সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ জুলাই, ২০১৫ ০২:০৪

মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানের আত্মহত্যা: তদন্তে নেমেছে পুলিশ

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নানের গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার অপমানে মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানের আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে ওই মুক্তিযোদ্ধার লিখে যাওয়া ‘সুইসাইড নোটের’ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএ হান্নানের নিরাপত্তাকর্মী ও ব্যক্তিগত সহকারীদের একটি তালিকাও করছে পুলিশ। সুইসাইড নোটের তথ্য অনুযায়ী ঘটনার দিন কারা সচিবের বাসায় ছিলেন তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ চলছে।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এ আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী নিহতের মামাতো ভাই আমির হোসেনের সঙ্গে রোববার কথা বলেছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। দু-একদিনের মধ্যে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তার মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানের হাতের লেখা দলিল বা অন্য কোনো প্রমাণপত্র দেয়ার কথা রয়েছে। ওই প্রমাণপত্র পাওয়ার পর তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) হস্তলিপি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই মামুন ফরাজী।

এদিকে আইয়ুবের আত্মহত্যার ঘটনায় সঠিক তদন্ত ও বিচারের দাবিতে রোববার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিক্ষোভ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত বাতিল করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। কেউ কেউ সচিবের পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতেও মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানের আত্মহত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানের আত্মহত্যার ঘটনায় যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তা চাতুরি মাত্র। আইয়ুব খানের আত্মহত্যার ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করতে হাইকোর্টের বিচারপতিকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি জানানো হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই মামুন ফরাজী রোববার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আত্মহনের মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই হোটেল কর্ণফুলীর কয়েকজন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সিআইডির প্রতিবেদন পেলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাকি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাটি স্পর্শকাতর বিধায় তদন্তে সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়ার পর আইনগত কিছু ধাপ পার করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই সচিবকে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, তিনি বাদী ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। খুব শিগগিরই তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, ৭ জুলাই রাজধানীর তোপখানা রোডে কর্ণফুলী আবাসিক হোটেলে বিষপানে আত্মহত্যা করেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া শাখা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব আইয়ুব খান।

তিনি চার পৃষ্ঠার একটি সুইসাইড নোট লিখে যান। ঢাকার জেলা প্রশাসক বরাবর লেখা চিঠিতে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইউনিট কমান্ড ঘোষণার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএ হান্নানকে মাছ, শুঁটকি ও টাকা দেয়ার পরও কমিটি ঘোষণা না করায় টাকা ফেরত চাইলে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন।

ওই অপমানের কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেন বলেও সুইসাইড নোটে লিখে যান। পুলিশ সুইসাইড নোটটি উদ্ধার করে। সেটি পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হস্তলিপি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত