সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২২:৩২

সিইসির পদত্যাগ চায় ঐক্যফ্রন্ট

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার অবিলম্বে পদত্যাগ চেয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। অবিলম্বে একজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্যও ফ্রন্টের নেতারা রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি জানান।

মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বৈঠক শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।

বৈঠক শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা কোনো নির্বাচন হচ্ছে না, রক্তের হোলি খেলা হচ্ছে। সব জায়গায় আমাদের প্রার্থীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। মহিলারাও বাদ যাচ্ছে না।

মির্জা ফখরুল আজ (মঙ্গলবার) হামলায় আহত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে দেখিয়ে বলেন, এটি হলো ২০১৮ সালের নির্বাচন। রক্তাক্ত সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

ফখরুল বলেন, আজ গণফোরামের সুব্রত চৌধুরীও আক্রান্ত হয়েছেন। কাউকে বাদ দিচ্ছে না। দেখে মনে হচ্ছে, এটা কোনো নির্বাচন নয়।

বিএনপির এই মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ, অকার্যকর- এটা আজ জাতির সামনে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা এই মুহূর্তে সিইসির পদত্যাগ চাই। এখনই চাই তিনি পদত্যাগ করুন।

এরপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিবৃতি পড়ে শোনান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ দুপুর ১২টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আমরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারগণ ও সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করে সারা দেশে বিরোধীদলীয় প্রার্থীগণ এবং তাদের সমর্থকদের সাথে সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশের অন্যায়, অসাংবিধানিক ও মারমুখী আচরণ, অনেক প্রার্থী এবং তাদের কর্মীদের দৈহিকভাবে আহত ও নিগৃহীত করা, কয়েকজন প্রার্থীসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রার্থী এবং প্রার্থীর সহযোগীদের আত্মীয়স্বজনের সাথে দুর্ব্যবহার ও গ্রেপ্তার করা, বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের স্বাভাবিক নির্বাচনী  প্রচারণায় বাধা দেওয়ার বিভিন্ন অভিযোগ তথ্য প্রমাণসহ উত্থাপন করা হয়। গতকাল রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা গণফোরাম সভাপতি দেলোয়ার হোসেন চুন্নুকে বাড়ি থেকে পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যায়।

আলোচনায় ড. কামাল হোসেনসহ অন্যান্য জাতীয় নেতারা সরকারের প্রশাসন ও পুলিশের ক্রমাগত অসহযোগিতা এবং বহু ক্ষেত্রে আক্রমণকারী সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আক্রমণের শিকার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে দিন, তারিখ, স্থান উল্লেখ করে অভিযোগ জানান।

তারা নির্বাচনের সময়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনকে এসব ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের এবং ইতিমধ্যেই যেসব সরকারি ও পুলিশ কর্মকর্তা-দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করেছে তাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার কিংবা অবিলম্বে বদলি করার দাবি জানান।

কিন্তু অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে আমাদের বলতে হচ্ছে যে, ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের যুক্তিগ্রাহ্য ও প্রমাণ সিদ্ধ বিষয়গুলোকে অগ্রাহ্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ক্ষমতাসীন দলের নেতার ভাষায় অভিযোগগুলোকে অস্বীকার করে পক্ষপাত দুষ্ট ও অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দিলে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা শুধু ক্ষুব্ধ নন— বিস্মিত ও হতাশও হন।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান-এমন অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিতে পারে তা অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। এই ঘটনায় স্পষ্টতই প্রমাণিত হয়েছে যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাকে নিয়োগদানকারী ক্ষমতাসীন সরকারের অতি বাধ্যগত একজন কর্মচারীর চেয়ে আর বেশি কিছু নন। তাঁর নিকট থেকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন তো দূরের কথা নিরপেক্ষ আচরণ পাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। এমতাবস্থায় আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে অবিলম্বে একজন মেরুদণ্ডহীন পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তির নেতৃত্ব থেকে নির্বাচন কমিশনকে মুক্ত করা অনিবার্য প্রয়োজন বলে মনে করি। আমরা অবিলম্বে তাঁর পদত্যাগ দাবি করছি এবং যথার্থই একজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট দাবি জানাচ্ছি।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘আজও সারাদিনে সারা দেশে অসংখ্য প্রার্থী এবং তাদের কর্মীদের ওপর সরকারি দল এবং পুলিশের হামলা অব্যাহত রয়েছে। আজ সন্ধ্যায় ঢাকা-৩ নির্বাচনী এলাকায় চুনকুটিয়ায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গুরুতর আহত করা হয়েছে। তার সাথে থাকা অন্তত ৩০ জন কর্মী আহত হয়েছেন এবং তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে ঢাকার সিদ্দিক বাজার এলাকায় প্রচার মিছিল চালানোর সময় পুলিশের সহযোগিতায় সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে। এখানে অ্যাডভোকেট রাসেলসহ তার চারজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ১০-১২ জন কর্মী আহত হয়েছেন।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত