সিলেটটুডে ডেস্ক

১৪ জুলাই, ২০১৫ ১৪:০৮

আজ শবেকদর

আজ পবিত্র রমজান মাসের ২৬ তারিখ। যেহেতু চন্দ্র বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে রাত আগে আসে এবং দিন পরে আসে, সেহেতু আজকের সূর্যাস্তের পর শুরু হবে মহান ২৭ রমজানের পবিত্র রাত। অধিক সম্ভাবনানুসারে এ রাত পবিত্র শবেকদর বা লাইলাতুল কদর।
 
সূরা দুখানের ৪ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত ইবনে আব্বাস, ইবনে উমরসহ প্রমুখ সাহাবা ও তাবেয়িন মত ব্যক্ত করেছেন, শবেকদরে আগামী এক বছরের সৃষ্টি সংক্রান্ত সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা লওহে মাহফুজের লেখা অনুসারে সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাদের জানানো হয়।
 
আগামী ভাগ্যবছরে কে কে জন্মগ্রহণ করবে, কে কে মৃত্যুবরণ করবে, কাকে কী পরিমাণ রিজিক দেওয়া হবে ইত্যাদি ফেরেশতাদের জানানো হয়। এ ব্যাখ্যা অনুসারে শবেকদরের অর্থ করা যায় ভাগ্যরজনী। আবার সূরা কদরে এ রাতের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে হাজার মাসের চেয়ে বেশি। এ ব্যাখ্যা অনুসারে শবেকদরের অর্থ করা যায় মহিমান্বিত রজনী।
 
শবেকদরের ফজিলত বর্ণনা করার জন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে কদর নামে পূর্ণ একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন। এ সূরায় শবেকদরের চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।

১. শবেকদরে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এ কথার দুটি ব্যাখ্যা হতে পারে ক. নবীজির (সা.) ওপর কোরআন অবতরণের শুভসূচনা হয় শবেকদরে, দীর্ঘ ২৩ বছরে এ কার্যক্রম সমাপ্তিতে পৌছায়; খ. পূর্ণ কোরআন একত্রে লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে অবস্থিত বাইতুল ইয্যাতে অবতীর্ণ হয় শবেকদরে। পরে সেখান থেকে ধীরে ধীরে প্রয়োজন অনুপাতে নবীজির (সা.) ওপর অবতীর্ণ হতে থাকে।

২. শবেকদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেয়। হাজার মাস সমান ৮৩ বছর চার মাস। অনেকের মতে, হাজার মাস দ্বারা নির্দিষ্ট সংখ্যা বোঝানো হয়েছে। আবার অনেকের মতে, নির্দিষ্ট সংখ্যা বোঝানো হয়নি; বরং অতি অধিককে বোঝানোর জন্য রেওয়াজ অনুযায়ী হাজার শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের গড় আয়ু যেহেতু ৬০-৭০ বছর, সেহেতু বছরে এমন একটি রাত লাভ করা আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়। একটি রাত ইবাদত করে ৮৩ বছর চার মাসেরও অধিক সময় একাধারে ইবাদত করার সওয়াব পাওয়া যাবে।

৩. শবেকদরে হজরত জিবরাঈলের (আ.) নেতৃত্বে একদল রহমতের ফেরেশতা সব কল্যাণ নিয়ে দুনিয়ায় অবতরণ করেন। তারা সারা দুনিয়া বিচরণ করেন। যেখানেই কোনো বান্দা-বান্দীকে ইবাদতে দেখেন, মোনাজাতে রত দেখেন সেখানেই তারা মোনাজাতে শরিক হয়ে যান।

৪. শবেকদরের পূর্ণ রাতই একটি শান্তিময় রজনী। এ রাতের করণীয় বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে শবেকদরে জেগে নামাজ পড়বে, তার পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
 
বুখারি: ২০১৪ মুসলিমের এক হাদিসে দেখা যায়, নবীজি (সা.) শবেকদর লাভের আশায় নিজে জাগতেন। পরিবারের সদস্যদের সজাগ করতেন। কোমর বেঁধে ইবাদতে লিপ্ত হতেন। বিভিন্ন হাদিস সামনে রেখে আলেমরা শবেকদরের পাঁচটি কাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

 ১. এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়া;
.
২. নফল নামাজ পড়া। শবেকদরের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ত, সূরা ও নিয়ম নেই। কোরআনের যে কোনো সূরা দিয়ে সাধারণ নফল নামাজের নিয়মেই শবেকদরের নামাজ পড়তে হয়। এক নিয়তে এক সালামে দুই রাকাত করে এ নামাজ পড়তে হবে।

৩. কোরআন তিলাওয়াত ও জিকির-আসকার করা।

৪. দোয়া করা। শবেকদরের নামাজ ও ইবাদত মসজিদেও করা যায়, বাড়িতেও করা যায়, তবে বাড়িতে করাই অধিক উত্তম। মসজিদে কোনো তবারকের আয়োজন না করাই যুক্তিসঙ্গত। কেননা, এতে ইবাদতের পরিবেশ ও মসজিদের গাম্ভীর্যতা নষ্ট হয়। ইবাদতের উদ্দেশ্যে আসা মুসলি্লদের মনোযোগ বিঘি্নত হয়।
 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত