সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ অক্টোবর, ২০১৮ ২২:৪৯

২১ আগস্ট মামলার পলাতক আসামিরা কে কোথায়

২০০৪ সালের রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষণা করা হবে বুধবার (১০ অক্টোবর)। আলোচিত এ মামলার মোট আসামি সংখ্যা ৪৯ জন। পলাতক ১৮ আসামির মধ্যে ৮ জনের অবস্থান জানতে পেরেছে পুলিশ।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আবদুল কাহহার আকন্দ বলেন, ‘আমরা ইন্টারপোল ও বিদেশে আমাদের মিশনগুলোর সহায়তায় ইতিমধ্যে ৮ পলাতক আসামির অবস্থান শনাক্ত করেছি এবং অপর ১০ পলাতক আসামির অবস্থান জানার চেষ্টা করছি।’

পলাতকদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ। অন্যরা হলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জেহাদের কর্মী মাওলানা তাজউদ্দিন, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু ওরফে রাতুল, মহিবুল মুত্তাকীন, আনিসুল মুরসালিন, মুফতি শফিউর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. খলিল, মো. ইকবাল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, মুফতি আবদুল হাই, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান (২০০৪ সালে ডিসি, ঢাকা দক্ষিণ) ও পুলিশ সুপার মো. ওবায়দুর রহমান খান (সাবেক ডিসি, ঢাকা পূর্ব)।

সিআইডি ও পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, মাওলানা তাজউদ্দীন ও তার ভাই রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে, সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সৌদি আরবে, সাবেক মেজর জেনারেল এ টি এম আমিন ও লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার দুবাইতে, দুভাই— হরকাতুল জিহাদ নেতা মহিবুল মত্তাকিন ও আনিসুল মোরছালিন রয়েছে ভারতের তিহার জেলে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক বিশেষ সহকারী আবদুল হারিছ চৌধুরী মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে যাতায়াতের মধ্যে রয়েছেন।

তবে তৎকালীন উপপুলিশ কমিশনার খান সায়ীদ হাসান ও ওবায়দুর রহমান খান, হুজি নেতা মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বাদল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মো. ইকবাল, মুফতি শফিউর রহমান (ভৈরব) ও মুফতি আবদুল হাই এবং হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফের অবস্থান এখনো শনাক্ত করা যায়নি।

এই মামলার চার্জশিট দাখিলের পরপরই খান সায়ীদ হাসান ওবায়দুর রহমান খানকে জরুরি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া মাওলানা তাজউদ্দীনকে ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, তারেক রহমানকে একই বছরের ১৩ এপ্রিল, হারিস চৌধুরীকে ৩১ নভেম্বর এবং রাতুল বাবুকে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জরুরি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

ইন্টারপোলের জরুরি নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ মাওলানা তাজউদ্দীনকে গ্রেপ্তার করলেও পরে সে জামিনে মুক্তি পায়। কিন্তু সে এখন দক্ষিণ আফ্রিকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা মোকাবিলা করছেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বাসসকে বলেন, ‘আদালত তাদের (১৮ অভিযুক্ত) পলাতক ঘোষণা করেছেন এবং অপর ৩১ জন জেলে রয়েছেন, তা ছাড়া তিনজনের ফাঁসি হয়েছে।’

অন্য মামলায় যে তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তারা হচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, হরকাতুল জিহাদের প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান ও অপর জঙ্গিনেতা শহিদুল আলম বিপুল।

রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগস্টের ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিচার শেষ হয়।

২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। তাদের মধ্যে ৩ জন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা বাসসকে বলেন, মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার পর পলাতক ১৮ আসামির বিষয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে তাদের হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিসহ সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়। এর মধ্যে যাদের বিষয়ে আইনে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার মতো ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন। এ আইনজীবীরা পলাতক আসামিদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন।
আসামিরা হলেন: মাওলানা তাজউদ্দীন, তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মো.হানিফ, মহিবুল মুত্তাকীন, আনিসুল মুরসালিন, মুফতি শফিকুর রহমান, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু, জাহাঙ্গির আলম বদর, মো. খলিল, মো. ইকবাল, মাওলানা লিটন ও মুফতি আবদুল হাই। ফারহানা রেজা বলেন, পলাতক ১৮ জনের মধ্যে ৪ জন আসামির বিষয়ে ‘রাষ্ট্রনিযুক্ত’ আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তারা হচ্ছেন আসামি সাবেক সেনা কর্মকর্তা এ টি এম আমিন ও সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান খান ও খান সাঈদ হাসান। এ চার আসামির আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা তথা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে এমন কোনো ধারায় অভিযোগ গঠন হয়নি। তাই তারা ‘স্ট্যাট ডিফেন্স বা রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী’ সুবিধা পাননি।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতা-কর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ ৫ শতাধিক লোক আহত হন। নিহত লোকজনের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী আইভি রহমান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত