদার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা।
হাসপাতালের ভেতরে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদীন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, নাজিমউদ্দিন আলম, এ কেএম আজিজুল হক, ফরহাদ হালিম ডোনার, শিরিন সুলতানা, সানাউল্লাহ মিয়া, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার, শায়রুল  কবির খান।

খালেদাকে হাসপাতালে আনার আগে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের বাইরে দুপুর থেকে পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়। কারা ফটকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতি বাড়ছিল তখন। র‌্যাবের গাড়িকেও দেখা যায় ঘন ঘন টহল দিতে।

কারাগার সংলগ্ন মাক্কুশা মাজারের সামনে, বকশীবাজার মোড়ে পুলিশ অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। এরপর সোয়া ৩টার দিকে খালেদাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে পুলিশের গাড়িটি।

আট মাস ধরে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে গত এপ্রিল মাসে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এই বিএসএমএমইউতে আনা হয়েছিল। এরপর আর কারাগার থেকে বের হননি তিনি; মাঝে একদিন জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার শুনানিতে হাজির হলেও ওই আদালত বসেছিল কারাগারেরই ভেতরে।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ফেব্রুয়ারিতে রায়ের পর থেকে পরিত্যক্ত ওই কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে দিন কাটছিল খালেদার।

চিকিৎসার জন্য তাকে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার দাবি তুলেছিল বিএনপি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তাকে বিএসএমএমইউ কিংবা সিএমএইচে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিন মাস আগে একবার তাকে একবার বিএসএমএমইউতে নেওয়ার চেষ্টা কারা কর্তৃপক্ষ করলেও তাতে রাজি হননি খালেদা।

এতদিন প্রত্যাখ্যান করে আসা বিএনপির সরে আসার বিষয়ে খালেদার অন্যতম আইনজীবী ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন গত বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, “ম্যাডামের অবস্থা খুবই খারাপ। আদালত দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিয়েছেন।”

চিকিৎসা নিয়ে সরকারের ভাষায় ‘বিএনপির রাজনীতি’র পর  সম্প্রতি খালেদার পক্ষে তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ বোর্ড গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন হয়েছিল।

ওই আবেদনে বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ দ্রুত ঢাকার বিএসএমএমইউতে খালেদাকে ভর্তি এবং তার চিকিৎসায় গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনের নির্দেশ দেয়।

খালেদার অসুস্থতার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেছিলেন, “তার বাঁ হাত ও বাঁ পা প্রায় অবশ হয়ে গেছে। অসহ্য ব্যথা অনুভব করছেন।”

গত ৫ জুন খালেদার ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়েছিল বলেও তাকে দেখে এসে নিজের ধারণার কথা জানিয়েছিলেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক মেডিসিনের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী।

এরপর সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ড জানায়, খালেদা অসুস্থ হলেও তার অবস্থা গুরুতর নয়।  

তাদের ভাষ্য, অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার আগে থেকেই রিউম্যাটয়েডআর্থ্রাইটিস (গেঁটে বাত) রয়েছে। সে কারণে দুই হাতে ও পিঠে ব্যথা অনুভব করেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তার হৃদযন্ত্র, রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় জামিন হলেও অন্য মামলায় খালেদাকে আটকে রাখার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত