সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০১:০১

কোনো অবস্থাতে নির্বাচন বয়কট নয় : ড. কামাল

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কোনো অবস্থাতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করবে না বলে জানিয়েছেন জোটের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, সরকার যতই ছলচাতুরি করুক এবং প্রহসনের নির্বাচন করার চেষ্টা করুক না কেন— এবার নির্বাচন বয়কট করা হবে না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

শনিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে এ কথা বলেন ড. কামাল হোসেন। এ সময় তিনি আবারও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন।

ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, ক্ষমতায় থেকে সরকার যা কিছু করবে আর জনগণ তা মেনে নেবে— এমনটা ভাবার সুযোগ নেই। সরকার আর পার পাবে না বলেও হুঁশিয়ার করে দেন ড. কামাল হোসেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি এবং ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি মেনে নিতে সরকারকে আহ্বান জানান।

নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ থাকারও  আহ্বান জানান বক্তারা।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দেখুন, দ্রুত আমরা নির্বাচন চাই। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমি একদমই সবাইকে বলব, হাত জোড় করে, যে বয়কট-টয়কট একদম আমরা করব না। একবার করে আমাদের যে খেসারত দিতে হয়েছে। এটা আবার যেন কোনোদিনই না দিতে হয়। ওরা যত রকমের দশ নম্বরি করে আমরা ভোট দেব, আমরা হাজারে হাজারে গিয়ে ভোট দেব।’

অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার চেষ্টা করছে আপনাদের বারবার উসকানি দিয়ে আবার ভিন্ন খাতে যাওয়ার জন্য এবং তারা যেটা চায় বিএনপিকে সন্ত্রাসের দিকে ঠেলে দিয়ে, বিএনপিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে তারা বিএনপিকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে বিএনপিকে দূরে সরিয়ে রাখবে। শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা যেন আমাদের দাবিগুলো আদায় করি।’  

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ক্ষমতা নয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্যই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আন্দোলন করছে। ওইখানেই নিহিত আছে গণতন্ত্রের স্বাধীনতা। বিচার বিভাগের যদি কোনো স্বাধীনতা না থাকে তাহলে কোথাও কোনো স্বাধীনতা থাকবে না।

ঐক্যফ্রন্টের এ মুখপাত্র বলেন, সরকার ইচ্ছেমতো বিচার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। আমি বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার জন্য আপনাদের আন্দোলন করার জন্য আহ্বান জানাব। ওইখানেই নিহিত আছে গণতন্ত্রের স্বাধীনতা। বিচার বিভাগের যদি কোনো স্বাধীনতা না থাকে তাহলে কোথাও কোনো স্বাধীনতা থাকবে না।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, এই নির্বাচনে যদি গণতন্ত্রকামী মানুষ জয়ী হতে না পারে চিরতরে বিচার ব্যবস্থা চলে যাবে একটা দলের হাতে। গণতন্ত্র চলে যাবে একটা দলের হাতে সেই কথাটি আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, এই মানুষটি সত্য কথা বলেছেন এবং তিনি রায়ও দিয়েছেন সত্যভাবে। সেজন্য তাঁকে এই সরকার দেশ থেকে জবরদস্তি বের করে দিয়েছে। তাঁকে দেশত্যাগ করতে বলেছে।

এর আগে সমাবেশে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ভোটের (নির্বাচনে) মাঠে থাকার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নির্দেশনা চেয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। একই সঙ্গে আসন্ন নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হিসেবে আইনজীবীদের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

আইনজীবীদের মহাসমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এসব দাবি জানান। দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল হালিমের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জেলা নেতাদের বক্তৃতা শুরু হয়।

জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আয়োজনে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) সভাপতি ও আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর, মীর নাসির, গিয়াস উদ্দিন, ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, তৈমূর আলম খন্দকার, সানাউল্লাহ মিয়া, সৈয়দ মুয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কামরুল ইসলাম সজল, নাসরিন আক্তার প্রমুখ। এ ছাড়া সমাবেশে গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিএনপিপন্থী আইনজীবীরাও বক্তব্য দেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত